বিশ্বে মোট কত পিঁপড়ে আছে? এই প্রথম নির্দিষ্ট করে জানালেন বিজ্ঞানীরা

Ant Population: বিশ্বে ২০ কোয়াড্রিলিয়ন বা ২০,০০০ ট্রিলিয়ন পিঁপড়ে রয়েছে। মানে ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০!

মাথায় কত চুল আছে? রাস্তায় কত ধুলো? এক কেজি চালে কত দানা ভাত হয়? সংখ্যা দিয়ে নাকানিচোবানি খাওয়াতে হলে এসব প্রশ্ন যথেষ্ট। ধরা যাক, জিজ্ঞাসা করা হলো, বিশ্বে কত পাখি রয়েছে? উত্তর দেওয়া সময় সাপেক্ষ হলেও অবাস্তব নয় মোটেও। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় কত পিঁপড়ে আছে পৃথিবীতে? এই প্রশ্নের উত্তর যে আদৌ হতে পারে এমনটাই কেউ কি ভাবেন? ভাবেন, আর ভেবে বেরও করেন। সব হিসেব মিলিয়ে পৃথিবীতে পিঁপড়ের সংখ্যা যা দাঁড়ায় তাতে শূন্য গুনতে গুনতে বয়স বেড়ে যায়! একটি নতুন গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে যা পিঁপড়ে আছে তা বিলিয়ন, ট্রিলিয়নের মাপ ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে কোয়াড্রিলিয়ন! বিশ্বে ২০ কোয়াড্রিলিয়ন বা ২০,০০০ ট্রিলিয়ন পিঁপড়ে রয়েছে। মানে ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০! ২০-র পিঠে ১৫ টা শূন্য! এই এত্ত পিঁপড়ের ওজন সমস্ত বন্য পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়েও বেশি!

২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল আকাডেমি অব সায়েন্সেসের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে গত হিসেবের তুলনায় ২ থেকে ২০ গুণ বেশি বেড়েছে পিঁপড়ের জনসংখ্যা। এই ২০-র পিঠে ১৫ টা শূন্য হিসেবের পিঁপড়ের মোট জীবভর প্রায় ১২ মিলিয়ন টন। অন্যদিকে, বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখির সম্মিলিত জৈবভর যথাক্রমে দুই মিলিয়ন টন এবং সাত মিলিয়ন টন। বিশ্বের সমস্ত পিঁপড়ের সম্মিলিত জীবভর মানুষের জীবভরের ২০ শতাংশ। বায়োমাস বা জীবভর হচ্ছে সমস্ত প্রাণীর কার্বনের মোট ওজন।

হংকং ইউনিভার্সিটি এবং জার্মানির জুলিয়াস ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ওয়ার্জবার্গের গবেষকরা পিঁপড়ে সম্পর্কিত অসংখ্য গবেষণা এবং পরীক্ষা করেছেন। পিঁপড়ে অধ্যুষিত সমস্ত মহাদেশ এবং উল্লেখযোগ্য বায়োমে পিঁপড়ের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য তারা তথ্য সংগ্রহ করে সংকলন করেছিলেন।

“আমাদের অনুমান অনুসারে, বিশ্বব্যাপী পিঁপড়ের জনসংখ্যা ২০ কোয়াড্রিলিয়ন। মানে ২০-র পিঠে ১৫ টা শূন্য! বিষয়টা উপলব্ধি করা এবং ভাবাই বেশ কঠিন," বলেছেন গবেষণার প্রধান লেখক প্যাট্রিক শুলথাইস।

আরও পড়ুন- বিষাক্ত লাল পিঁপড়ে ছেয়ে ফেলেছে আস্ত এই গ্রাম! প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ

পিঁপড়ে জীবজগতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি। পিঁপড়েদের উচ্চমানের সামাজিক সংগঠনের কারণে এই গ্রহের প্রায় সমস্ত বাস্তুতন্ত্র এবং ভৌগলিক এলাকায় পিঁপড়েরা উপনিবেশ গড়তে পারে। পিঁপড়েরা বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গেউ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে— যার মধ্যে রয়েছে, গাছপালা, ছত্রাক, অন্যান্য পোকামাকড় এবং এমনকী বড় মেরুদণ্ডী প্রাণীও। পিঁপড়েদের সংরক্ষণ করতে হলে বিশ্বে পিঁপড়ের জনসংখ্যা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিচক্রকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে পিঁপড়ে। উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে দেওয়াতেও বড় ভূমিকা পালন করে পিঁপড়ে।

সারা বিশ্বে অসমভাবে ছড়িয়ে রয়েছে পিঁপড়ে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলিতে বেশি পিঁপড়ের দেখা মেলে। বিশেষ করে বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পিঁপড়ে থাকে এবং আশ্চর্যজনকভাবেই শুষ্ক অঞ্চলেও কিন্তু পিঁপড়ের দেখা মেলে। তবে মানুষের তৈরি আবাসস্থলে সাধারণত বিপুল পরিমাণে পিঁপড়ে থাকে না। পিঁপড়ের সংখ্যা কমে গেলে পচন এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মতো কাজগুলি প্রাকৃতিকভাবে প্রভাবিত হয়৷

গবেষকদের এই বিশ্লেষণটিতে বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের অবহেলা আরও একবার প্রকট হয়ে উঠেছে। যে কারণে ভারসাম্যের দিক থেকে ক্রমেই নড়বড়ে হয়ে পড়ছে পৃথিবী। পিঁপড়ের বন্টন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন কিন্তু ঘটেছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই, গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। ফায়ার অ্যান্টস নামের পিঁপড়ে আবার এমন এক আক্রমণাত্মক প্রজাতি যা বিধ্বংসী, এরা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে। তাই পিঁপড়ের সংখ্যায় শূন্য বাড়লেই যে পৃথিবীর মঙ্গল এমন নয়, আবার সংখ্যা কমে গেলেও মোটেও তা এই গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, এই গ্রহের ভালো থাকার সমান দায়িত্ব রয়েছে পিঁপড়ের উপরেও।

More Articles