আসন্ন নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে মাত্র ৫ টি আসনেই আটকে থাকবে বিজেপি : সুমন ভট্টাচার্য

2024 Lok Sabha Election BJP Vote in Bengal :দক্ষিণবঙ্গে নতুন করে কিছু না ঘটলে আর বিজেপির জয়নগর-মথুরাপুর জয়ের দাবিকে না ধরলে বিজেপির হাতে আছে ৫ টা আসন।

এখনই ভোট হলে কী ফল হবে, আর দু' তিন মাস পরে কী হবে তা বেশ কয়েকটি সমীকরণের উপর নির্ভর করছে। দক্ষিণবঙ্গে লোকসভার ৩৪ টা আসন আছে, উত্তরবঙ্গে ৮ টা। উত্তরবঙ্গের ৮ টার মধ্যে ৭ টাই এখন বিজেপির হাতে। দক্ষিণবঙ্গের দিকে তাকানো যাক। এই ৩৪ টি আসনের মধ্যে ২০১৯-এর নির্বাচনের তুলনায় কিন্তু বেশ বদলাবদলি হয়েছে। দুটো আসন ইতিমধ্যেই বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। আসানসোল এবং ব্যারাকপুর। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করে তৃণমূলে চলে গেছেন। আর ব্যারাকপুরের সাংসদ পদত্যাগ না করেই তৃণমূলে চলে গেছেন। অন্যদিকে তৃণমুলের হাত থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক শুভেন্দুর পরিবারের হাতে চলে যাবেই। এখানে বিজেপিই আসবে।

বিষ্ণুপুর আসনটি বিজেপির জন্য ভালো। সৌমিত্র খাঁ সংগঠনটা বোঝেন, বিজেপির হয়ে জিতেছেন, নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে এই আসনে বিজেপি তুলনামূলক নিশ্চিন্ত। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া আর পুরুলিয়ায় জাতের লড়াইয়ে জিতেছিল বিজেপি কিন্তু সেখানেও এবার কঠিন লড়াই। ঝাড়গ্রামের মধ্যে চারটি বিধানসভা আসন কিন্তু সমান সমান ভাগ হয়ে গেছে তৃণমূল ও বিজেপির। পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতো ছিলেন চতুর্থ স্থানে। এবার নির্বাচনে কংগ্রেস আর বাম জোট হলে এক ফল হবে, কংগ্রেস আর তৃণমূল জোট হলে আরেক সমস্যায় পড়বে বিজেপি। অন্যদিকে মতুয়া ভোট টানতে শান্তনু ঠাকুর ব্যর্থ হবে যদি না সিএএ টোপটা কার্যকরী হয়! রানাঘাটেও অবস্থা ভালো না। তবে জয়নগর আর মথুরাপুর আসন নিয়ে বিজেপি আশাবাদী। অন্যদিকে, হুগলি লকেট চ্যাটার্জির জন্য খুব নিরাপদ নয়। আরামবাগ আবার তৃণমূলের জন্য নিরাপদ নয়।

আরও পড়ুন- ২০২৪-এও কি বামের ভোট রামেই যাবে : বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়

তাহলে হিসেব অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে নতুন করে কিছু না ঘটলে আর বিজেপির জয়নগর-মথুরাপুর জয়ের দাবিকে না ধরলে বিজেপির হাতে আছে ৫ টা আসন। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই আসন, আরামবাগ এবং সিএএ হলে বনগাঁ, আর বিষ্ণুপুর। আসানসোলে বিজেপি এমনিই কোণঠাসা। বর্ধমান-দুর্গাপুরে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ারও জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই।

উত্তরবঙ্গে বিজেপির মূল ইস্যু ছিল জাতপাতের ভোট। জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদে বাম আর কংগ্রেস ও তৃণমূলের লড়াই হবে। বিজেপির ঠাঁই নেই। বহরমপুরে একটা বিধানসভা বিজেপি জিতেছিল। এখানে বিজেপি একটা সমস্যা হতে চলেছে। তবে অধীর এই আসন ধরে রাখতে পারবেন যদি জোটটা বাম বা তৃণমূলের সঙ্গে হয়। মালদহের দুই আসনেই ভোট কাটাকাটির উপর সবটা নির্ভর করছে। মৌসম বেনজির নূর বনাম ঈশা খানের লড়াইয়ে গতবার কংগ্রেসের ঐতিহ্যগত ভোট ভাগ হয়ে যায়। রায়গঞ্জ তো বরাবর কংগ্রেসেরই আসন ছিল কিন্তু এখানে বিজেপি জেতে দুটো কারণে। বিরোধী ভোট তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেছিল আর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের নেতিবাচক ফল সমস্ত ভোটকেই বিজেপির দিকে নিয়ে যায়। দাড়িভিটের ইস্যু বিজেপির হয়ে হিন্দু ভোটকে জোটবদ্ধ করে। এবার রায়গঞ্জে রাজবংশী তাস খেললেও সেখানে বড়সড় কিছু করার নেই বিজেপির। দেবশ্রী চৌধুরীকে রায়গঞ্জে শেষ কবে দেখা গেছে তাও কেউ জানে না।

আরও পড়ুন- ‘‘INDIA জোট ক্ষমতায় এলেই… ’’ যে যে প্রতিশ্রুতি দিলেন রাহুল

বালুরঘাট কিন্তু সুকান্ত মজুমদারের জন্য কঠিন আসন। আলিপুরদুয়ার আর কোচবিহার জন বার্লা ও নিশিথ প্রামাণিকের আসন। এখানে বিজেপি জিতবে বলেই আশা করা যায় কিন্তু জলপাইগুড়ি আর দার্জিলিং বিজেপির জন্য নিরাপদ নয়। জলপাইগুড়িতে গতবার বামের ভোট পুরো রামে গেছিল। এবার রাহুলের যাত্রার প্রভাব পড়েছে। কংগ্রেস ও বামের একটা জোট হলে এখানে বিজেপি ভুগবে। দার্জিলিংয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে নিয়ে এলেও যদি অজয় এডওয়ার্ড প্রার্থী হন তাহলে তৃণমূল বিরোধী ভোট, বিনয় তামাংয়ের ভোট কংগ্রেস সিপিএম জোটের কাছে যেতে পারে।

তাহলে হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ভোট হলে দক্ষিণবঙ্গে মাত্র ৫ আর উত্তরবঙ্গে ৩, মোটামুটি ৮ টা আসন বিজেপির হাতে আছে। এরপর ইডি-সিবিআই বা অন্য অস্ত্র কীভাবে বিজেপি ব্যবহার করছে তা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি ইস্যুতে বিরোধী নেতাদের তুলে নিয়ে সেখানে নিজেদের প্রার্থীদের আসন কতটা মজবুত করতে পারছে বিজেপি তার উপর নির্ভর করছে নির্বাচনের ফল।

More Articles