এক্সিট পোলই শেষ কথা নয়! আজ পর্যন্ত কতবার ফ্লপ হয়েছে বুথফেরত সমীক্ষা?

Lok Sabha Election Results 2024: ২০১৪ লোকসভা ভোটে বুথফেরত সমীক্ষার তথ্য ছিল, তৃণমূল পাবে ২৪টি এবং বামেরা পাবে ১২টি আসন। দেখা যায়, তৃণমূল পায় ৩৪ টি এবং বামেরা পায় ২টি মাত্র আসন।

দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ। ৪ জুন ভোটগণনা হলেই দীর্ঘ দু' মাস ধরে চলা এই প্রক্রিয়া সাঙ্গ হয়। কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কোন দল কত আসন জিতবে, বিজেপিই মসনদ ধরে রাখবে কিনা তা নিশ্চিত করে কোনওভাবেই গণনার আগেই বলা যায় না। তবে ফল ঘোষণার আগেই সংবাদমাধ্যমগুলি বুথফেরত সমীক্ষাকে অত্যন্ত উত্তেজনার সঙ্গে সম্প্রচার করছে। বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলেছে এর আগে নানা সময়ে, আবার অনেকক্ষেত্রেই সমীক্ষার ফল একেবারে ভুলও প্রমাণিত হয়েছে। অতীতের তথ্য বলছে, সব বুথফেরত সমীক্ষা সঠিক অনুমান করতে পারে তা নয়। দেখা গেছে, বুথফেরত সমীক্ষা আর বাস্তবের ফলে আকাশ-জমিন ফারাক। এবিপি নিউজ-সি ভোটারের সমীক্ষা বলছে এনডিএ পেতে পারে ৩৫৩-৩৮৩ আসন এবং ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৫২-১৮২টি আসন। নিউজ ২৪-টুজেজ চাণক্যের মতে, এনডিএ পেতে পারে ৪০০টি, ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১০৭টি আসন। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার ইঙ্গিত, এনডিএ ৩৬১-৪০১ এবং ইন্ডিয়া জোট ১৩১-১১৬ আসন জিততে পারে। যদিও বুথফেরত সমীক্ষার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই নেই। তাই এই সমীক্ষাগুলিতে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। বুথফেরত সমীক্ষার ফল নিয়ে গোটা দেশ যেভাবে আলোড়িত হয়েছে, তাতে অতীতের বুথফেরত সমীক্ষার ফল কতবার ফেল করেছে তা জানাও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন- ডবল ধামাকা! শুধু ওয়ানাড় নয়, রায়বরেলিতেও জিততে চলেছেন রাহুল গান্ধি?

অতীতের তথ্য ঘেঁটে দেখলে বোঝা যায়, এক্সিট পোল না মেলার উদাহরণ বিস্তর। ২০০৪ সালে বুথফেরত একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, অটলবিহারী বাজপেয়ী বিপুল আসনে জয় পাবেন। ভোটগণনা হতেই দেখা গেল জয় পেয়েছে কংগ্রেস। সে বছর বিজেপিকে হারিয়ে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস। একইভাবে বিহারের শেষ বিধানসভার ফলও মেলেনি। বিজেপির জয় এবং লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধনের ইঙ্গিত মেলেনি। ২০১৬-তে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম জোট হয়েছিল। সব সমীক্ষার ফল ছিল, কংগ্রেস-সিপিএম জোট রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাবে। ভোটগণনার পর দেখা গেল, সমীক্ষার ফলের সঙ্গে রয়েছে বিস্তর ফারাক। উত্তরপ্রদেশের ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বুথফেরত সমীক্ষার ফল বলছিল বিজেপি পাবে ১৭০টি আসন। ওই রাজ্যে সে বছর ৩১২টি আসনে জয় পেয়ে সরকার গড়ে ছিল বিজেপি। ২০১৪ লোকসভা ভোটে বুথফেরত সমীক্ষার তথ্য ছিল, তৃণমূল পাবে ২৪টি এবং বামেরা পাবে ১২টি আসন। দেখা যায়, তৃণমূল পায় ৩৪ টি এবং বামেরা পায় ২টি মাত্র আসন। ২০১৫ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনেও বুথফেরত সমীক্ষার তথ্য মেলেনি। এই ফারাকগুলো সামান্য নয়। তাই বিরোধী দলনেতারা যখন বুথফেরত সমীক্ষার ফল নিয়ে বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করছেন, সে কথা উড়িয়েও দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন- রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বুথফেরত সমীক্ষা! ভারতে বুথফেরত সমীক্ষার ইতিহাস কী?

বুথফেরত সমীক্ষাগুলি যেভাবে বিজেপির আসন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং সংবাদমাধ্যমগুলি তা যেভাবে প্রচার করছে তা বিভ্রান্তিকর বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সমীক্ষা অনুযায়ী, ইন্ডিয়া জোটের ভোটের হার কম। অন্যদিকে, কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া জনপ্রিয়তা দেখে পর্যবেক্ষকরা মনে করছিলেন, একটা চোরাস্রোত মোদির বিরুদ্ধে কাজ করছে। দলের সমাজমাধ্যম বিভাগের প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনাত দাবি করেছেন, ১৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কংগ্রেস ভিডিওতে ভিউ এসেছে ৬১ কোটি ৩০ লক্ষ। যেখানে বিজেপির সংখ্যা ১৫ কোটি। ইনস্টাগ্রামে দলের গড় লাইক ১ লক্ষ ২১ হাজার, অন্যদিকে বিজেপির ছিল ২৬ হাজার ৯৪৫। কংগ্রেসের প্রতিদিনের ফলোয়ার ৩৩ হাজার বৃদ্ধি পাচ্ছিল, বিজেপির শুধুমাত্র ৫ হাজার ৩০০ বাড়ছিল। এক্স-এ কংগ্রেসের গড় লাইক পড়েছে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০। সেখানে বিজেপির গড় লাইক পড়েছে মাত্র ২৬০ থেকে ৩০০। ফেসবুকে কংগ্রেসের গড় লাইক ১,২০০ থেকে ১,৫০০। যা বিজেপির ক্ষেত্রে ছিল ১৫০ থেকে ২৫০। মনে করা হচ্ছিল মোদির বিরুদ্ধে এই চোরাস্রোতের কারণ, ধর্মীয় মেরুকরণ। যে ভেদাভেদ করে তিনি ভোট প্রচার করেছিলেন এটা তারই ফলাফল। অন্যদিকে, দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস শুরু থেকে পাঁচটি ন্যায়কে সামনে রাখে। মহিলা, বেকার যুবক, কৃষক, শ্রমিক, অনগ্রসরদের উন্নয়নই ছিল কংগ্রেসের প্রচারের লক্ষ্য। বিরোধীরা এও দাবি করছে, জনগণের মন আগে থেকেই মোদিঝড় তৈরি করে রাখা হচ্ছে, যাতে ইচ্ছে মতো ভোট বাড়ানো যায়।

উল্লেখ্য, রবীশ কুমার তাঁর ইউটিউব ভিডিওতে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন, বুথফেরত সমীক্ষার মেথেডলজিতেই অর্থাৎ পদ্ধতিতেই মূল গলদ থাকে। তিনি এও বলেছেন, সমীক্ষা মিলে যেতেই পারে কিন্তু তাতেও সমীক্ষক সংস্থার গবেষণাকে বিশ্বাস করা যায় না, যতক্ষণ না তার মেথেডলজি ঠিক হয়। তবে মূল প্রশ্ন এখন একটাই। সমীক্ষা সত্যিই কি মিলবে?

More Articles