না জেনেই অতিরিক্ত জল খাচ্ছেন! ব্রুস লির অকাল মৃত্যু নিয়ে উঠে এল ভয়াবহ তথ্য
Water Drinking Amount: অতিরিক্ত জল পানের কারণে কিডনিতে বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে একটা সময়ের পর কিডনির জল নিষ্কাশনের ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।
গ্রীষ্ম কিংবা শীত সব ঋতুতেই শরীর সুস্থ রাখতে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রতিদিন কতটা জল খাওয়া উচিত তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অনেকেই বলেন দিনে ৮ গ্লাস জল খাওয়া জরুরি আবার কেউ কেউ বলে প্রতিদিন ২ লিটার জলই যথেষ্ট। তবে আমাদের প্রত্যেকের শরীরে জলের চাহিদা কিন্তু সমান নয়। কম জল পানের ফলে শরীর যেমন ডিহাইড্রেট হয়ে যেতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত জল পানেও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, অত্যধিক জলপানের ফলে একজন ব্যক্তির অকালে মৃত্যুও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে সঠিক পরিমাণ জল খান।
কিংবদন্তি মার্শাল আর্ট শিল্পী ও অভিনেতা ব্রুস লির মৃত্যুর ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মৃত্যুর আসল কারণ সেরিব্রাল এডিমা বা তার আগে খাওয়া পেনকিলার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়, বরং অতিরিক্ত জল খাওয়ার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত জল পান ও তা নিষ্কাশনে কিডনির অক্ষমতার কারণে মাত্র ৩২ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু হয়েছে ব্রুস লির।
আরও পড়ুন- মিনারেল ওয়াটার নয়, বাজার ধরছে ‘কালো জল’! স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী এই পানীয়?
নতুন গবেষণায় কী বলা হয়েছে?
স্পেনের কিডনি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণা পত্রটি ক্লিনিক্যাল কিডনি জার্নালের ডিসেম্বর ২০২২ সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক এই গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই শরীরের ওজন ধরে রাখতে খাবার না খেয়ে জল বা হালকা তরলে পেট ভরাচ্ছেন। এই অভ্যাস অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে মার্শাল আর্ট তারকা ব্রুস লির ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত জল পানের কারণে কিডনিতে বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে একটা সময়ের পর কিডনির জল নিষ্কাশনের ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। কিডনি অক্ষম হয়ে পড়ে শরীরে সমস্যা বাড়তে শুরু করে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ওভারহাইড্রেশন। এই গবেষণা রিপোর্টই বলছে যে, কিংবদন্তি অভিনেতা ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ আসলে ওভারহাইড্রেশন। গবেষকরা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, “ব্রুস লির বিখ্যাত একটি উক্তি হল জল আমার বন্ধু। কিন্তু এই বন্ধুই যে ধীরে ধীরে তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তারকা।”
এছাড়া জার্নাল অব স্টাডিজের নতুন একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সকলের জন্যই প্রতিদিন আট গ্লাস বা দু'লিটার জল খাওয়া সঠিক নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এই পরিমাণ জল অতিরিক্ত বলে জানা গেছে গবেষণা তথ্য থেকে। তেইশটি দেশের ৮ থেকে ৯৬ বছরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে এই পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে জলে উপস্থিত হাইড্রোজেন অণু শরীরে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডয়টোরিয়ামে রূপান্তরিত হয়। এটি অত্যন্ত স্থায়ী আইসোটোপ এবং শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক নয়। পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে উষ্ণ, আর্দ্র এবং পার্বত্য অঞ্চলে বসবাকারী মানুষের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন থেকে ডয়টোরিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার হার অনেক বেশি তাই তাঁদের আরও বেশি করে জলপান করা উচিত।
আরও পড়ুন- সমুদ্রের জলে হু হু করে বাড়ছে অ্যাসিডের মাত্রা! কোন বিপদ অপেক্ষায়
অতিরিক্ত জল পান করছেন কিনা তা বুঝবেন কীভাবে?
চিকিৎসকদের মতে, মূত্রের রঙ দেখে সহজেই বোঝা যায় শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা। মূত্রত্যাগের সময় যদি তার রঙ হালকা হলুদ বর্ণের হয় তবে শরীরে যথেষ্ট জল রয়েছে। তবে মূত্রের রং গাঢ় হলুদের অর্থ হল শরীরে জলের ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিচারেও যদি একজন ব্যক্তি ৫০ থেকে ৬০ মিলিলিটার জল পান করেন তাও শরীরের পক্ষে অতিরিক্ত। তবে প্রতিনিয়ত ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মধ্যে থাকলে এই পরিমাণ জল গ্রহণ করা যেতে পারে, তাও কী ধরনের ব্যায়াম করা হয়েছে সেকথা মাথায় রাখা জরুরি। আবার ডায়েবেটিস বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলেও কিডনির জল নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমাদের শরীরে সোডিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে। অতিরিক্ত জল পানের ফলে কিন্তু দেহে সোডিয়ামের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে পারে, যার ফলাফল হতে পারে মারাত্মক।
ওভারহাইড্রেশনের ফলে একজন ব্যক্তির বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এছাড়াও মাথা ব্যাথা বা বিভ্রান্তি হতে পারে কারণ শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপোনাট্রেমিয়া বলে। এতেই সেরিব্রাল এডিমা দেখা দিতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্ট বলছে এভাবেই নাকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন তারকা ব্রুস লি।
প্রতিদিন কতটা জল খাবেন?
আপনার শরীরে কতটা জলের প্রয়োজন তা নিজেই বুঝতে পারবেন সহজে। প্রথমে নিজের ওজন মেপে দেখে নিন। এরপর শরীরের ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যাবে সেই পরিমাণ জলই আপনার পক্ষে পর্যাপ্ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ধরুন আপনার ওজন ৬০ কেজি। তাহলে ৬০ কে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ২। এর অর্থ হল, শরীর সুস্থ রাখতে আপনাকে প্রতিদিন ২ লিটার জল পান করতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, এই উপায়ে মেপে জল খেলে আপনি একবারেই সুস্থ থাকবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা কম জল করা দুইই শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক।