ক্রিকেট-ফুটবল নয়, ব্যাডমিন্টনে বিশ্বমঞ্চের রাজা ভারত, চাণক্য গোপীচাঁদ

১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে প্রথম অ্যাকাডেমি গঠন করার সময় ঠিক যেরকমভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তিনি, সেরকমই এখনও।

হায়দরাবাদের গাছিবোলিতে অবস্থিত গোপীচাঁদ ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে যদি আপনি কোনওদিন প্রবেশ করেন, তাহলে আপনি সেখানে দেখতে পাবেন একটা অদৃশ্য নোটিস। সেখানে ঢুকেই বুঝতে পারবেন, কেউ যেন আপনার কানে বলে যাচ্ছে, কোনওকিছুই অসম্ভব নয়। অনুভব করতে পারবেন, এই জায়গাটার মধ্যে এমন কিছু আছে, যা পাল্টে দিতে পারে একটা দেশের প্রতি অন্য দেশের নজর। চিন, জাপান এবং কোরিয়ার দাপটকে সরিয়ে ভারত যে এখন বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে রাজ করছে, তার সমস্ত শক্তির উৎসস্থল হায়দরাবাদের ওই গোপীচাঁদ অ্যাকাডেমি। আর এই গোপীচাঁদ অ্যাকাডেমির পিছনে যে ব্যক্তিত্বের হাত আছে, তিনি আর কেউ নন, ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় ব্যাডমিন্টন কোচ পুলেল্লা গোপীচাঁদ। ২০০৮ সালে এই অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠার পর ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সমৃদ্ধ হয়েছে সাইনা নেহওয়াল, পি.ভি সিন্ধু, সাই প্রণীত, সমীর ভার্মার মতো বিশ্বমানের শাটলারদের উত্থানে। ব্যাংককের ইম্প্যাক্ট অ্যারেনায় কয়েকদিন আগে ভারত যখন ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি দেশকে হারিয়ে প্রথমবার টমাস কাপ জিতল, তখন সারা দেশ এটাকে অবিশ্বাস্য বলে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ভারতের ব্যাডমিন্টনের দ্রোণাচার্য পুলেল্লা গোপীচাঁদের কাছে এই বিষয়টা যেন একেবারেই অবিশ্বাস্য নয়। তিনি বরং বলছেন, "কীসের অবিশ্বাস্য? কীসের এমন চমক? এটা তো হওয়ারই ছিল। টমাস কাপ এবার যদি জিততে না পারত, তাহলে সামনের বছরের মধ্যে কাপটা কিন্তু ভারতে আসতই। আসলে এই কাপ জেতা কোনওরকম চমক নয়। এটা একটা প্রক্রিয়ার সফল রূপায়ণ।"

 

ভারতে প্রায় ছয় কি সাতের দশকের দিকে শুরু হয়েছিল ব্যাডমিন্টন খেলার প্রচলন। তখন সৈয়দ মোদি, প্রকাশ পাড়ুকোন, বিমল কুমার, মধুমিতা সিং বিস্ত এবং পুলেল্লা গোপীচাঁদের মতো খেলোয়াড়রা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই করে দিয়েছিলেন। প্রকাশ পাড়ুকোনের পর পুলেল্লা গোপীচাঁদ ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন কেমন যেন একটা খেই হারিয়ে ফেলে। অনদিক থেকে বিশ্ব মানচিত্রে উঠে আসতে শুরু করে চিন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দলগুলি। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ডেনমার্ক এবং স্পেনের দাপট তো আগে থেকেই ছিল। তার মাঝখানে ভারতীয় শাটলারদের খেলা কোনওভাবেই সেই মানে পৌঁছতে পারছিল না।

 

সেই জায়গা থেকেই ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের হাল ধরতে শুরু করেন পুলেল্লা গোপীচাঁদ। তবে, তাঁর কোচ হওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু শুধুমাত্র নিজের স্বপ্নের জন্য নয়, বরং তার জন্য কিছুটা দায়ী ছিল তাঁর চোট সমস্যা। অল ইংল্যান্ড টুর্নামেন্ট জিতে দেশে ফেরার পরেই রীতিমতো চোট এবং আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছিলেন হায়দরাবাদের এই শাটলার। তখনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে আর খুব একটা বেশিদিন খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণেই তিনি চলে এলেন কোচিং-এর দুনিয়ায়। কিন্তু অলিম্পিকের পদক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এবং টমাস কাপ জেতার মতো স্বপ্নগুলো তাঁকে সবসময় কুরে-কুরে খেত। তিনি যদি আরও কয়েক বছর ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে হয়তো ভারতের জন্য আরও কিছু ট্রফি নিয়ে আসতেন। নিজে সেই স্বপ্নপূরণ করতে না পারলেও, চেয়েছিলেন কোচিং করিয়ে ছাত্র-ছাত্রী তুলে এনে তাঁদের হাত দিয়ে নিজের অধরা ট্রফিগুলিকে ছুঁয়ে দেখতে। তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি আধুনিক পরিকাঠামো এবং সঠিক কোচিং ভারতে থাকে, তাহলে জগৎসভায় একদিন ভারতীয়রাও শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসতে পারবে।

 

আরও পড়ুন: বয়স বাড়লেও অবসর নেই, আর কত পিছিয়ে পড়বে ভারতীয় ক্রিকেট?

 

কিন্তু, ২০০০ সালের প্রথমদিকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের জন্য তেমন একটা উন্নত পরিকাঠামো কোথাও ছিল না। তবে, গোপীচাঁদের মনে একটা অ্যাকাডেমি তৈরি করার বাসনা অনেকদিন ধরেই ছিল। অল ইংল্যান্ড ট্রফি জেতার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই প্রফেশনাল ব্যাডমিন্টনকে বিদায় জানিয়ে তৈরি করে ফেললেন নিজের অ্যাকাডেমি। তবে সেই সময় তিনি কাউকে পাশে পাননি। তাঁর পাশে ছিলেন শুধুমাত্র তাঁর মা। তাঁর খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর মায়ের যতটা অবদান ছিল, ঠিক ততটাই অবদান ছিল তাঁর কোচ হয়ে ওঠার পিছনে। সম্প্রতি কলকাতায় এসেও একটি অনুষ্ঠানে তিনি একথা স্বীকার করেছেন। অ্যাকাডেমি তৈরি করার কিছুদিন পর পর্যন্ত খেলা চালিয়েছিলেন গোপীচাঁদ। কিন্তু খুব বেশিদিন খেলা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ২০০৮ সাল থেকেই পাকাপাকিভাবে নেমে পড়েন কোচিংয়ের কাজে। শুরু করেন সলতে পাকানো, অর্থাৎ, পরবর্তী প্রজন্মকে তুলে আনার কাজ।

 

পুলেল্লা গোপীচাঁদের এই অ্যাকাডেমি তৈরি করার জন্য তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁকে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের গাছিবোলিতে পাঁচ একর জমি উপহার দিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। কিন্তু শুধুমাত্র ফাঁকা জমিতে অ্যাকাডেমি তৈরি করা তো একেবারেই সম্ভব নয়। অত্যাধুনিক অ্যাকাডেমি বানাতে লাগবে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। খাওয়া-ঘুম ছেড়ে ছোটাছুটি শুরু করলেন পুলেল্লা গোপীচাঁদ। নিজের সোর্স কাজে লাগিয়ে বড় বড় ব্যক্তিদের ফোন করতে শুরু করলেন। বিশ্ববিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম-প্রস্তুতকারক সংস্থা ইয়োনেক্স সাহায্য করতে এগিয়ে এল। পুলেল্লা গোপীচাঁদের পূর্বপরিচিত একজন শিল্পপতি আত্মীয় এগিয়ে এলেন অ্যাকাডেমি তৈরির কাজে। কাজ শুরু হলো ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি তৈরি করার।

 

কাঠের মেঝেতে আটখানা টেবিলবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম তৈরি করা হলো। তৈরি করা হলো জিমন্যাশিয়াম, মেডিটেশন রুম, ক্লাসরুম এবং বিশ্রাম কক্ষ। বাইরে তৈরি করা হলো সুইমিং পুল এবং ফুটবল মাঠ। দৌড়নোর জন্য তৈরি হলো ট্র্যাক। যুক্ত হতে শুরু করল একাধিক অত্যাধুনিক জিনিসপত্র। ২০০৮ সালের শেষের দিকে সম্পূর্ণ হলো অ্যাকাডেমি তৈরির কাজ। এই অ্যাকাডেমি দেখে রীতিমতো চমকে গেলেন ভারতীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের বড় বড় কর্তারাও। ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীরা তো গুরু বলে মানতে শুরু করলেন গোপীচাঁদকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে ভারতের বুকে এত বড় এবং এত উন্নতমানের ক্রীড়া পরিকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে, এটা এতদিন পর্যন্ত কেউ ভাবতে পারেননি। এমনকী, কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের কর্তারা পর্যন্ত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এই অ্যাকাডেমি দেখে। জাতীয় টিমের প্র্যাকটিসের জন্য ব্যবহার হতে শুরু করল এই অ্যাকাডেমি। আর সেখান থেকেই শুরু হলো গোপী ম্যাজিক।

 

তবে সেই সময়ে ভারতে ব্যাডমিন্টনকে জনপ্রিয় করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। ব্যাডমিন্টন নিয়ে এই দেশে তেমন কোনও জনপ্রিয়তা কোনওদিনই তৈরি হয়নি। আর সেই সময় তো ব্যাডমিন্টনের একেবারেই জনপ্রিয়তা ছিল না। আগেকার দিনে ভারতে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা ছিল ফুটবল এবং হকির মতো খেলার। আর শচীন-সৌরভ পরবর্তী সময়ে তো শুধুই ক্রিকেটেরই জনপ্রিয়তা। গোপীচাঁদ বুঝতে পেরেছিলেন, কাজটা প্রচণ্ড কঠিন। কিন্তু ততদিনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা, তেমনই তাঁর ঝুলিতে সঞ্চয় হয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা। তাই তিনি খুব সহজেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন, ভারতে ব্যাডমিন্টনকে আধুনিক করার জন্য কী কী করতে হবে। তাই সবার আগে দরকার ছিল, নিজেকে পাল্টানো। খেলোয়াড় হওয়ার কারণে অনুশাসন তাঁর ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালো ছিল। তবে প্রশিক্ষক হতে গেলে সেই অনুশাসনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তাই, আরও ভালোভাবে শুরু করলেন অনুশাসন। গোপীচাঁদের দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ। অ্যাকাডেমিতে চলে আসেন মোটামুটি চারটে কি সাড়ে চারটের দিকে। বেলা পর্যন্ত চলে অনুশীলন। তারপর কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার দুপুর থেকে সন্ধেবেলা পর্যন্ত অনুশীলন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে গিয়েছে, এখনও কিন্তু গোপীচাঁদ একইরকমভাবে অনুশীলন করে যান। খেলোয়াড়দের একসময় বিরক্ত লাগলেও, তাঁরা বুঝতে পারেন, এই অনুশীলন একটা-না-একটা দিন তাঁদের সাফল্য এনে দেবেই। আর তাই হলো।

 

বিভিন্ন শহরে যেরকমভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো একাধিক ক্রিকেট এবং ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে উঠেছে, সেরকমভাবে কিন্তু কখনওই নিজের অ্যাকাডেমি গড়ে তুলতে চাননি পুলেল্লা গোপীচাঁদ। ২০০৮ নাগাদ একটা স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করলেও ধাপে ধাপে নিজের অ্যাকাডেমিতে আরও অনেক কিছু যোগ করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁর অ্যাকাডেমিতে রয়েছে ১৭টি অত্যাধুনিক ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ১০০টি থাকার ঘর। আরও অত্যাধুনিক যন্ত্র এসেছে জিমন‍্যাশিয়াম রুমে। সুইমিং পুল হয়েছে আরও উন্নত। স্টিম বাথ এবং আইস বাথ নেওয়ার ঘর যোগ হয়েছে। দৌড়নোর ট্র্যাক হয়েছে আরও দীর্ঘ, যোগ হয়েছে যোগাসন এবং অ্যারোবিক্স করার স্টুডিও। এছাড়াও গোপীচাঁদের সংসারে রয়েছেন ৩ জন সিনিয়ার কোচ, ৩ জন সহযোগী কোচ, দু'জন সহকারী কোচ, সাইয়ের একজন কোচ, তিন জন ফিটনেস ট্রেইনার, একজন ম্যাসিওর, পাঁচজন ফিজিওথেরাপিস্ট। খেলোয়াড়দের টেকনিকে উন্নতি করার জন্য বিদেশ থেকে নামকরা প্রশিক্ষকদের নিয়ে আসেন তিনি। এছাড়াও সম্প্রতি গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে কাজ করেছেন মূল্য হান্দয়া এবং কিম জি‌. হিউনের মতো বিশ্বমানের ব্যাডমিন্টন কোচ।

 

তবে, শুধুমাত্র বিশ্বমানের অ্যাকাডেমি তৈরি করলেই কাজ সম্পন্ন হয় না। আসল ব্যাপারটা হল ব্যাডমিন্টনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? সেটাও নিজের মাথায় সাজিয়ে ফেললেন পুলেল্লা গোপীচাঁদ। ২০০৪ সাল থেকেই প্রতি বছর হায়দরাবাদে একটি করে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৯ সালে ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হায়দ্রাবাদে। আর সবটাই হয়েছে পুলেল্লা গোপীচাঁদের উদ্যোগে। এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্য সচিব এল. ভি. সুভ্রমণ্যমকে।

 

আর প্রথম সাফল্য এল সাইনা নেওয়ালের হাত ধরেই। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে সাইনা দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দিলেন। কিন্তু সেবার ভারত অন্য খেলাতে এতগুলি অলিম্পিক পদক পেয়েছিল যে, কোথাও একটা চাপা পড়ে যায় সাইনা-র এই কৃতিত্ব। তা নিয়ে গোপীর মনে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও, ততদিনে তাঁর অ্যাকাডেমি জন্ম দিয়েছে আরও এক তারকার- পুসারলা ভেঙ্কট সিন্ধু, যিনি বেশি জনপ্রিয় পি.ভি সিন্ধু হিসেবে। কিন্তু শুধুই কি পি.ভি সিন্ধু এবং সাইনা নেহওয়াল, পুলেল্লা গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমি থেকে জন্ম নিয়েছে ভারতের আরও কিছু ব্যাডমিন্টন তারকা। কিদাম্বি শ্রীকান্ত, পারুপল্লি কাশ্যপ, এইচএস প্রণয়, সাই প্রণীত এবং সমীর বর্মার মতো খেলোয়াড়রা জন্ম নিয়েছেন তার অ্যাকাডেমি থেকে। বার্সেলোনায় যেরকমভাবে ফুটবলার তৈরির একটা কারখানা চলে, এ যেন ভারতের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৈরি করার একটা কারখানা। কারোলিনা মারিন, তৌফিক হিদায়াত, লিন ডান, ওয়াং জিন, লি চং ই, সিক্সিগান ওয়াংয়ের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়রা ঘুরে গিয়েছেন তাঁর অ্যাকাডেমি। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের সাফল্য যত বাড়ছে, ততই যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমির জনপ্রিয়তা।

 

কিন্তু তাঁদের সময় এত ভাল মানের শাটলার থাকা সত্ত্বেও ভারত কেন বিশ্বসেরার মর্যাদা পায়নি সেই সময়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একেবারেই বিচলিত হননি পুলেল্লা গোপীচাঁদ। এই প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, আসলে চিন এবং জাপানের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে সারা বছর ধরে যে ধরনের প্র্যাকটিস টুর্নামেন্ট সেখানে খেলা হয়, সেরকম টুর্নামেন্ট আমাদের খেলতে হবে। ভারতে সেই সময় সেরকম টুর্নামেন্ট কিংবা ভালো প্র্যাকটিস পার্টনার পাওয়া যেত না। কিন্তু আমার অ্যাকাডেমি চালু হওয়ার পর দেশের সমস্ত সেরা ছেলেমেয়ে এখানে এসে যোগ দেবার সুযোগ পায়। নিজেদের মধ্যে পরস্পরকে টক্কর দেওয়া লড়াই শুরু হয়ে যায়। বাড়তে থাকে সরকারি এবং বেসরকারি অনেক সাহায্য। বিদেশে প্র্যাকটিস এবং বিদেশি টুর্নামেন্ট খেলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে বাড়তে থাকে সাফল্য।

 

টমাস কাপ জেতার এই কৃতিত্বটাকে ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও বড় করে দেখেন তিনি। সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু তবুও তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে প্রথম অ্যাকাডেমি গঠন করার সময় ঠিক যেরকমভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তিনি, সেরকমই এখনও। তিনি একজন কঠোর প্রশিক্ষক, তিনি সব সময় প্রতিভা অন্বেষণে ব্রতী। তিনি চেয়েছিলেন, শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়কে ভুলে ভারতীয় জনতা সাইনা এবং সিন্ধুর নামে জয়ধ্বনি দিক। তাঁর চোখে শুধু একটাই স্বপ্ন, ভারতের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাডমিন্টন পৌঁছে যাক। বিশ্বসেরা হয়ে উঠুক ভারতীয় ব্যাডমিন্টন। রবিবার ভারতীয় দল টমাস কাপ জেতার পরে ভারতের গৃহস্থ বাড়িতেও শুরু হয়েছে টমাস কাপ এবং ব্যাডমিন্টন নিয়ে আলোচনা। কিন্তু এটুকুতেই থেমে থাকা নয়, গোপী বলেন, "আমরা অনেক দূর অবধি এসেছি, কিন্তু এখনও আরও অনেককিছুই আমাদের সম্ভব করতে হবে। অলিম্পিকে সোনা জিততে হবে, উবের কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। পুরো বিশ্বকে বুঝিয়ে দিতে হবে, কোনওকিছুই অসম্ভব নয়।"

 

 

More Articles