মমতা নেই, নীতীশ নেই! বিজেপির বিরোধিতা করতে ইন্ডিয়া জোটে রইল কারা?

INDIA Block and BJP : জেডি(ইউ) বিজেপিতে যাওয়ার ফলে, উচ্চবর্ণের পাশাপাশি ওবিসি এবং ইবিসি (অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণি) সম্প্রদায়ও এনডিএ-কে ভোট দিতে পারে।

হারাধনের ২৮ টি দল থেকে কমতে কমতে রইল কারা? গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে প্রথম বৈঠক করেছিল বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। তারপর থেকে বিরোধী এই জোটে এখনও টিকে রয়েছে তামিলনাড়ুর ডিএমকে, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরের শিবির), কেরলের সিপিএম, বিহারের আরজেডি এবং উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি। বাকিরা? কংগ্রেসের নেতা, ইন্ডিয়া জোটের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধি এখন ভারত জোড় ন্যায় যাত্রায় বেরিয়েছেন। দেশকে জুড়তে গিয়ে একে একে জোট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে! একদিকে ভারত জোড় আরেকদিকে ইন্ডিয়া ছোটো- দুই চলছে সমানতালে। জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমারের দলবদল এর সাম্প্রতিকতম সংযোজন। তাহলে ইন্ডিয়া জোট বলে কি আদৌ কিছু আছে?

হারাধনের যে কয়েকটি সন্তান এখনও অবশিষ্ট আছে, তাদের মধ্যে, RJD নেতারা ইন্ডিয়া জোটে এখনও টিকে থাকছে কারণ তারা মনে করে যে জোট থেকে নিজেদের দূরে রাখলে বিহারে তাদের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক প্রভাবিত হতে পারে। ডিএমকে-র জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা প্রায় নেই বললেই চলে কারণ এই দলের শক্তি তামিলনাড়ুতেই সীমাবদ্ধ। সমাজবাদী পার্টি উত্তরপ্রদেশে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে রাজ্যের মোট ৮০টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১টি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সপা।

আরও পড়ুন- বিজেপির সঙ্গে কতদিন থাকবেন নীতীশ? ভবিষ্যদ্বাণী প্রশান্ত কিশোরের…

এমতাবস্থায় ভগ্নপ্রায় জোটের শক্তি কতটুকু? জোট কি তবে সত্যিই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করছে মুসলিম ভোটের উপর ভর করে? এনডিএ-র কাছে কোনও বিরোধীই তবে নেই জবাব দেওয়ার মতো? বিরোধী জোটের মধ্যে তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টি আর নেই। তৃণমূল আর আপ পশ্চিমবঙ্গ এবং পঞ্জাবে আসন ভাগ করতে অস্বীকার করেছে। এখন তো বিহারেও জেডি(ইউ) চলে গেল বিজেপির সঙ্গে। ইন্ডিয়া জোট যতই মুখে বলুক কোনও প্রভাব পড়বে না, দেশশুদ্ধ মানুষ বুঝতে পারছে বিজেপি বিরোধীহীন হওয়ার মুখে।

জেডি(ইউ)-এর জোটত্যাগ সত্যিই বড় ধাক্কা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আসন ভাগাভাগিতে সাফ 'না' জানিয়ে দিয়েছেন। আসলে বিরোধী নেতারা ইন্ডিয়া জোট নিয়ে শুরুতে যতই আশাবাদী ছিলেন, ধীরে ধীরে আঞ্চলিক অনৈক্যই প্রবল হয়ে উঠে জোটকে শেষ করে দিতে থাকে। আঞ্চলিক মিত্রশক্তিদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বাংলায় ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা প্রবেশের ঠিক একদিন আগে, মমতা বলেন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ন্যায় যাত্রা বিহারে পৌঁছনোর এক দিন আগে, আরেক মিত্রশক্তি জেডিইউ ইন্ডিয়া জোট থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী এনডিএ-র দলে যোগ দেয়। বিরোধী বলে আদৌ কি কিছু অবশিষ্ট রইল যাকে দেশের মানুষ ভরসা করতে পারে?

বিরোধীদের ভোট ব্যাঙ্ক কমছে ক্রমেই। লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ১৩১টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। সংখ্যার মধ্যে ৮৪টি তপশিলি জাতি এবং ৪৭টি তপশিলি উপজাতিদের জন্য। মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বলছে দলিত এবং উপজাতির ভোটব্যাঙ্কে বিজেপিতে যাচ্ছে।

মুসলিম সম্প্রদায় বিজেপি-বিরোধী দলদের, কংগ্রেস বা আঞ্চলিক শক্তিকে কীভাবে ভোট দিচ্ছে তাও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফল এবং গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকের শেষ গুরুত্বপূর্ণ ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে মুসলিমরাও বিজেপিকেই ভোট দিয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট মুসলিম ও খ্রিস্টান গোষ্ঠী এবং উপগোষ্ঠীর কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি পৌঁছে যাওয়ার মতো ঘটনা এই সম্প্রদায়গুলির নির্বাচনী সমীকরণকেও বদলে দিয়েছে।

আরও পড়ুন- আবার প্রতারণা নীতীশের! যেভাবে এগোয় পল্টুরামের পাল্টির কিসসা

বিহার এবং বাংলায় এমন ধাক্কার পরে, বিরোধী জোটে কংগ্রেস এবং তার বাকি সঙ্গীদের কাছে ভোটব্যাঙ্ক খুবই কম। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, তিনি জোটের অংশ থাকবেন তবে আসন ভাগাভাগি করবেন না। এই অদ্ভুত নিয়ম যে আখেরে কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। তৃণমূলের সূত্র বলছে, দল এখন 'নির্বাচন-পরবর্তী জোট' বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তৃণমূল একাই এই বাংলায় নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। মানে লড়াই সরাসরি তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। কংগ্রেস এবং সিপিএম কোনও সমীকরণেই নেই। লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত এবং পৌরসভা সহ এর আগের নির্বাচনের ফল থেকে স্পষ্ট হয়েছে কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদ এবং মালদহেও কংগ্রেস ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু, আর সিপিএম তো নিশ্চিহ্নই।

বিহারে, জেডি(ইউ) বিজেপিতে যাওয়ার ফলে, উচ্চবর্ণের পাশাপাশি ওবিসি এবং ইবিসি (অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণি) সম্প্রদায়ও এনডিএ-কে ভোট দিতে পারে। বিজেপি মিশ্র ভোটার তৈরি করে ফেলেছে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মনোজ যাদবকে সামনে রেখে বিহারের যাদব ভোটারদের প্রভাবিত করা গিয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, কিছু রাজ্যে মুসলিমরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কর্ণাটকে, মুসলমানদের ভোটের শতাংশ ছিল প্রচুর বেশি, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

বিহারে সবসময়ই জাতপাতের সমীকরণ ভিত্তিক নির্বাচনই হয়। মানুষ রাষ্ট্রের শাসন বা উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেয় না এখানে। সুতরাং, নীতীশ কুমার যাই করুন না কেন, যতবার পালটি খান না কেন জাতপাতের সমীকরণ একই থাকে। ওবিসি এবং ইবিসি ভোটারদের দখল থাকবে জেডিইউয়েরই। আরজেডি শুধুমাত্র মুসলিম এবং যাদব ভোটের উপর নির্ভরশীল। ভুলে গেলে চলবে না ২০১৯ সালে, বিজেপি ১৭টি আসনের সবক'টিতেই জিতেছিল। সুতরাং, ‘মোদি নেহি তো কৌন' প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জায়গাতেই নেই বিরোধীরা।

More Articles