কোচিং না নিয়েই UPSC পাশ! প্রস্তুতির যে সহজ উপায় আছে হাতের নাগালেই
UPSC Preparation Tips: UPSC-র ইন্টারভিউয়ের আগে প্রার্থীদের সাধারণত একটি বিস্তারিত আবেদনপত্র (DAF) পূরণ করতে হয়
চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবথেকে কঠিন পরীক্ষা হিসাবে গণ্য করা হয় ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা UPSC পরীক্ষাকেই। আইপিএস, আইএএস, আইএফএসের মতো দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক পদে যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমেই। লোভনীয় বেতন, দারুণ সুযোগ-সুবিধা ও সম্মানীয় পদের জন্যই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া, চাকরি প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসেন। মাত্র এক হাজার পদের জন্যই কমপক্ষে ১০ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে। তবে ইউপিএসসি পরীক্ষার মতোই কঠিন তার প্রস্তুতিও। এই মানের সরকারি চাকরি নিয়ে যুবক যুবতীদের মধ্যে উন্মাদনাও ব্যাপক। প্রচুর পরীক্ষার্থী বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। নিজেদের সামাজিক জীবন এবং অন্যান্য বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রেখে কেবল মাত্র পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই মনোনিবেশ করেন তাঁরা। UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। যদি ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হয়ে প্রশাসনিক অফিসার হওয়া আপনারও স্বপ্ন হয়ে থাকে তবে এই কয়েকটি বিষয় ভুলবেন না।
UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় কোন কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখলে সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন তা দেখে নিন এক ঝলকে -
১. নিজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে প্রস্তুতি শুরু করুন।
২. UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় শুধুমাত্র একটি প্রকাশনার বইয়ের উপরই নির্ভর করুন। অনেক প্রকাশকের বিভিন্ন বই পড়লে বিভ্রান্ত হতে পারেন।
৩. একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সিলেবাসের রিভিশন করতে থাকুন। এইভাবে নিজের পড়া তৈরি করলে বিষয়গুলি একেবারে আত্মস্থ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, রিভিশন করলে বুঝবেন প্রস্তুতি কতখানি ভালোভাবে এগোচ্ছে।
৪. পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং সিলেবাসের পাশাপাশি, লেখার অনুশীলন এবং নিজের ব্যক্তিত্বের সামগ্রিক বিকাশেও সমানভাবে মনযোগ দিন। মক ইন্টারভিউ দিতে পারেন বারবার, তাতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে বছরে একবার আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS) এবং আইএফএস (IFS) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ ভাবে ২১ থেকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বর্গের প্রার্থীদের বয়সের ছাড় দেওয়া হয়। এবারে আসা যাক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে।
আরও পড়ুন- ইউটিউব ভিডিও দেখে UPSC-তে র্যাঙ্ক করাও সম্ভব! বাজিমাত করে দেখালেন তরুণী
UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আদর্শ সময়
সোজা কথায় যে কোনও কঠিন পরীক্ষায় আদর্শ সময় বলে কিছু থাকে না। পরীক্ষার্থীদের একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোতেই হবে। সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে এক বছর সময় প্রয়োজন। কারণ, পরীক্ষাটি যথাক্রমে প্রাথমিক, লিখিত (প্রধান) এবং সাক্ষাৎকার এই ৩টি ধাপে পরিচালিত। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। সুতরাং, একজন প্রার্থীকে অন্তত তাঁর জীবনের দুই বছর প্রস্তুতির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতি শুরু করার সময় এই সমস্ত বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।
কীভাবে শুরু করবেন?
প্রস্তুতির প্রথমে পরীক্ষা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করা, পরিচিত বা ওই পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা- এই বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার সিলেবাস মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা এবং বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব প্রয়োজন। যেমন IFS পাঠ্যক্রমটি দু’টি ভাগে বিভক্ত– প্রাথমিক এবং প্রধান। একটি প্রধান বিভাগ সাধারণ অধ্যয়ন বিভাগের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যেখানে ভূগোল, ইতিহাস, রাজনীতি, ইংরেজি, হিন্দি, আঞ্চলিক ভাষা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থেকে প্রশ্ন থাকে।
কোন বই দিয়ে শুরু করবেন?
NCERT প্রদত্ত বইগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ার অভ্যস করতে হবে, এতে প্রার্থীরা প্রতিটি বিষয়ের মূল অংশ সহজেই বুঝতে পারবেন। সাধারণত পূর্ববর্তী প্রার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির NCERT বই পড়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও যত দ্রুত সম্ভব দৈনিক পত্রিকা পড়া শুরু করা উচিত এতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সমস্যার সমাধান হবে। দৈনিক পত্রিকা একই বিষয়ের ওপর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশেও সহায়তা করে।
কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা
এই প্রশ্নটি নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই নাজেহাল। যদিও সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় কোচিংয়ের গুরুত্ব রয়েছে তবে তা একেবারেই নির্ণায়ক নয়, নিতেই যে হবে এমন কোনও কথা নেই। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রবীণ প্রার্থী এবং কলেজের অধ্যাপকদের কাছ থেকেও সাজেশন চাইতে পারেন। বিশেষ করে মহামারি পরবর্তী সময়ে বিনামূল্যে বিভিন্ন অনলাইন ক্লাস বা মডিউল ক্লাসের গুরুত্ব বাড়ায় নির্দিষ্ট কোনও স্থানে গিয়ে কোচিং নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এখন কমছে। অনেকক্ষেত্রেই প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর কিন্তু এই পরীক্ষার সাফল্য এবং ব্যর্থতা নির্ভর করে। তাই প্রার্থীদের আগ্রহের বিষয় প্রস্তুতির জন্য উপলব্ধ সময় এবং আকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিত্তিতে বিষয় নির্বাচন করা উচিত।
নোট তৈরি করা
প্রার্থীদের নিয়মিত নিজের নোট তৈরি করার অভ্যেস করতে হবে। কোনও বিষয় নিয়ে খানিকটা অংশ পড়া হয়ে গেলে যাবতীয় তথ্য নোটের আকারে লিখে রাখা যেতে পারে। সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় শুধুমাত্র কী পড়তে হবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কী পড়া উচিত নয় তাও গুরুত্বপূর্ণ। নোট করে নেওয়া অংশগুলি হাইলাইটারের মাধ্যমে দ্রুত মনে রাখার সুবিধে হবে। এছাড়াও প্রচুর ডায়াগ্রাম, মানচিত্রের ব্যবহার পরবর্তীতে রিভিশনের সময় প্রার্থীদের সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন- এক লাখে চারজন আক্রান্ত! রোজের ওষুধের কুপ্রভাবেই দেখা যেতে পারে ভয়াবহ এই বিরল রোগ
নিয়মিত অনুশীলন করা
অনুশীলন জীবনের যেকোনও ক্ষেত্রেই সাফল্যের চাবিকাঠি। নিয়মিত মক টেস্টে অংশ নেওয়া এবং উত্তর লেখার অভ্যাস সিভিল সার্ভিসের মতো কঠিন পরীক্ষাকেও অনেকখানি সহজ করে দেয়। প্রথমদিকে স্বল্প সংখ্যা দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো যেতে পারে। তবে মক টেস্টের কম স্কোরে নিজেকে হতাশ করলে কিন্তু চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে।
পার্সোনাল ইন্টারভিউ
UPSC-র ইন্টারভিউয়ের আগে প্রার্থীদের সাধারণত একটি বিস্তারিত আবেদনপত্র (DAF) পূরণ করতে হয়। এতে প্রার্থীদের আকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, পছন্দের বিষয় ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকে। ইন্টারভিউ চলাকালীন প্রার্থীদের এই বিষয় কেন্দ্রিক প্রশ্ন করা হয়। সুতরাং DAF পূরণ করার আগে সচেতন থাকা উচিত।
নির্দিষ্ট টাইম-টেবিল অনুসরণ করা
প্রস্তুতির শুরুতেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্যাটার্ন এবং সিলেবাসের দৈর্ঘ্য অনুসারে প্রস্তুতির জন্য একটি সময়সীমা তৈরি করে নিতে পারলে ভালো। এতে প্রার্থীরা নিজেকে যাচাই করার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিনের পড়ার অগ্রগতি, রিভিশন ও অনুশীলন নির্দিষ্ট সময় সূচির মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনার মাঝে খানিকটা বিরতি নিতে কিন্তু ভুলবেন না এতে মনযোগ আরও বাড়বে।
যেহেতু প্রার্থীরা দেশের এক মর্যাদাপূর্ণ পরিষেবাতে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষাগুলিতে অংশগ্রহণ করবেন, তাই নিজের লক্ষ্য ভুললে চলবে না। প্রার্থীদের মনে রাখতে হবে, পরীক্ষা যত কঠিনই হোক ইচ্ছে আর অধ্যবসায় থাকলে যে কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেন। UPSC-র ইতিহাসে এমন উদাহারণ কিন্তু যথেষ্ট রয়েছে। তাহলে এবার থেকে আগাম শুরু করে দিন UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতি।