জাতীয় পতাকা আর রামধ্বজের গুরুত্ব এবার একই? যে নির্দেশিকা জারি করল প্রশাসন...

Ram Dhwaj and National Flag : রামের ছবি দেওয়া পতাকা বা অন্য কিছু যতক্ষণ না খুলে ফেলা হচ্ছে ততক্ষণ সেগুলি যত্ন সহকারে পরিচালনা করতে হবে।

জাতীয় পতাকার মর্যাদা রয়েছে। একটি দেশে জাতীয় পতাকা সে দেশের মূল সুরের, দেশের আত্মার প্রতীক। ইচ্ছা করলেই জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যায় না, জাতীয় পতাকার স্থান আর দলীয় পতাকার স্থান এক নয় দেশে। এতকাল ভারতবর্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সেই পতাকা নামানোর কিছু বিধি ছিল। প্রতি দেশেই থাকে। কিন্তু ২২ জানুয়ারি, বিজেপির কথা মতো নতুন ভারতের জন্ম হয়েছে! নতুন ভারত অর্থাৎ হিন্দুরাষ্ট্র! সেই রাষ্ট্রের লক্ষ্যে যাত্রা যে নানা দিক থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে তার আরেকটি প্রমাণ হলো জাতীয় পতাকার পাশাপাশি রামধ্বজের গুরুত্ব! জাতীয় পতাকার যেমন বিধি আছে, এবার রামধ্বজের জন্যও বিধি আনতে চলেছে প্রশাসন।

নয়া দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এনডিএমসি) বুধবার রামধ্বজ এবং জাতীয় পতাকা যথাযথভাবে ব্যবহারের নির্দেশিকা জারি করেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান এবং আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আসলে বহুস্থানেই এই রাম মন্দির প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে, জয় শ্রী রাম লেখা গেরুয়া পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্র দিবসও হাজির। ফলে জাতীয় তেরঙ্গাও টাঙানো হবে। তাই আবাসিক কল্যাণ সমিতি (RWAs), ব্যবসায়ী সমিতি (MTA), এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের এই দুই পতাকা ব্যবহার ও তা সঠিকভাবে নামিয়ে নেওয়ার নির্দেশিকা জারি হয়েছে।

কর্পোরেশন বলছে, জাতীয় পতাকা ও রামধ্বজ জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে একটি ফোন নম্বর এবং অ্যাপও তৈরি হয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করে বা ওই অ্যাপ ব্যবহার করে নাগরিকতার তাঁর এলাকায় রামধ্বজ এবং জাতীয় পতাকা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারেন। নাগরিকদের সেক্ষেত্রে ১৫৩৩ নম্বরে ফোন করতে হবে বা NDMC ৩১১ অ্যাপে লগ ইন করতে হবে এবং পতাকা সংগ্রহের জন্য অনুরোধ নথিভুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন- হিন্দুরাষ্ট্রে ঠাঁই নেই সকলের? কেন রাম মন্দিরে আমন্ত্রিত নন শাহরুখ-সলমান-আমির-দীপিকা-করণ?

কর্পোরেশনের তরফে শহরের সাফাই কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে 'পতাকা বিধি' অনুযায়ী জাতীয় পতাকা সংগ্রহ ও নিষ্পত্তি করতে হবে। একইভাবে, রামধ্বজের জন্য সাফাই কর্মীদের যথাযথ পদ্ধতি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ এমন নির্দেশিকা কেন? কর্পোরেশন বলছে, এলাকায় রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে মানুষজন যে জয় শ্রী রাম লেখা পতাকাগুলি বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করেছে, ব্যবহার করেছে তা সঠিক নিয়মে খুলে ফেলা দরকার। এই ধর্মীয় পতাকাগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, ছিঁড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকাকে ভালো ভাবে দেখা হচ্ছে না।

চেম্বার অফ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিটিআই) অনুযায়ী, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে রাজধানীর ৭০০টি বাজারে ১০ লক্ষ পতাকা স্থাপন করা হয়েছিল। কর্পোরেশন আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে রামের ছবি দেওয়া পতাকা, পোস্টার এবং ব্যানারগুলির উপর নজরদারি রাখতে যাতে সেসব রাস্তায় পড়ে না যায়। খান মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, তারা এই অনুষ্ঠানের জন্য ১৫০টি পতাকা এবং প্রায় ২,০০০ মিটার লম্বা পতাকার সারি টাঙিয়েছিল। পরিবেশবান্ধব বাজার সমিতি হওয়ায় তারা প্লাস্টিকের পতাকা বা অন্য কোনো সামগ্রী কেনেনি। কাপড়ের পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে যাতে পরের বছর ২২ জানুয়ারি এলে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন আরও জানিয়েছে, রামের ছবি দেওয়া পতাকা বা অন্য কিছু যতক্ষণ না খুলে ফেলা হচ্ছে ততক্ষণ সেগুলি যত্ন সহকারে পরিচালনা করতে হবে।

অর্থাৎ এটুকু সাফ যে জাতীয় পতাকার যেমন দেশে বিশেষ মর্যাদা আছে, প্রায় সেই একই মর্যাদা পেতে চলেছে রামধ্বজও! জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেললে বা মাড়িয়ে দিলে, ভুলভাবে টাঙানো হলে তা দেশের অপমান। তার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি আছে, জেল ও জরিমানা দুইই আছে। এবার রামধ্বজের অবমাননার জন্যও কি শাস্তি! সরকার কি কোনও ধর্মীয় পতাকার জন্য বিধি জারি করতে পারে? হিন্দুরাষ্ট্র শুধু মুখে মুখে প্রচারিত নয় আর, সত্যিই দেশের জাতীয়তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এই ধর্মীয় বিভেদ?

More Articles