এই সতর্কতা অবলম্বন না করলে গরমে ভয়াবহ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে আপনার দুধের শিশু
প্রখর সূর্যতাপের কারণে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, তাতে সুস্থ ব্যক্তিও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গ্রীষ্মকালে শুধুমাত্র বড়দের শরীর নয়, উদ্বেগের কারণ হতে পারে শিশুর স্বাস্থ্যও। শুধু তাপমাত্রা নয়, আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, গরমের সঙ্গে আর্দ্রতা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে, স্কুল বা টিউশন যেতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়ে উঠছে আপনার সন্তানের। এই অবস্থায় আপনিও বুঝে উঠতে পারছেন না, কীভাবে শিশুস্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন? জেনে নিন, কী কী থেকে সতর্ক থাকতে হবে?
১. হিট স্ট্রোক (হাইপারথার্মিয়া)
প্রখর সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার কারণে ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গগুলি দেখা দেয় শিশুর শরীরে। হাইপারথার্মিয়া মোকাবিলা করতে জল বা বরফের প্যাকের সাহায্যে শিশুর শরীরকে ঠান্ডা করুন। বাইরে কাজ করার সময় অথবা খেলার সময় মাথা ঢেকে রাখার জন্য টুপি ব্যবহার করুন। এতে সরাসরি সূর্যের আলো মাথায় লাগবে না। একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ২০% শিশুর স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। নার্ভের সমস্যা, কিডনি ফেলিওরের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: ভয়ংকর তাপপ্রবাহ বাংলাজুড়ে, আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা, কীভাবে বাঁচবেন?
২. খাদ্যে বিষক্রিয়া
নিম্নমানের খাবার বা জল খাওয়ার কারণে ঘটে এই সমস্যা। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ফলে তা খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া। তাই রাস্তার ধারের খাবার এবং বাসি রান্না করা খাবার ভুলেও বাচ্চাকে খাওয়াতে যাবেন না ।
৩. ডিহাইড্রেশন
গরম ও আর্দ্রতার কারণে শিশুদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়। এছাড়া শিশুদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে রাখা কঠিন। তাই শরীর যেন সর্বদা হাইড্রেটেড থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। শরীর হাইড্রেটেড রাখতে ডাবের জল, নুন লেবুর জল কিংবা বাটার মিল্ক খাওয়াতে পারেন।
৪. সানবার্ন
সূর্যরশ্মি খুব বেশি সময় ধরে শিশুর ত্বকের ওপর পড়লে তা ক্ষতির কারণ হয়। ফলে ত্বক লাল হয়ে জ্বালা হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ফোসকা এবং চামড়া খোসা ছাড়তে পারে। এই সমস্যাগুলো এড়াতে অবশ্যই সানস্ক্রিন (কমপক্ষে এসপিএফ ৩০) ব্যবহার করুন। তাছাড়া শিশুদের বেলা ১১ টা থেকে ৪ টার মধ্যে বাইরে না বের করাই সবচেয়ে ভালো।
৫. ফুসকুড়ি
ফুসকুড়ি, ফোস্কা বা ফোঁড়া এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যাগুলি গরমকালে সাধারণত শিশুদের মধ্যেও দেখা যায়। একজিমার মতো চর্মরোগ গ্রীষ্মকালে বৃদ্ধি পায়, ঘাম এবং তেল নিঃসরণ বৃদ্ধির কারণে। এছাড়া অনেকক্ষণ ধরে সূর্যের আলোয় থাকাও এই রোগের একটি কারণ। ফলস্বরূপ আপনার শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে। ফেলে রাখবেন না একদম। তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালু করুন।
ত্বকের জ্বালা নিয়ন্ত্রণ করতে ঠান্ডা বরফের প্রলেপ দিতে পারেন। শিশুকে গরমকালে পাতলা সুতির জামাকাপড় পড়ান। তবে ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া যে কোনও ওষুধ বা মলম শিশুর ত্বকে লাগাবেন না। না হলে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে।
৬. জলবাহিত রোগ
দূষিত জল থেকে টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা এবং জন্ডিসের মতো রোগ হতে পারে শিশুদের। তাই বাইরে বেরোলে সবসময়ই চেষ্টা করুন বাড়ির জল সঙ্গে রাখতে। সমস্যা এড়াতে জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়াতে পারেন শিশুকে।
৭.কনজাংক্টিভাইটিস
চোখের কনজাংক্টিভায় সংক্রমণের কারণে ব্যাথা অনুভব হয়। এক্ষেত্রে চোখে লাল ভাব, চুলকানি এবং চোখ থেকে জল পড়ার মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। তাই শিশুর চোখের যথাযথ যত্ন নিন। খেয়াল রাখুন, যেন শিশু কোনওভাবেই অপরিষ্কার হাতে চোখ স্পর্শ না করে। সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়ান।
৮. রেচন অঙ্গের সংক্রমণ (ইউটিআই)
এই ধরনের রোগে রেচনতন্ত্রের যে-কোনও অংশে, অর্থাৎ কিডনি, মূত্রনালী, মূত্রাশয়ে সংক্রমণ হতে পারে। অপর্যাপ্ত জল খাওয়ার কারণে গরমকালে শিশুদের শরীরে ইউটিআই-এর সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন শিশুর ক্ষেত্রে এবং পর্যাপ্ত জল খাওয়ান।