বুকে চাপ দিয়েই বাঁচানো যেতে পারে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে! জানেন সঠিক পদ্ধতি?
Cardiac Arrest CPR: সিপিআর করার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে দ্বিগুণ, এমনকী তিনগুণও বাড়াতে পারে।
ভারতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত, দেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মূলত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সঠিক মুহূর্তে সঠিক পদক্ষেপ না করলে কয়েক সেকেন্ডেই মৃত্যু হতে পারে আক্রান্তের। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রধান উপসর্গ হলো অচেতন হয়ে যাওয়া এবং সাড়া না দেওয়া। সিপিআর এই চরম মুহূর্তে ভীষণ কাজে আসতে পারে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে। সহজভাবে বলতে গেলে, সিপিআর (Cardiopulmonary resuscitation) হলো বুকে হাত দিয়ে চাপ দেওয়া, নানা ভিডিওতে এই ঘটনাটি অনেকেই দেখে থাকেন কিন্তু সঠিক পদ্ধতি অনেকেরই অজানা। কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা যেতে পারে।
সিপিআর প্রয়োগের সঠিক উপায় কী?
সিপিআর করার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে দ্বিগুণ, এমনকী তিনগুণও বাড়াতে পারে। সিপিআর অপরিহার্য কারণ এটি রক্তের প্রবাহকে সক্রিয় রাখে এবং প্রশিক্ষিত মেডিকেল কর্মীরা নিমেষেই রোগীকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন। যখন কেউ অজ্ঞান হয়ে যান, আশেপাশের উদ্বিগ্ন মানুষ তখন তার বুকে ম্যাসেজ করা শুরু করেন। কিন্তু CPR একটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, শুধুমাত্র কম্প্রেশন বা বুকে চাপ দেওয়ার বিষয় নয়।
প্রথম ধাপ: সাহায্যের জন্য ডাক দিতে হবে
হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে একজন ব্যক্তি নিচে পড়ে গেলে, রোগী অজ্ঞান কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। যদি কাউকে হঠাৎ পড়ে যেতে বা পড়ে থাকতে দেখেন, তাহলে আগে দেখতে হবে তিনি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কিনা। অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে জাগিয়ে রাখতে হবে এবং অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করতে হবে। সারা দেশে অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি নম্বর ১০২৷ একা একজন সবটা সামলাতে পারবেন না তাই আরও দু' তিনজন মিলে ফোন করা, রোগীর নাড়ি পরীক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে৷
আরও পড়ুন- শীতে ভোর ৪ টে থেকে ৬ টার মধ্যেই ঘটে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক! কীভাবে আটকাবেন?
দ্বিতীয় ধাপ: রোগীকে পরীক্ষা করা
রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। ঘাড়ের জায়গায় নাড়ি পরীক্ষা করা দরকার কারণ এটি হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে কাছে। যদি রক্তচাপ কমও থাকে, তাও ঘাড়ের কাছে নাড়ির স্পন্দন অনুভব করা যায়। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করা দরকার।
তৃতীয় ধাপ: কম্প্রেশন
যদি নাড়ির স্পন্দন না খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে কম্প্রেশন পদ্ধতিতে যেতে হবে। এই প্রক্রিয়ায়, কৃত্রিমভাবে হার্টকে পাম্প করতে হবে যাতে নাড়ির স্পন্দন ফিরে আসে। এতে চাপ দেওয়া হয় যাতে হৃৎপিণ্ডে যদি কিছু রক্ত থাকে তা শরীর এবং মস্তিষ্কের অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। যেহেতু আমাদের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৮০-৯০, তাই বুকের চাপ বা সংকোচন মিনিটে ১০০-১২০ বার হওয়া উচিত।
কীভাবে বুকে চাপ দেবেন সঠিক উপায়ে?
রোগীকে শুইয়ে রাখুন। সাধারণত একজন ব্যক্তি নিচে পড়ে গেলে এবং সমতলে শুয়ে থাকলে বেশিরভাগ লোকজন মাথা উপরে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর রক্তচাপ ইতিমধ্যেই কম। মাথা উপরে তুললে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ আরও কমে যায়। পরিবর্তে, পা উপরে তুলুন যাতে রক্ত মস্তিষ্কের দিকে প্রবাহিত হয়।
রোগী মেঝেতে শুয়ে থাকলে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে আর অন্য ব্যক্তির রোগীর মাথার কাছে থাকা উচিত। স্টার্নাম মানে বুকের দুই পাশের মধ্যবর্তী জয়েন্ট হাড়ের নীচের অংশে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু এটা হাড়ের বিষয় তাই বুকের বাম দিকে কমপ্রেস করার চেষ্টা করবেন না, কারণ সেই এলাকার পাঁজর নরম এবং তা ভেঙে যেতে পারে।
আরও পড়ুন- এক ইঞ্চি ভুঁড়ি বাড়লেই হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে বহুগুণ! ভয়াবহ তথ্য উঠে এল গবেষণায়
বাম দিকে চাপ না দিয়ে স্টার্নামের নীচের এক-তৃতীয়াংশ অংশে চাপ দিন। হাতের তালুর শক্ত অংশ ব্যবহার করে চাপ বাড়াতে হবে। নিজের শরীর সোজা রেখে, একটি তালুর উপর অন্য তালু রেখে চাপ দিতে হবে। কনুই যেন বাঁকা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কনুই বাঁকানো থাকলে হাড়কে নীচে ঠেলতে পারবেন না। হাড়কে ৫ সেমি বা আড়াই ইঞ্চির বেশি চাপ দেবেন না। অতিরিক্ত বেশি বা অতিরিক্ত কম চাপ দিলে কাজে কাজ হবে না।
চতুর্থ ধাপ: মুখ থেকে মুখে শ্বাস
কম্প্রেশনের প্রক্রিয়া চলাকালীন, মুখ থেকে মুখে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া উচিত। রোগীর মুখের মধ্যে বায়ুরোধী জায়গা তৈরি করতে হবে এবং রোগীকে পর্যাপ্ত শ্বাস দিতে হবে। ৩০ টি কম্প্রেশন দেওয়ার পরে ২ টি শ্বাস দিতে হবে। প্রতিটি শ্বাস ২ সেকেন্ডের হওয়া উচিত। নিজে গভীর শ্বাস নিয়ে বুকে হাওয়া ভরতে হবে, তারপর সবটুকু রোগীর দেহে চালান করতে হবে, নাক বন্ধ রেখে।
পঞ্চম ধাপ: AED বা অটোমেটেড এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেটর
সংকোচনের প্রক্রিয়া চলাকালীন AED বা অটোমেটেড এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেটর দিয়ে নাড়ি পরীক্ষা করতে পারলে ভালো। AED সাধারণত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে একজন ব্যক্তিকে বাঁচাতে ব্যবহৃত হয়। AED একটি ছোট্ট ডিভাইস যা ব্যবহার করাও সহজ এবং শপিং মল, রেস্তোরাঁ, হোটেলে সাধারণত পাওয়া যায়। যতক্ষণ না নাড়ি অনুভব করা যাচ্ছে CPR চালিয়ে যেতে হবে, অ্যাম্বুলেন্স না আসা অবধি।