রোজের খাবারে এটুকু বদল মানেই 'অমরত্বের' পথ হাঁটা!

যদি খাদ্যাভাস বদলে ফেলা যায়, তবেই বহু মানুষকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

কোভিড-পরবর্তী দুনিয়ায় মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। মারাত্মক রোগের থেকে বাঁচতে নতুন ধরনের খাবার খেতেও মানুষ পিছপা হন না। তাই অনেকেই ডায়েট মেনে পুষ্টিকর খাবার খান। কিন্তু সকলের পক্ষে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব নয়। ফলস্বরূপ আমাদের অনেকের মধ্যেই এখনও ধন্দ রয়েছে, কী খাওয়া উচিত আর কোনটা নয়, তা নিয়ে। এ-বিষয়ে বহু প্রতিবেদন ইন্টারনেটে পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য  পরামর্শই সবসময় নেওয়া ভালো।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) একটি বিবৃতিতে খাদ্যগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ জানিয়েছেন। হু-এর মতে লবণ, চিনি কম করার পাশাপাশি পানীয় গ্রহণের ব্যাপারেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন আমাদের। আর তাতেই নাকি শায়েস্তা হবে অসংক্রামক ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো একাধিক রোগ। হু-এর রিপোর্টে অনুযায়ী, প্রতি বছর ৪১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে, যা বিশ্বজুড়ে ৭১% মৃত্যুর সমান। এর মধ্যে ৩৮ মিলিয়নের মৃত্যু হয় হৃদরোগে এবং ফুসফুসের রোগে। ১৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কম বয়সেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্রতি বছর ৩.৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী অ্যালকোহল। তাই যদি খাদ্যাভাস বদলে ফেলা যায়, তবেই বহু মানুষকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। চলুন বিশদে জেনে নেওয়া যাক, আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা কী কী পরামর্শ দিয়েছে।

১. লবণ কমানো এবং চিনির পরিমাণ সীমিত করা
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মতো রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায় হলো সীমিত মাত্রায় লবণ ও চিনি গ্রহণ। যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে,

আরও পড়ুন: দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, তাতেই আছে ‘অমরত্বের’ চাবিকাঠি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

• প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা এক চামচের বেশি লবণ গ্রহণ না করাই ভালো।

• নুনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন শুকনো মশলাগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন।

• বাজারে বিক্রি হওয়া লবণাক্ত সস (সোয়া সস, ফিস সস) বা মশলা সীমিত মাত্রায় খান।

• প্রথম দিকে চেষ্টা করুন প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি (১২ চামচ) চিনি না খাওয়ার। একবার অভ্যেস হয়ে গেলে পরিমাণে কমিয়ে সেটি ২৫ গ্রাম করতে হবে, তবেই শরীর সুস্থ থাকবে।

• ২ বছরের কমবয়সি শিশুদের জন্য বাজার থেকে কেনা খাবারে লবণ,চিনি ভুলেও দেবেন না। তবে এর থেকে বেশি বয়সি শিশুদেরও সীমিত মাত্রায় লবণ, চিনি খাওয়ানো যেতে পারে।

২. ফ্যাটজাতীয় খাবার গ্রহণ সম্পর্কে সচেতন হোন
হু-র মতে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের সমস্যার মতো অসংক্রামক রোগের থেকে বাঁচতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ওপর নজর রাখা জরুরি। এ-প্রসঙ্গে যে কথাগুলি মনে রাখতে হবে,

• কম ফ্যাটযুক্ত খাবার বা কম ফ্যাটযুক্ত দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যগুলি বেছে নিন।

• রেড মিটের বদল সাদা মাংস অর্থাৎ মাছ, মুরগির মাংস খাওয়া উচিত। এতে শরীরে ফ্যাট সঞ্চিত হবে না, ফলে স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

• বেকন, সসেজের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে হু।

• এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত কেক, পেস্ট্রি ও ভাজা খাবার খাওয়ার বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

৩. সুষম খাদ্যগ্রহণ
রাস্তার ধারের বিভিন্ন ফাস্ট ফুডগুলি শরীরে নানা রোগের কারণ, তাই এগুলি এড়িয়ে চলাই ভালো। বরং সুষম খাবার খেতে শুরু করুন যা শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। রইল আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার টিপস,

• প্রতিদিন বাদামি চাল, গম, মুসুর ডালের মতো গোটা শস্য রাখুন খাদ্যতালিকায়। সঙ্গে মটরশুঁটি, লেবু, তাজা ফল, শাকসবজি খান। মাছ, মাংস, ডিম, দুধের মতো প্রাণীজ প্রোটিনের উৎসগুলি বেছে নিন।

• জলখাবারে রাখুন কাঁচা সবজি, টাটকা বিভিন্ন ফল এবং লবণ ছাড়া বাদাম।

৪. পানীয় গ্রহণের দিকে নজর দিন
প্রতিদিন কী ধরনের পানীয় গ্রহণ করছেন? শরীর সুস্থ রাখতে তার দিকেও বিশেষ নজর রাখা জরুরি। এ-প্রসঙ্গে যে কথাগুলি মাথায় রাখা প্রয়োজন,

• সুগারযুক্ত বিভিন্ন পানীয় যেমন সফট ড্রিংকস, জুস, নানা স্বাদের জল এবং কফিযুক্ত ঠান্ডা পানীয় কম পরিমাণে খান।

• বেশি পরিমাণে জল খান। সুস্থ থাকতে শরীর হাইড্রেট রাখা খুবই জরুরি।

ভালো খাবার খেয়ে সহজেই সুস্থ থাকুন, দূরে থাকুক ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদরোগ।

More Articles