দু'বেলা দু'মুঠো ভাত, তাতেই আছে 'অমরত্বের' চাবিকাঠি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

পুষ্টিবিদদের মতে বেশ কিছু কারণে অনেকেই ভাত খাওয়া বন্ধ করলেও এর বহুমুখী পুষ্টিগুণ শরীরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আদিম যুগের মধ্যভাগে মানুষ যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে, সেসময় খাদ্যসংস্থানের কারণে চাষআবাদ শুরু করে তারা। সেই আদিম যুগের উৎপাদিত দানাশস্যগুলি আজও আমাদের প্রধান গৃহীত খাদ্য। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা খাই, তার মধ্যে অন্যতম ভাত। কথাতেও বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। যতই আধুনিক হোক বাঙালি, অন্তত একবেলা পেটপুরে ভাত না খেলে তৃপ্তি হয় না। তবে শুধুই কি বাঙালির প্রিয় ভাত! না। তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গৃহীত খাদ্যশস্যগুলির মধ্যে অন্যতম হলো চাল। চাল দিয়ে তৈরি রকমারি পদগুলি স্বাদেও দারুণ। পাশাপাশি বিশ্বে প্রায় লক্ষাধিক ধরনের চালের চাষ হওয়ায় মানুষের কাছে একাধিক বিকল্পও রয়েছে। তবে সাদা চালই সবচেয়ে জনপ্রিয় এক্ষেত্রে। ফুড অ্যান্ড ওয়াইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ ক্যালোরি মানুষ গ্রহণ করেন, তার পাঁচ ভাগের একভাগের উৎস ভাত।

একাধিক কারণে বর্তমানে মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দিলেও একে উপেক্ষা করা অসম্ভব। তবে পুষ্টিবিদদের মতে বেশ কিছু কারণে অনেকেই ভাত খাওয়া বন্ধ করলেও এর বহুমুখী পুষ্টিগুণ শরীরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা ভাতে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে-

• ১৩০ ক্যালোরি ও ৬৯% জল

• ২.৪ গ্রাম প্রোটিন

• ২৮.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট

• ০.২ গ্রাম মোট ফ্যাট, যার মধ্যে ০.০৫ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ০.০৬ গ্রাম মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ০.০৫ গ্রাম পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স, সুগার এবং ফাইবার।

• এছাড়াও ১% আয়রন, ৫% ভিটামিন বি-৬ এবং ৩% ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে।

আরও পড়ুন: কালো চালের ভাত, পায়েস, বিরিয়ানি! পুষ্টিগুণ জানলে চমকে উঠবেন

ভাতের যে যে উপকারিতা রয়েছে

১. প্রতিনিয়ত আরও চনমনে বোধ হয়
অনেকেই মনে করেন যে, প্রতিদিন ভাত খাওয়ার কারণেই শরীর অলস হয়ে উঠছে। তবে এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। বরং সাদা ভাত কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর, যা মানবদেহের শক্তির প্রধান উৎস। এছাড়া সাদা ভাতে ভিটামিন বি রয়েছে, যা আমাদের বাড়তি শক্তি জোগায়।

নিউট্রিয়েন্টস পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ফোলেট ব্যতীত সমস্ত প্রকার ভিটামিন বি মানবদেহে কোষের মধ্যে শক্তি উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শরীরে শক্তির জোগান বজায় রাখতে প্রতিটি ভিটামিন বি অপরিহার্য। ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীরে উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ সীমিত হয়ে যায়, যা বিপাকীয় প্রক্রিয়া, এমনকী, আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

২. মজবুত হাড়ের অধিকারী
দেখা গেছে, হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাদা ভাত খুবই উপকারী। আমাদের সকলেরই জানা, হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড়ের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদানের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উল্লেখ করা হয় না। এই উপাদানটি হলো ম্যাঙ্গানিজ, যা সাদা ভাতে উপস্থিত থাকে। ফলে প্রতিদিন সামান্য ভাত খেয়েই হাড় মজবুত রাখুন।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সাদা ভাতে সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকার ফলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। সোডিয়াম রক্তনালী সংকুচিত করে দেয়, ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এই কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ না করাই ভালো। সাদা ভাত এবং ব্রাউন রাইস, দুইই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৪. ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম
ভাতে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকায় তা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বিশ্বের বহু বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা বিশ্বাস করেন যে শরীর ক্যানসার কোশের বৃদ্ধি রুখতে পারে ভাতে থাকা অদ্রবণীয় ফাইবার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফাইবার কোলোরেক্টাল এবং অন্ত্রের ক্যানসার রুখতে পারে। পাশাপাশি ভাতে ভিটামিন এ এবং সি-র মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেয়।

৫. অন্ত্র ভালো রাখতে
ভাতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা অন্ত্রে প্রায় অপাচ্য অবস্থায় পৌঁছয়, এর ফলে অন্ত্রে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ডায়েরিয়া, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (IBS) কারণে মানবদেহে যে প্রভাব পড়ে, তা এড়ানো সম্ভব হয়।

এছাড়াও ভাতে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় খুবই উপকারী এটি। তাই যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা ভাত খাওয়া বন্ধ করবেন না। তবে চিকিৎসকদের মতে ফাইবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

৬. ত্বক ভালো রাখতে
কালো চাল, বাদামি চাল, চালের থেকে তৈরি তেল এবং চাল ধোয়া জল ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, আমাদের দেশে চালের জল ত্বক পুড়ে গেলে জ্বালা কমাতে ব্যবহার করা হয়। চালে উপস্থিত ফেনোলিক যৌগ ত্বকের জ্বালা ও লালভাব কমাতে খুবই উপকারী। পাশাপাশি বয়সের কারণে ত্বকের বলিরেখা ও কুঁচকে যাওয়া থেকে রুখতেও ভাত খাওয়া উচিত।

ভাতের বহু উপকারিতা সত্ত্বেও বেশি পরিমাণে ভাত খেলে কিন্তু ফল হবে উল্টো। টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধির মতো সমস্যা দেখা দেয় অত্যধিক মাত্রায় ভাত খেলে। তাই প্রতিদিন পরিমাণমতো ভাত খেয়ে শরীর সুস্থ রাখুন।

More Articles