অমরত্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়! যে আশ্চর্য ভবিষ্যতের কথা শোনালেন গুগলের বিজ্ঞানী
Human Immortal within 2030 Scientist Claims : মৃত্যুকে এড়িয়ে অনন্তকাল ধরে বাঁচা সম্ভব! অমরত্ব নাকি মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে।
অমরত্ব – এই শব্দটি পুরাণে, শাস্ত্রে বারবার সামনে এসেছে। অমৃতের সেই জীবনসুধা একবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেলে স্বয়ং যমও ভয় পাবে। অমর হওয়ার আকাঙ্খায় নানা যুদ্ধ হয়েছে। পুরাণ বলে, পরশুরাম, হনুমানের মতো কয়েকজন অমরত্বের বরও পেয়েছেন। অশ্বত্থামার কাছে সেই বর আবার অভিশাপের মতো। সে যাই হোক, মৃত্যু কখনও শরীর কিংবা আত্মা স্পর্শ করবে না। বছরের পর বছর বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারবেন আপনি। এমন ইচ্ছে তো নিশ্চয়ই হয়! যদি অমর হওয়া যেত, তাহলে কত কাজই না করা যেত!
কিন্তু বাস্তব তেমনটা বলে না। ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’, এ যেন অমোঘ নিয়তি, চিরন্তন সত্য। মৃত্যু একদিন আমাদের গ্রাস করে নেবেই। কিন্তু অমরত্ব? সেটা কি কখনও আসবে না? কেউ কি তার সন্ধান পাবে না? মৃত্যু নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অনেকে আবার বিজ্ঞান আর দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকেও মৃত্যুকে দেখার চেষ্টা করেছেন। এবার নতুন করে আসরে নামলেন গুগলেরই এক বিজ্ঞানী। তাঁর দাবি, মৃত্যুকে এড়িয়ে অনন্তকাল ধরে বাঁচা সম্ভব! অমরত্ব নাকি মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে। আর হাতে গোনা কয়েক বছরের অপেক্ষা!
রে কুর্জওয়েলের পরিচয় আমেরিকার অন্যতম প্রথম সারির প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে। গুগলের প্রাক্তন এই বিজ্ঞানী ১৯৯৯ সালে ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজির পুরস্কারও পেয়েছেন। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির হাত ধরেই তিনি ১৪৭টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যার মধ্যে ৮৬ শতাংশই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৫ সালে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন কুর্জওয়েল, ‘The Singularity Is Near’। সেখানেই এক জায়গায় তিনি বলেছেন, মানুষের অমরত্বের আকাঙ্খা বহুদিনের। আর প্রযুক্তির হাত ধরে সেই অমরত্ব পাওয়া নাকি সম্ভব! তিনি এও বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই মানুষের হাতে সেই জাদুকাঠি চলে আসবে। অমরত্বের মন্ত্র হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আর এই বক্তব্য নিয়েই সম্প্রতি নেট মাধ্যমে উঠল বিতর্কের ঝড়।
ঠিক কী বলেছেন রে কুর্জওয়েল? গুগলের প্রাক্তন এই বিজ্ঞানীর দাবি, অমরত্ব পাওয়ার এই যাত্রায় সাহায্য করবে প্রযুক্তি। রোবোটিক্স আর ন্যানো টেকনোলজির নাম তো সবাই শুনেছেন। আপাতত গোটা বিশ্বে এই ব্যাপারে নিত্যনতুন কাজ হয়ে চলেছে। কুর্জওয়েলের দাবি, এই দুটি জিনিস একসঙ্গে করলেই কেল্লা ফতে। তৈরি করা হবে ‘ন্যানোবটস’। এগুলি আদতে রোবট, কিন্তু ন্যানো টেকনোলজির অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য ক্ষমতা হবে অসীম।
কীভাবে কাজ করবে এটি? কুর্জওয়েলের দাবি, আকারে অনেকটাই ছোট হওয়ার জন্য মানুষের শরীরের ভেতর, রক্তের শিরা-ধমনির মধ্যে অনায়াসেই ঢুকে পড়বে এটি। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও শরীরের যাবতীয় যন্ত্রকে সারিয়ে তুলবে এই ন্যানোবট। শুধু তাই নয়, রোগ নিরাময়ও অনেকটাই সাহায্য করবে এটি। আর এসব করলে মানুষের আয়ুও বাড়বে। আর সেটাই অমরত্বের দিকে এগোনোর একটা প্রধান রাস্তা।
অবশ্য এর আগেও এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কুর্জওয়েল। ১৯৯০ সালে বলেছিলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দাবাড়ুকেও হারিয়ে দেবে কম্পিউটার। ঠিক দশ বছর পর, ২০০০ সালে সেই জিনিসটাই হল। কিংবদন্তি গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে দিল কম্পিউটার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়েও তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কাজে দিয়েছে। এখানেও কি সত্যি হতে চলেছে কুর্জওয়েলের কথা? সত্যি অমরত্বের প্রযুক্তি ধরা পড়বে মানুষের হাতে? আপাতত বছর কয়েকের অপেক্ষা। তারপরই আসল রহস্য বোঝা যাবে।