মেয়ে গ্রেফতার হলে লড়বেন তিনি! মহুয়া মৈত্রকে অভয়বার্তা 'শেরনি' মায়ের

Mahua Moitra: সেই আশঙ্কার মধ্যেই মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন মহুয়া মৈত্রের মা। আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের আওতাধীন মামলায় মহুয়ার নাম জড়াতেই মেয়েকে হোয়াটসঅ্যাপে অভয়বার্তা পাঠালেন মা মঞ্জু মিত্র।

বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না মহুয়ার। গত বছর হাতছাড়া হয়েছে সাংসদপদ। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তবে তার পরেও তাঁর পিছনে যেন লেগেই রয়েছে ইডি-সিবিআই ফাঁড়া। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকেই তাঁকে ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। নিজের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ তাঁর কাছে এই লোকসভা ভোট।

কিন্তু স্বস্তি নেই মহুয়ার। মন দিয়ে প্রচারটুকুও সারতে পারছেন না তিনি। এবার আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের আওতাধীন একটি মামলায় (পিএমএলএ) যুক্ত করেছে ইডি। সম্প্রতি তাঁকে বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে তাঁকে দিল্লিতে তলব করে ইডি। কিন্তু ইডি-র ডাকে দিল্লি যাননি মহুয়া। আবগারি মামলায় কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই মহুয়ার গ্রেফতারির আশঙ্কা হাওয়ায় উড়ছে। লোকসভা ভোটের আগেই গ্রেফতার করা হতে পারে কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদকে।

আরও পড়ুন: ভোটে মহুয়া-কাঁটা তুলতে অমৃতার পাশে খোদ মোদি, কোন পথে কৃষ্ণনগরের লড়াই?

তবে সেই আশঙ্কার মধ্যেই মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন মহুয়া মৈত্রের মা। আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের আওতাধীন মামলায় মহুয়ার নাম জড়াতেই মেয়েকে হোয়াটসঅ্যাপে অভয়বার্তা পাঠালেন মা মঞ্জু মিত্র। আর মায়ের পাঠানো সেই বার্তা তড়িঘড়ি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন মহুয়া। মায়ের পাঠানো মেসেজের যে স্ক্রিনশট মহুয়া এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে মায়ের নম্বরটি সেভ করা রয়েছে 'মাম্মি মোবাইল এয়ারটেল' বলে। ইংরেজিতে লেখা সেই বার্তায় মহুয়াকে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁর মা। বলেছেন, তাঁর নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তৈরি রাখতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করলে ভোটে মনোনয়ন জমা দেবেন তিনি। স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে মহুয়া লিখেছেন, ‘‘বিজেপির ইডি, সিবিআইয়ের এই দৈনিক প্রেমের উদ্‌যাপন নিয়ে আমার মায়ের জবাব। ইউ রক মাম্মি। আসল বাঘিনী।’’

দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হিরনন্দানীর থেকে দামী উপহার এবং টাকার বিনিময়ে সংসদে মোদি-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছিল মহুয়ার বিরুদ্ধে। সেই মামলায় জল গড়ায় অনেক দূর। সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। তবে হাল ছাড়েননি মহুয়া। লড়াই জারি রাখার কথা তখনই ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল দলও। এই লোকসভা ভোটে ফের কৃষ্ণনগর আসন থেকেই তাঁকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। তাঁর বিপক্ষে কৃষ্ণনগরে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে কৃষ্ণনগরের ভূমিকন্যা অমৃতা রায়কে। স্থানীয় রাজবাড়ির সদস্যা তিনি। কৃষ্ণনগরে দাঁড়ানোর অতিরিক্ত কিছু সুবিধা তাঁর রয়েইছে। কিছুদিন আগেই অমৃতাকে ফোন করে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানান, তাঁর জয় নিশ্চিত করতে সমস্ত রকম আইনি পদক্ষেপ করবে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব।

 

ততদিনে বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে মহুয়ার কাছে এসে পড়েছে ইডির সমন। তবে ভোটের আগে কৃষ্ণনগর ছেড়ে নড়তে রাজি হননি। আপাতত তিনি ভোটের প্রচারে ব্যস্ত মহুয়া। এবার তাঁর বিরুদ্ধে যুক্ত হয়েছে আর্থিক তছরুপের মামলাও। এবং তাঁকে গ্রেফতারের আশঙ্কা আরও প্রবল হচ্ছে দিন কে দিন। তার মধ্যেই মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নতুন করে সমন জারি করেছে মহুয়া এবং তাঁর পরিচিত দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির বিরুদ্ধে। ইডি সূত্রের খবর, দু’জনকেই বিদেশি মুদ্রা বিনিময় আইন (ফেমা) লঙ্ঘনের বিষয়ে জেরা করা হতে পারে। সম্প্রতি মহুয়ার কলকাতার বাসস্থানে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। তার পরে তল্লাশি চালানো হয়েছে মহুয়ার কৃষ্ণনগরের বাসস্থান, তাঁর সাংসদের দফতর এবং তাঁর করিমপুরের বাড়িতেও। কলকাতার বাসস্থানটি আদতে মহুয়ার বাবা-মায়ের। সিবিআই তল্লাশির সময়ে মহুয়ার মা মঞ্জু মৈত্র সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: এবার হিরানন্দানির অফিসে ইডি! মহুয়া মৈত্রকেই ঘুরপথে শিক্ষা দিতে চাইছে বিজেপি?

তবে শুধু মায়ের অভয়বার্তাই নয়। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে আরও একটি বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন মহুয়া। বুধবারই একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম তুলে ধরে মহুয়ার কটাক্ষ করেন, ‘খুলে হ্যায় বিজেপি কে দ্বার, আ যাও নহি তো অব কে বার তিহাড়’। অর্থাৎ, বিজেপির দরজা খোলাই আছে। এ বার চলে এসো। নাহলে ঠিকানা হবে তিহাড় জেল। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক সমালোচকদের একাংশ অভিযোগ করেছে, ভোটের মুখে বিরোধীদের ধুয়েমুছে ফেলতেই অবিজেপি রাজ্যগুলির নেতামন্ত্রীদের পিছনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে লাগানো হচ্ছে। আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল আবগারি দুর্নীতি মামলায় তিহাড়ে বন্দি। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও জেলে। এর পরেই তালিকায় নাম রয়েছে মহুয়ার বলে দাবি করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তবে সত্যিই ইডি-সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলে ব্যাক-আপ প্ল্যান তৈরি মহুয়ার হাতে। সম্ভবত মা মঞ্জু মিত্রের এদিনের আশ্বাসবাণী সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।

More Articles