যুদ্ধ থামছে ঘোষণা করেও কেন গাজায় লাগাতার হামলা করছে ইজরায়েল
Israel Hamas Ceasefire: গত কয়েকদিনে গাজায় একের পর এক নতুন নতুন হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। বৃহস্পতিবারও প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিচালিত আবু হুসেইন স্কুলে রকেট হামলা চলে।
ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতির শর্তে বন্দিদের ছাড়তে রাজি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। সেই শর্ত মেনে শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা। তবে তার আগে যেন আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে গাজায় হামলার মাত্রা চড়ালো ইজরায়েল। প্রমাণ করে দিল, মুখে যাই বলুক না কেন, এত কিছুর পরেও নিজের অবস্থান থেকে বিন্দু মাত্র সরছে না ইজরায়েল। গত কয়েকদিনে গাজায় একের পর এক নতুন নতুন হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। বৃহস্পতিবারও প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিচালিত আবু হুসেইন স্কুলে নতুন করে রকেট হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। সেই হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে হামাসের তরফে জানানো হয়েছে।
ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (UNRWA)-র আওতায় থাকা ওই আবু হুসেইন স্কুলটির উপরে বৃহস্পতিবার রকেট হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। ওই স্কুলটিতে ঠাঁই নিয়েছিস গাজার অজস্র বাস্তুচ্যুত মানুষ। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার গাজার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরকে নিশানা করেছে নেতানিয়াহু সেনা। সেই তালিকায় যুক্ত হল নতুন নাম।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি! বন্দি মুক্তিতে হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে কেন রাজি হলো ইজরায়েল?
শুধু স্কুলে নয়, উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালকে নিশানা করে একাধিক নতুন নতুন হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র আশরফ আল-কুদ্রা জানিয়েছেন, হাসপাতালের উপর ভয়ঙ্কর ভাবে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ওই হাসপাতাল ভবনের বিরাট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুশোরও বেশি রোগী, স্বাস্থ্যকর্মীকে বেইল্ট লাহিয়া হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ইজরায়েলি সেনার হামলার মুখে পড়েছিল সেই হাসপাতালটিও।
মুখে শান্তির কথা বললেও শান্তির পথে যে একেবারেই হাঁটতে চাইছে না নেতানিয়াহু সেনা, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বারবার। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পাশেই শেৎ নাসের এলাকা, সেখানে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান। যে ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম বহু।
ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা ওয়াফার তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর গাজার কাছে শেখ রাদওয়ান এলাকার একটি বাড়িতে হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। সেই হামলায় অন্তত দশ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কাছে মহম্মদ ইব্রাহিম নামে ১২ বছরের একটি বাচ্চা ছেলেকে গুলি করে মারে ইজরায়েলি সেনা।
গাজা-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে ভয়ঙ্কর রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার শৈশব। অসংখ্য শিশু বলি হয়েছে এই যুদ্ধে। গত ৭ অক্টোবর হঠাৎ করেই ইজরায়েলে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। তার পরেই গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। তার পর থেকে চলেছে লাগাতার হামলা। ইজরায়েলি সেনার আগ্রাসনে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। তার মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি শুধু শিশু। হামাসের হামলায় ইজরায়েলে মারা গিয়েছিল ১২০০ জন মানুষ। তবে সেই সংখ্যা পেরিয়ে ক্রমশ অনন্তের দিকে ছুটছে গাজায় নিহতের সংখ্যা।
আরও পড়ুন: যুদ্ধের বাজারে জ্বালানি অমিল! মাটির সাবেক উনুনে ফুটে ওঠে ভাতই ভরসা এখন বিধ্বস্ত গাজায়
৭ অক্টোবর ইজরায়েল থেকে বহু নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে এসেছিল হামাসবাহিনী। তাঁরা এখনও হামাসদের হাতে বন্দি। সম্প্রতি সেই বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস বাহিনী। তার বিনিময়ে ইজরায়েলের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রেখেছে হামাস। সেই প্রস্তাব মেনে শুক্রবার থেকে শুরু গাজাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরচতি। এই দিন বিকেলেই হামাসের তরফে মুক্তি দেওয়ার কথা কয়েকজন ইজরায়েলি বন্দিকে। তবে সত্যিই কি হামাসকে দেওয়া কথা রাখবে ইজরায়েল? নাকি এ যুদ্ধের নতুন কোনও চাল? যদিও এ বিরতি সাময়িক, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি তা আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছে ইজরায়েল। তবে যে ভাবে যুদ্ধবিরতির আগে ভয়াবহ ভাবে যুদ্ধ উস্কে দিয়েছে নেতানিয়াহু সেনা, তাতে সেই আশঙ্কা তেমন অমূলক নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।