সন্তর্পণে সুড়ঙ্গে খোঁড়া হচ্ছে গর্ত, কবে অন্ধকার থেকে মুক্তি বন্দি শ্রমিকদের?

Uttarakhand Tunnel Collapse: এমন ভাবে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে, যাতে সেখান দিয়ে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ বেরোতে পারে। সুড়ঙ্গ খননের এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাআধিকারিক দীপক পাতিল।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে চল্লিশ জন শ্রমিক। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে সুড়ঙ্গপথ বানানোর সময় হঠাৎ করেই ধস নামে। সেই ধসে সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকা পড়ে যান ৪০ জন নির্মাণকর্মী। তাদের উদ্ধারে সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের কাছে যত এগোনোর চেষ্টা করা হয়, ততই বাড়ে ধ্বংসস্তূপ চাপা পড়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও। ফলে ক্রমশ কঠিন হতে থাকে উদ্ধারকাজ। ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে বিশেষ খননযন্ত্র। রোবোটের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় খাবার, জল এবং ওষুধপত্র। কিন্তু আর কতদিন!

এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে একটু একটু করে সফল হচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। ইতিমধ্যেই ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে ৩২ মিটার ড্রিল করা শুরু করেছে উদ্ধারকারী দল। এমন ভাবে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে, যাতে সেখান দিয়ে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ বেরোতে পারে। সুড়ঙ্গ খননের এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাআধিকারিক দীপক পাতিল। জানা গিয়েছে, প্রায় অর্ধেকটা পথ তারা পৌঁছে গিয়েছে। বাকি আরও অর্ধেক। প্রকৃতি এবং বাকি পরিস্থিতি পাশে থাকলে সেটুকুও নিরাপদে সম্পূর্ণ করা যাবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। 

আরও পড়ুন: ১০ দিন ধরে সুড়ঙ্গে আটকে ৪০ শ্রমিক! উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মনে করাচ্ছে প্রিন্স উদ্ধারের ঘটনা

প্রায় এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার সামনে এসেছে সুড়ঙ্গের ভিতরে বন্দি শ্রমিকদের ছবি। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে তাদের। দেখা গিয়েছে, সুড়ঙ্গের ভিতরে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বন্দি শ্রমিকেরা। ইতিমধ্যেই পাইপলাইনের মাধ্যমে সুড়ঙ্গের ভিতরে পাঠানো হয়েছে একটি এন্ডোস্কোপিক ক্যামেরা। তার মাধ্যমেই ধরা পড়েছে ওই ছবি।

 

গত ১২ নভেম্বর উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশি জেলায় ভেঙে পড়ে ওই সুড়ঙ্গটি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ওই সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকে যান ওই ৪০ জন নির্মাণকর্মী। জানা যায়, নির্মাণকর্মীরা সুড়ঙ্গের ভিতরে নিরাপদে আছেন। কিন্তু কোনওভাবেই তাঁদের বের করে আনা যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব সুড়ঙ্গপথে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পাঠানো হয় আলো। জল, খাবার এবং ওষুধপত্র সবটাই পাঠানো হচ্ছে। তার পরেও অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। দেখতে দেখতে কতগুলো দিন কেটে যাচ্ছে। 

In Uttarakhand Indian rescuers drill halfway towards workers trapped in tunnel

 

১২ নভেম্বর ওই সুড়ঙ্গপথের দেওয়াল খসে পড়ার নেপথ্যে আসল কারণটি কী, তা এখনও পরিষ্কার করে জানানো হয়নি। এমনিতেই উত্তরকাশি জেলার ওই অংশটি ধসপ্রবণ। ফলে উদ্ধারকারীদের প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেওয়া হচ্ছে। তার উপর রয়েছে ভূমিকম্প ও বন্যার ভয়। ফলে উদ্ধারকারীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় যে কোনও প্রকার খনন এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। তার উপর ধসে পড়া সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরওই কঠিন। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে সেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, স্থানীয় পুলিশ ও দমকল। থাইল্যান্ডের গুহায় বন্দি ফুটবলদলকে বাঁচাতে আনা হয়েছিল নরওয়ে থেকে বিশেষ উদ্ধারকারী দল। এই অভিযানেও হাত লাগিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন: সুড়ঙ্গের অন্ধকারে ভয়াবহ ৫ দিন! মার্কিন খননযন্ত্র বাঁচাতে পারবে ৪০ শ্রমিকের জীবন?

এত কিছুর পরেও শুধু দীর্ঘায়িত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। আশার আলো দেখা গেলেও এখনও বিশ বাঁও জলে বন্দি শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ। ঠিক কবে আলোর মুখ দেখবেন অন্ধকার সুড়ঙ্গে বন্দি ওই ৪০ জন শ্রমিক, কবে ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে, তা এখনও নিশ্চিৎ করে বলা যাচ্ছে। সত্যি বলতেও ফিরলেও কি এতদিনের অন্ধকারের ট্রমা ভুলতে পারবেন তাঁরা, অনেক আশঙ্কা আর বিপদের সম্ভাবনার মধ্যে বসে দিন গুনছে দেশবাসী।

More Articles