ফেল মার্কিন যন্ত্র, ১৬ দিন পরে শ্রমিকদের উদ্ধারে যে পথে এগোচ্ছে উদ্ধারকারী দল...

Uttarkashi Tunnel Collapse: বিপদের উপর বিপদ! আগে ধ্বংসাবশেষ সরানোর ছিল, এরপর সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে যায় ক্ষতিগ্রস্ত অগার মেশিনটি। সেটিকে বের করার প্রক্রিয়ায় লাগছে বেশ খানিকটা সময়।

আলো পৌঁছেছে, জল-খাবার ও প্রয়োজনায় ওষুধপত্রও পৌঁছেছে সুড়ঙ্গের ভিতরে। তবে সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পথে কেবলই কাঁটা। ক্রমশ বাড়ছে উত্তরকাশির সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের প্রতীক্ষা। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ষোলোটা দিন। বিদেশ থেকে উড়িয়ে আনা বিশেষ উদ্ধারকারী দল, মার্কিন খননযন্ত্র- কোনও কিছু দিয়েই যেন শেষপর্যন্ত উদ্ধারকাজ সম্ভব হয়নি। কবে বাইরের খোলা আকাশে নিরাপদে বেরোবেন ওই ৪১ জন শ্রমিক? না, তা এখনও পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না। আরও কয়েকদিন, এমনকী এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হতে রারে উদ্ধারকাজে, তেমনটাই জানা যাচ্ছে আপাতত।

দিন দুয়েক-তিনেক আগেই জানা গিয়েছিল, সুড়ঙ্গের প্রায় অর্ধেকটা অংশে খননকাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছে উদ্ধারকারী দল। তবে না, শেষপর্যন্ত পৌঁছনো যায়নি শ্রমিকদের কাছে। প্রাথমিক ভাবে টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য় ৭০০ মিলিমিটার চওড়া পাইপ ঢোকানো হয়েছিল সুড়ঙ্গপথে। সেটি ৭০ মিটার রাস্তা পৌঁছয়। এদিকে ধসের ফলে জড়ো হওয়া ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য যে মার্কিন খনন যন্ত্রটি আনা হয়েছি, সেটি কাজ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিপদের উপর বিপদ! আগে ধ্বংসাবশেষ সরানোর ছিল, এরপর সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে যায় ক্ষতিগ্রস্ত অগার মেশিনটি। সেটিকে বের করার প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা সময় গিয়েছে। এর পর মেশিনের সাহায্য় না নিয়ে সনাতনি প্রক্রিয়াতেই ধ্বংসাবশেষ সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১০-১৫ মিটার রাস্তা আপাতত হাতযন্ত্র দিয়েই সরানো হবে বলে জানানো হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, যন্ত্রের পক্ষে যে কাজ কঠিন, মানুষের পক্ষে হাতে সেই কাজ করা আরও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হবে। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ওই খনন যন্ত্রের ব্লেড এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সরানোর জন্য ইতিমধ্যেই ওই প্যাসেজে পৌঁছে গিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।

আরও পড়ুন:সন্তর্পণে সুড়ঙ্গে খোঁড়া হচ্ছে গর্ত, কবে অন্ধকার থেকে মুক্তি বন্দি শ্রমিকদের?

রবিবার হায়দরাবাদ থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে একটি প্লাজমা কাটার। ইতিমধ্যেই ডিফেন্স রিসার্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এবং মাদ্রাজ স্যাপারসের সেনা ইঞ্জিনিয়াররা যোগ দিয়েছেন অভিযানে। বিকেলের মধ্যে সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অগার মেশিনটিকে বেশ খানিকটা বের করা আনার গিয়েছে। বাকি আরও ৮.১৫ মিটারের কাজ।

এবার এই অবশিষ্টাংশ বের করে আনার জন্য যন্ত্রের বদলে ম্যানুয়াল ড্রিলিং পদ্ধতি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন করে কর্মী ওই স্টিলের পাইপের মধ্যে ঢুকে ড্রিলিংয়ের কাজ করবে, অন্যজন কপিকলের মাধ্যমে ধ্বংসাবশেষ বের করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অন্যান্য পদ্ধতির সম্ভাবনাও।

In Uttarkashi Tunnel Op, Manual Drilling Today As Broken Drill Removed

আপাতত পরিকল্পনা, আরও একটি টানেল তৈরি করে পাহাড়ের ধার ধরে খননকাজ শুরু করবেন উদ্ধারকর্মীরা, যে রাস্তা ধরে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো যাবে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে সেই কাজ। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই পথে শ্রমিকদের কাছাকাছি পৌঁছতে আরও অন্তত ১২-১৪ দিন সময় লাগতে পারে। সুড়ঙ্গের বারকোট-এন্ড থেকে রাস্তা প্রায় ৪৮৩ মিটারের। যেখান থেকে শেষ হয়েছে মাত্র ১০ মিটার। আর এই গতিতে গন্তব্য পৌঁছতে অন্তত ৪০ দিন সময় লাগার কথা।

ক্রমশ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে শ্রমিকদের। যদিও তাঁকা যে জায়গাটায় আটকে রয়েছে, সুড়ঙ্গের সেই জায়গাটি নিরাপদ রয়েছে। তাঁদের কাছে লাগাতার খাবার, জল, ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানো হচ্ছে ৬ ইঞ্চি পুরু একটি পাইপের মাধ্যমে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি ব্যবস্থাও তৈরি করা হয়েছে সুড়ঙ্গের মধ্যে। যার মাধ্য়মে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বন্দি শ্রমিকেরা।

In Uttarkashi Tunnel Op, Manual Drilling Today As Broken Drill Removed

চারপাশে সমস্ত প্রস্তুতি সারা। সুড়ঙ্গের বাইরে শ্রমিকদের জন্য় অপেক্ষা করছে ৪১টি অ্যাম্বুল্যান্স। উদ্ধারের পর যাতে করে সামনের একটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের। সেখানে ব্যাবস্থা করা হয়েছে ৪১টি বেডের, তার সঙ্গে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। উদ্ধার হওয়ার পরে শ্রমিকেরা যাতে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, তার সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগেই ফোন করে উদ্ধারকাজের অগ্রগতির ব্যপারে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির।

আরও পড়ুন:৭০ ঘণ্টা ধরে টানেলে আটকে ৪০ শ্রমিক! কেন বিতর্কিত উত্তরাখণ্ডের ৮৫৩ কোটির এই সুড়ঙ্গ?

সব মিলিয়ে অপেক্ষার পারদ চড়ছে। সব রকম চেষ্টা-কসরতের পরেও যেন বিধি বাম। গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশির সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নেমে আটকে পড়েন শ্রমিকদের ওই দলটি। ১৬ দিন কেটে গেলেও উদ্ধারকাজে আলো দেখতে পারেনি দেশ। কোনও না কোনও ভাবে সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। সত্যি কবে খোলা আকাশের মুখ দেখবেন সুড়ঙ্গে বন্দি ৪১ শ্রমিক, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।

More Articles