ফের করোনার বাড়াবাড়ি! মরণ কামড় এড়াতে দেশে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ হল, জেনে নিন
Covid situation in India : ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকেই এই ভ্যারিয়েন্টটি এসেছে। চিনের রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
২০২০, ২০২১ সালের পর একটু একটু করে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছিল। অলিম্পিক এল, মাত্র কয়েকদিন আগেই শেষ হল ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। ভারত জুড়ে উৎসব অনুষ্ঠান, পুজোপার্বণও ফের স্বাভাবিক গতি পেয়েছিল। কিন্তু ফের শিয়রে সমন! আবারও করোনার ভ্রুকুটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব। এবারও মূল উপলক্ষ্য সেই চিন।
২০১৯-এর শেষের দিকে এই চিন থেকেই করোনা ভাইরাস একটু একটু করে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তারপরের ছবিটা প্রায় সকলেরই জানা। সেখান থেকে একটু সুস্থ হওয়ার পথে এগিয়েছিল সব দেশই। ভারতও মৃত্যুমিছিল ভুলে ফের স্বাভবিক হচ্ছিল। সেই সময়ই ২০২২-এর শেষের দিকে চিনের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যায়। বিশেষ সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম বিএফ.৭ (BF.7)। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকেই এটি এসেছে। চিনের রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তবে এই খবর সামনে আসার পর ভারতেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বারবার বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা এখনও চলে যায়নি। তাই ফের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য জানিয়েছেন, লকডাউনের মতো পরিস্থিতি এখনই তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, চিনে টিকাকরণ কর্মসূচি কোনও কারণে ব্যাহত হয়। জনগণের মধ্যে ব্যাপক হারে করোনার টিকা দেওয়া হয়নি। তাই সেখানে এমন বাড়াবাড়ি। ভারতে সেরকম পরিস্থিতি নেই, তাই ভয় পাওয়ার এখনই কোনও কারণ নেই। তবে বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাজ্যগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে।
কী কী বিধিনিষেধ?
স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের বিমানবন্দরগুলিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যারা অন্য দেশ থেকে আসছেন, তাঁদের কোভিড টেস্ট, আরটিসিআর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমানবন্দরেও করোনার পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন না থাকলে এখনই বিদেশে যেতে বারণ করছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।
সেইসঙ্গে ফের সামনে এসেছে করোনার ভ্যাকসিন। আইএমএ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রক উভয়ই জানিয়েছে, যারা এখনও করোনার ভ্যাকসিন নেননি, তাঁরা যেন অতি শীঘ্রই সেটা নিয়ে নেন। বুস্টার ডোজ না নেওয়া থাকলে সেটাও নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। যত বেশি সংখ্যক মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন, তত করোনা সংক্রমণ ও তার ভয়াবহতা কমবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এতদিন করোনার উপদ্রব কম ছিল বলে উৎসব অনুষ্ঠানে বাধা ছিল না। কিন্তু এখন ফের সংক্রমণ বাড়ায় ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন বিয়ে, শীতের মেলা, ক্রিসমাসের মরসুম। তাই সেই কথা মাথায় রেখে ভিড় না করার কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে কোভিড আটকাতে সাধারণ নিয়মগুলি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। যেমন – মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, দূরত্ববিধি মেনে চলা ইত্যাদি। সামান্য শরীর খারাপ, জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনও দেশের ভেতর কিংবা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে প্রশাসন। সেরকম পরিস্থিতি এলে ফের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে এখনও সেরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। এদিকে পার্ক স্ট্রিটে ক্রিসমাসের উৎসব, বর্ষবরণ, এবং গঙ্গাসাগর মেলায় ব্যাপক ভিড়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সেখানে রাজ্য প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট গত ২০-২২ মাসে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেরকম মরণ কামড় দিতে পারেনি। তাই বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সুরক্ষাবিধি মেনে যাতায়াত করাই সবচেয়ে প্রয়োজন।