বাংলাদেশ ইস্যুতে কোন পথে এগোবে ভারত? হাসিনাকে নিয়ে যা জানালেন জয়শঙ্কর
S Jaishankar on Bangladesh Crisis: বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও শেখ হাসিনার ভারতে এসে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে দিল্লিতে এদিন সর্বদল বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গণঅভ্যুত্থানের জেরে কুর্সি হারিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার শুধু কুর্সি নন, বোন শেখ রেহানার সঙ্গে দেশও ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। রাতারাতি কপ্টারে করে উড়ে আসেন ভারতে। গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানবন্দরে ভেড়ে তাঁর কপ্টার। সেখান থেকে লন্ডনে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে ব্রিটেন। ফলে আপাতত ভারতেই রয়েছেন পড়শি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, দিল্লিতেই রয়েছেন হাসিনা। তাঁকে আপাতত কিছুটা সময় দিতে চায় ভারত সরকার। মানসিক ভাবে বেশ বিধ্বস্ত হাসিনা। এদিকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও শেখ হাসিনার ভারতে এসে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে দিল্লিতে এদিন সর্বদল বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। যেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও। অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, টি আর বালু, লালন সিং, রামগোপান যাদব, মিশা ভারতী, অরবিন্দ সাওয়ান্ত, সস্মিত পাত্র, সুপ্রিয়া সুলে, রামমোহন নাইড়ু-সহ অন্যান্য দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকেই জয়শঙ্কর জানান, হাসিনা এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাঁকে ধাতস্থ হতে সময় দিয়েছে ভারত। এ ছাড়া, বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বারবার জেগেছে বাংলাদেশ! অবাক করবে সে দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস
বিদেশমন্ত্রী এদিন বৈঠকে জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। সব সরকারের আমলেই সেই সম্পর্ক অটুট থেকেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪-এ বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, সেই সময় থেকেই একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেড়েছে মেরুকরণ।’ জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, গত জুন মাসে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। ক্রমশ হিংসাত্মক ঘটনা বাড়তে থাকে। সরকারি সম্পত্তিতে হামলা চলে, বাস ও রেল পরিষেবার ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। জুলাই জুড়েও চলে সেই সংঘর্ষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বারবার চেয়েছি কথাবার্তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসুক।’ বাংলাদেশে হিংসা এবং লুটপাটের একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন কূটনৈতিক স্তরে নয়াদিল্লি ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস এবং সে দেশে অবস্থিত চারটি উপদূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের সঙ্গেও।
Briefed an All-Party meeting in Parliament today about the ongoing developments in Bangladesh.
— Dr. S. Jaishankar (@DrSJaishankar) August 6, 2024
Appreciate the unanimous support and understanding that was extended. pic.twitter.com/tiitk5M5zn
বাংলাদেশে হিংসা শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েক হাজার ভারতীয় সে দেশ থেকে এ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। প্রথম দফায় দেশে ফেরা ভারতীয়দের বেশিরভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী। বিদেশমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে এবং পঠন পাঠনের জন্য বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় থাকেন। তাদের মধ্যে আট হাজার ইতিমধ্যেই দেশে ফিরে এসেছেন। বিদেশমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে ভারতীয়দের পরিস্থিতির দিকেও নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার, সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনা হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। ভারত প্রস্তুত আছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি তেমন গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘যে পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। সঠিক সময় এলে ভারত সরকার সঠিক পদক্ষেপ করবে।’’ এদিকে বৈঠকে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ হাজার ভারতীয় আছেন বলে বৈঠকে জানান জয়শঙ্কর।
সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তারপর ছাড়েন দেশও। আর এর পরেই বাংলাদেশের ক্ষমতা চলে যায় সেনাবাহিনীর হাতে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সেনার নেতৃত্বে সেখানে তদারকি সরকার গঠন করা হবে। পরবর্তী ভোট না হওয়া পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই বাংলাদেশ চালাবে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এর পরে বাংলাদেশের ক্ষমতা যেতে চলেছে কাদের হাতে। বিএনপি বা জামাতের মতো কট্টোরপন্থীরাই কি ফের বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে? সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের সেখানে সমস্যায় পড়তে হবে কিনা সে নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগের জায়গা রয়েছে। এমনিই কাল গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্দির, হিন্দু স্থাপত্যে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শরণার্থীরা ভারতে ভিড় জমালে তা নিয়েও নতুন করে সঙ্কটে পড়বে ভারত। বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সোমবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত ওই বৈঠকেও হাজির ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীরা। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিন্হা এবং গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-এর ডিরেক্টর তপন ডেকা। তবে আপাতত পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই কেন্দ্রের লক্ষ্য, জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
আরও পড়ুন: “পরবর্তী পাকিস্তান হবে বাংলাদেশ”, কেন বলছেন শেখ হাসিনার পুত্র জয়?
হাসিনা যে দিল্লিতেই রয়েছেন, তা এদিন সর্বদল বৈঠকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। সূত্রের খবর, আগামী ২-৩ দিন ভারতেই থাকতে পারেন শেখ হাসিনা। এরপর পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন তিনি। তবে ব্রিটেন আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় ভারতেই পাকাপাকিভাবে হাসিনা থেকে যেতে পারেন, এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জয়শঙ্কর জানান, ভারত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে শেখ হাসিনার সামান্য কথা হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নিতে চান তা ভাবনাচিন্তার জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন। তিনি পরিস্থিতির প্রাথমিকতা কাটিয়ে ধাতস্ত হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি জানান, এর পরে কোথায় যেতে চান এবং কবে যেতে চান, তা নিয়ে তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। এদিকে হাসিনাকে কোনও প্রকারের চাপ দেওয়া হবে না বলেও জানান জয়শংকর। এর জন্য তাঁকে কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। হাসিনার পরিকল্পনা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি। এদিকে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি চাইছেন স্থায়ী স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হোক বাংলাদেশ নিয়ে। শান্তি ফেরার কামনাও করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল। তবে শেষপর্যন্ত হাসিনা ভারতেই থেকে যাচ্ছেন, নাকি অন্য কোনও দেশই হতে চলেছে পাকাপাকি ঠিকানা, তা নিয়ে অস্পষ্টতা এখনও কাটেনি।