একটা দীর্ঘতম তো অন্যটা সমুদ্রের নিচে, জোড়া টুইন টানেল দিয়ে চিনকে টেক্কা দিতে পারবে কি ভারত?

Twin Undersea Tunnels: অতল সমুদ্রের তলা দিয়েই এবার ছুটবে বাস-গাড়ি। চলতি বছরের নভেম্বরেই উদ্বোধন হতে চলেছে মুম্বইয়ের সেই টুইন টানেলের।

অরুণাচলপ্রদেশের পর মুম্বই। পৃথিবীর দীর্ঘতম টুইন টানেলের নির্মাণ প্রায় শেষের পথে। প্রায় একইসঙ্গে আলোর মুখ দেখতে চলেছে দেশের প্রথম টানেল, যা যাবে সমুদ্রের তলা দিয়ে। চিনা আগ্রাসনের মুখের উপর বড়সড় জবাব হতে চলেছে অরুণাচলপ্রদেশের সেলার এই টুইন টানেল। যেভাবে একটু একটু করে ভারতের ভূখণ্ডের দিকে হাত বাড়াচ্ছে চিন, তা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর বড় অস্ত্র হতে চলেছে এই টুইন টানেল। অন্তত এমনটাই মনে করছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আর এবার জগৎসভায় ভারতকে আরও একটু উঁচুতে তুলে ধরবে বাণিজ্যনগরীর এই আন্ডার সি টুইন টানেল। এমনিতেও মুম্বইয়ের যানজট জগৎবিখ্যাত। সেই জ্য়ামে একবার কেউ ফাঁসলে পরিত্রাণের রাস্তা নেই। তবে সেই যানজটের ইতিহাসের মুখে দুয়ো দিয়ে বদলাতে চলেছে মুম্বইয়ের রাস্তাঘাটের ছবি। আর কয়েকটা মাসের অপেক্ষা শুধু। মুম্বই পেতে চলেছে ভারতের প্রথম আন্ডার সি টুইন টানেল।

হ্যাঁ, অতল সমুদ্রের তলা দিয়েই এবার ছুটবে বাস-গাড়ি। চলতি বছরের নভেম্বরেই উদ্বোধন হতে চলেছে সেই টুইন টানেলের। মুম্বই কোস্টাল রোডের এই প্রজেক্টের পিছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১২,৭২১ কোটি টাকা। সেই চিন থেকেই আনা হয়েছিল দৈত্যাকার টানেল খোদাই মেশিন। প্রায় ২ বছর আগে শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। সমুদ্রের তলা দিয়ে টানেল বানানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়িরা কাজ সহজ ছিল না। দরকার হয়েছিল পরিবেশগত ছাড়পত্র, লেগেছে বনবিভাগের অনুমতিও। তার জন্যেও কাজ শুরু করতে বেশ দেরি হয়। তাছাড়া প্রয়োজন ছিল ভূতাত্ত্বিক স্তরে নানা পরীক্ষানিরিক্ষারও। তার পরেই শুরু হয় খননের কাজ।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর পর কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণ বঙ্গবন্ধু টানেলে, কতটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ?

সব ঠিক থাকলে নভেম্বর থেকেই চালু হয়ে যেতে চলেছে এই টুইন টানেল। গিরগাঁওয়ের কাছে থাকছে টুইন টাওয়ারের একটি মুখ। সেখান থেকে আরব সাগরের তলা দিয়ে গিরগাঁও চৌপাট্টি ও মালাবার হিল হয়ে সুরঙ্গটি শেষ হবে ব্রিচ ক্যান্ডির কাছে প্রিয়দর্শিনী পার্কে। প্রায় ২.০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টুইন টানেলটি বানিয়েছে বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি)।

এ তো গেল একটি সুড়ঙ্গের কথা। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গটি শুরু হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ থেকে। পৌঁছবে বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্কে। এই সুড়ঙ্গটি প্রায় ১০.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিটি সুড়ঙ্গেরই ব্যাস ১২.১৯ মিটারের। থাকছে ৬টি ক্রসওয়াক, চারটি পথচারীদের জন্য এূং দু'টি গাড়িচালকদের জন্য। প্রতিটি সুড়ঙ্গেই থাকছে ৩.২ মিটার প্রশস্ত চ্যানেল। আর এই সুড়ঙ্গের সবচেয়ে গভীর অংশ হল মালাবার হিলের কাছে একটি অংশ।

এতদিন গিরিগাঁও থেকে ওরলি পৌঁছতে কম করে হলেও ৪৫ মিনিট সময় লাগত। তবে এই টুইন টানেল চালু হলে, সেই সময় কমিয়ে আনা যাবে মাত্র দশ মিনিটে। যাতায়াতের সময় কমাতে টানেলটি সিগন্যালমুক্ত করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই টুইন টাওয়ার চালু হলে মুম্বইয়ের রাস্তায় ট্র্যাফিকের চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বের দরবারে দেশকে উন্নততর হিসেবে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি অরুণাচলপ্রদেশে ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা টুইন টাওয়ার তৈরির কথা সামনে এনেছে ভারত সরকার। সেই সেলা টানেল তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছেও কাজ। খুব শিগগরিই সেই উচ্চতর সুড়ঙ্গ তৈরি হয়ে যাবে বলেও জানা গিয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিন সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছুটা অংশ নিজেদের বলে দাবি করেছে, যা এতদিন ধরে ভারতের অংশ বলেই পরিচিত। কিছুদিন আগেই চিনের তরফে একটি মানচিত্রের সংশোধনী সামনে আনা হয়, যেখানে ভারতের অন্তর্গত বেশ কিছু জায়গাকেই নিজেদের বলে দাবি করে চিন। আর সে নিয়েই শুরু হয় টানাপড়েন। চিনের এই দাবি ঘিরে প্রমাদ গুনেছে নয়াদিল্লি। অরুণাচল নিয়ে বেড়েছে সতর্কতা। আর এই সেলা টুইন টাওয়ার ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য খুবই কাজের হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সেলাতে এই সুড়ঙ্গ তৈরি হয়ে গেলে চিনের তাওয়াংয়ের সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকাগুলিতে সেনা ও যুদ্ধসরঞ্জাম মোতায়েন করা যাবে। লাদাখের পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেছে ভারত। তাই অরুণাচল নিয়ে গোড়া থেকেই সাবধান হতে চাইছে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুন:মানচিত্রে গা-জোয়ারি, উলটে ভারতকেই শান্ত থাকতে বলছে চিন?

আশা করা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকেই শেষ করে ফেলা যাবে এই সেলার টুইন টানেল বানানোর কাজ। বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের কাঁধে বর্তেছে এই সুড়ঙ্গ বানানোর দায়িত্ব। ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল সেলা টানেল তৈরির ঘোষণা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। বালিপাড়া থেকে চারদুয়ার হয়ে তাওয়াং পর্যন্ত সড়ক প্রকল্পের অংশ হতে চলেছে সেলার এই টানেল। এই টানেলের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৭০০ কোটি টারা বরাদ্দ হয়। সেলার এই টানেল তৈরি হলে ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হবে। বিশেষত ড্রাগন সেনাকে প্রতিহত করার কাজ খানিকটা সহজ হবে বলেই মনে করছেন ভারতের কূটনৈতির বিশেষজ্ঞেরা। সব মিলিয়ে দু-দুটি যমজ সুড়ঙ্গের জোড় যে ভারতকে যে বেশ খানিকটা বাহুবলী করবেই, তাতে কিন্তু সন্দেহ নেই। 

 

More Articles