গতির দৌড়ে পিছনে ফেলবে হালফিলের বন্দে ভারতকেও! কোন রুটে ছুটবে নয়া বুলেট ট্রেন?

New Bullet Train : জোরকদমে চলছে বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কাজ, তৈরি হচ্ছে জলের নিচে অভিনব টানেল! যাতায়াত ব্যবস্থায় কতটা প্রভাব ফেলবে ট্রেনের গতি?

একে বন্দে ভারতে রক্ষে ছিল না এতদিন, তায় আবার বুলেট দোসর! এমনিতেই চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলায় কেন্দ্র তথা বিজেপির ফেলো কড়ি মাখো ভোটের নীতি তুঙ্গে। সেই নীতিতে সওয়ার হয়ে একের পর এক বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চাকা গড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। এবার সেই তালিকাতেই নতুন সংযোজন হতে চলেছে এই অভিনব বুলেট ট্রেন। বুলেট শব্দটার মধ্যেই কেমন একটা প্রচ্ছন্ন গতির সূত্র লুকিয়ে রয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে যা ঝাঁঝরা করে দিতে পারে সব। বুলেট ট্রেনের গতিও অবশ্য এর থেকে ব্যতিক্রম নয় কিছুই। ফলে এ যাবৎ ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহেই বুলেট ট্রেন প্রকল্প একটি একটি গেম চেঞ্জার হতে চলেছে যে তা বলাই বাহুল্য।

ভারতীয় রেল মানেই আস্ত একটা যুগের অবয়ব। ওই লোহার চাকার ঘর্ষণে যে কত শত ইতিহাস জমা আছে, তার হিসেব কষা নেহাতই ছেলেমানুষী। রেলপথের আবিস্কারের হাত ধরে বদলে গিয়েছিল গোটা সমাজটা। বিবর্তনের ইতিহাসে তাই ভারতীয় রেলের জায়গাটা চিরকালই বেশ পাকা। যদিও সময় বদলেছে। যাতায়াত ব্যবস্থাতেও এসেছে অদলবদল। আজকালকার ব্যস্ত সময়কে পথে করে অনেকেই সড়কপথ অথবা আকাশপথে ভ্রমণকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। তবে এসবের পরেও ট্রেনের জায়গাটা টলে না এক রত্তিও। মুহূর্তের মধ্যে দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট ফুরিয়ে যাওয়ার হিসেব দেখলে সে কথা ভালোই আঁচ করা যায়।

আরও পড়ুন - আরও তিনটি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পাচ্ছে বাংলা, কোন রুটে চলবে ট্রেন?

সময়ের সঙ্গে রেল ব্যবস্থাতেও বদল এসেছে। যাত্রী সুবিধার কথা মাথায় রেখে এসেছে নয়া প্রযুক্তি। অফলাইনের একচেটিয়া জগতে থাবা বসিয়েছে হালফিলের অনলাইন মাধ্যম। ভারতীয় রেলও প্রয়োজনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে। প্রসঙ্গত জেনে রাখা দরকার, ভারতের মতো জনবহুল দেশে রেলপথই হল সুলভ ও সহজতম পরিবহন মাধ্যম। মাঝে করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত থমকে গিয়েছিল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতেও। তারপর আবার পরিস্থিতির বদল হওয়ায় চালু হয় ট্রেন। পাশাপাশি এ কথা জেনে রাখা দরকার, ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের দেশে মোট ৭,৩৪৯টি রেল স্টেশন রয়েছে।

দেশের মানুষদের কাছে যেমন রেল পরিষেবা গণ পরিবহনের লাইফ লাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিক সেই রকমই ভারতীয় রেলের তরফ থেকেও একের পর এক উপহার দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকদের। বন্দে ভারত তার মধ্যে অন্যতম, এবার সেই বন্দে ভারতের অভিনবত্বকে ছাপিয়ে দেশ দাপাতে আসছে নয়া বুলেট ট্রেন।

জানা গিয়েছে, ভারত ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে এ দেশে পথ চল শুরু করবে বুলেট ট্রেন। বুলেট ট্রেনের এই গতির মূল উদ্দেশ্য হল দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যাতায়াতের মোট সময় আরও কমিয়ে আনা। বুলেট ট্রেন চালু হলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিমেষেই পৌঁছে যেতে পারবেন যাত্রীরা। ভারতে প্রথম বুলেট ট্রেনের চাকা গড়াবে মুম্বাই এবং আহমেদাবাদ শহরের মধ্যে। সাত ঘণ্টার পথ অতিক্রম করা যাবে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই। এই ট্রেন চালু হলে যে তা আদতে গোটা রেল পরিষেবাকে বদলে দেবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন - আসছে স্লিপার বন্দে ভারত! কেন পশ্চিমবঙ্গেই বন্দে ভারত তৈরির সিদ্ধান্ত রেলের?

এই অভিনব প্রকল্পটির বাস্তবায়নের খরচও কিছু কম নয়। যত দূর জানা গিয়েছে, প্রায় ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে এই বুলেট ট্রেন প্রকল্পে। তবে এই প্রকল্পের সবচেয়ে অবাক করা দিক হল, প্রস্তাবিত আন্ডারওয়াটার টানেল যা থানে ক্রিকের নীচে তৈরি করা হবে। এই টানেলটি মুম্বইকে ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করবে। ৭ কিলোমিটার রেললাইন থাকবে সমুদ্রের তলায়। থাকবে ২১ কিলোমিটার টানেল, যা সমুদ্রের প্রায় ১৬ মিটার নিচে তৈরি হবে। আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর তরফে সম্প্রতি এই মুম্বাই-আমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্পের সমুদ্রের তোলার টানেল নির্মাণের কাজের আর্থিক বিড জমা পড়ে গিয়েছ।

যাতায়াতের সময় কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই অভিনব বুলেট ট্রেনের জন্য নির্মিত টানেলটি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশের উপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, এটি শহর দুটির মধ্যে সড়কপথে ট্র্যাফিক হ্রাস করতেও বিশেষ ভাবে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আশা করা গিয়েছে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ করা হবে এই অভিনব প্রকল্পের সমস্ত কাজ। তার পর কবে থেকে চাকা গড়াবে সেই নিয়ে বিষয় এখনও কোনও কথা হয়নি, তবে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই মানুষের আশার পারদ যে এখন তুঙ্গে তা তরজা দেখে ভালোই বোঝা যাচ্ছে।

More Articles