গীতা, ইন্দিরা, মমতা...|| সংসদের অন্দরে যে মেয়েদের পদধ্বনি দামামা হয়ে বেজেছে
ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রধান দুই ধারা, অহিংস অসহযোগ ধারা এবং সশস্ত্র বিপ্লববাদী ধারা - এই দুটিতেই কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। গান্ধীজী যে ব্রিটিশবিরোধী গণসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, সেখানে ঘরের আগল ভেঙে গ্রামীণ ভারতের নারী সমাজের অংশগ্রহণ, বিশ শতকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে ভারতের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।
অপরপক্ষে, সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনেও যেভাবে নারী সমাজ প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিল , তা নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি প্রারম্ভিক কাজ হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে সামর্থ্য হয়েছিল। জাতীয় আন্দোলনের একটি পর্যায়ে সমাজের নিচু তলার মেয়েদের পাশাপাশি ,সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা যেভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, তা ভারতের পরবর্তী আর্থ-সামাজিক ,রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গতিপথকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।
স্বাধীনতার পর আমরা দেখতে পাই, জাতীয় আন্দোলনে আমাদের এই রাজ্যে নারী সমাজের যে অংশ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে থেকে যান। আবার একটা অংশ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে না থেকেও( যেমন সাধনা ভট্টাচার্য), নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের দিকটিকে আরো প্রসারিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। জাতীয় আন্দোলনের অহিংস অসহযোগ পন্থায় যে সমস্ত মেয়েরা আমাদের এই বাংলা থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন ,তাঁদের একটা বড় অংশ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশ নেন। এমনকী বিভাগ পরবর্তীকালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের নানা রাজনৈতিক সামাজিক কর্মকাণ্ডে এই সমস্ত মেয়েরা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয় বিপ্লবী লীলা রায়, বরিশালের মাসীমা বলে খ্যাত মনোরমা বসু, কমিউনিস্টরা নেত্রী জুঁইফুল রায়, নিবেদিতা নাগ, প্রমুখের কথা ।আবার তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লার পত্নী মাকসুদা খাতুন, যেভাবে গৃহের নিভৃত অঙ্গন থেকে রাঢ় বাংলায়, বিশেষ করে বর্ধমান জেলায় ,মেয়েদের আর্থ,সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যদিও মাকসুদা খাতুনের মত বহু নারী, যাঁরা প্রথাগত রাজনৈতিক অঙ্গনে সেভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করেননি, অথচ তেতাল্লিশের মন্বন্তর থেকে শুরু করে, পরবর্তী সময়ে অবরোধবাসিনী মেয়েদের অর্গলমুক্ত করে, তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, তাঁদের ঘিরে কিন্তু গবেষণা, আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত অবহেলিত থেকেছে।
সংসদীয় রাজনীতিতে বাংলা থেকে যে সমস্ত মেয়েরা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ,তাঁদের মধ্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয় রেনুকা রায় ,ফুলরেণু গুহ , রেনু চক্রবর্তী ,লাবণ্যপ্রভা ঘোষ ,মণিকুন্তলা সেন, গীতা মুখোপাধ্যায় ,আভা মাইতি, মায়া বন্দ্যোপাধ্যায়, পূরবী মুখোপাধ্যায়,কণক মুখোপাধ্যায় , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতাজ সংঘমিতা ,ইন্দুমতী ভট্টাচার্য, বিভা ঘোষগোস্বামী প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের কথা। অত্যন্ত অভিজাত পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যক্তিত্ব ছিলেন রেনুকা রায় ,ফুলরেণু গুহ, রেনু চক্রবর্তীর মতো মানুষেরা। অথচ পারিবারিক আভিজাত্যকে অতিক্রম করে, সাধারণ মানুষের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে সদ্য স্বাধীন ভারতের এই সমস্ত ব্যক্তিরা যে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন, তার চর্চা আজ আমাদের বিস্মিত করে। যদিও এই সমস্ত ব্যক্তিত্বদের প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ পরবর্তীকালে রচনার জন্য কোন গবেষকই সেভাবে সচেষ্ট হননি।
রেনুকা রায় ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি হিন্দু কোড বিলের সমর্থনে সেই সময়ের রাজনীতির যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে ,নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপটি কে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে সমাজের বুকে খোদাই করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। হিন্দু কোড বিল সমর্থনে রেনুকা রায়ের যে রাজনৈতিক সংগ্রাম, সেই সংগ্রামকে একেবারে গুন্ডা পাঠিয়ে নেত্রীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা একাধিকবার বহুবার করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সরোজিনী নাইডু যিনি জন্মসূত্রে বাঙালি ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে আক্ষরিক অর্থে কলকাতা ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউটের হিন্দু কোড বিলের সমর্থনে কর্মকাণ্ডকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য শ্যামাপ্রসাদের পাঠানো গুন্ডাদের মোকাবিলা করেছিলেন রেণুকা রায়।
আজকের পুরুলিয়ার আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন লাবণ্যপ্রভা ঘোষ। আদিবাসী রমণীদের আর্থসামাজিক উন্নতির প্রথম এবং প্রধান ধাপ যে তাঁদের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা ,পানীয় জলের সমস্যা সমাধান করা - এই জায়গাগুলিতে প্রথম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ,পুরুলিয়ার পশ্চিমবঙ্গ অন্তর্ভুক্তির সময়কাল থেকেই ,এক নতুন পর্যায়ের সামাজিক আন্দোলন সেখানে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন লাবণ্যপ্রভা।
জলস্রোতের মধ্যে ভাসতে থাকা একাংশের বামপন্থী লোকজনেরা লাবণ্যপ্রভা ঘোষকে ঘিরে আজ কিছু না জানলেও ,প্রবীণ বামপন্থী নেতা বিমান বসু তাঁর একাধিক সামাজিক বক্তৃতায় মানভূম অঞ্চলের মেয়েদের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য লাবণ্যপ্রভা ঘোষের ঐতিহাসিক অবদানের কথা বারবার অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন।
আমাদের বাঙালি সমাজের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে ফুলরেণু গুহ এক অপার বিস্ময়। সততা মূর্ত প্রতীক ফুলরেণু কে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতার বৈষম্যের এক জ্বলন্ত শিকার বলে উল্লেখ করতে পারা যায় ।ফুলরেণুকে পন্ডিত জহরলাল নেহেরু তাঁর মন্ত্রিসভায় শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলে।ন সেই সময় তিনি সংসদের কোনো পক্ষেরই সদস্য ছিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসের ভেতরে সংসদের কোন কক্ষে সদস্য তাঁকে হতে হতো। অসামান্য দক্ষ পরিশ্রমী , মানবিক এবং মেরুদন্ড সম্পন্ন ফুলরেণুকে কিন্তু সেই সময়ের শাসক পরিবৃত্তের পুরুষতান্ত্রিকতার শিকার হতে হয়।
কংগ্রেসের তখন রাজ্যসভায় যে কাউকে, যেকোনো সময়ে জিতিয়ে আনার মতো আইনসভায় সদস্যসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, মূলত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন কংগ্রেস নেতারা ফুলরেণুকে তাঁর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময়ের ভেতরে আইনসভা কোনো কক্ষের সদস্য হওয়ার সুযোগ দেননি ।ফলে ছয় মাস পর স্বাভাবিকভাবেই ফুলরেণুর মন্ত্রীত্ব চলে যায় ।
সেই সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব পুরুষতান্ত্রিকতার যে অমানবিক আচরণ করেছিল ,তা হয়তো পরবর্তীকালে কিছুটা পাপস্খালনের তাগিদেই ইন্দিরা গান্ধীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর যে লোকসভা নির্বাচন হয় ,সেই নির্বাচনে কংগ্রেস দল তাঁকে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে।তিনি জেতেন।
সংসদীয় রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটিকে জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে রেনু চক্রবর্তী, আভা মাইতি, গীতা মুখার্জি থেকে শুরু করে, জয়রাম জয়লালিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মার্গারেট আলফা আলফা রাজেন্দ্র কুমারী বাজপায়ী -- এই সমস্ত ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মানুষের মনে যে আশা আকাঙ্খার জায়গা তৈরি হয়েছিল, তাকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সেই সময়ের মহিলা রাজনীতিকরা সংসদের ভেতরে ও বাইরে কতখানি সুযোগ পেয়েছেন ,তা ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভেতরে যথেষ্ট পরস্পর বিরোধী অভিমত আছে। শ্রীমতি গান্ধী আমলেই (১৯৮০) লোকসভার সদস্যা হয়েছিলেন বামপন্থী গীতা মুখোপাধ্যায় ।তার আগে তিনি দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যা ছিলেন।
গীতা মুখোপাধ্যায় লোকসভার সদস্য হওয়ার পর, নারীর অধিকারের প্রশ্নে লোকসভায় যেভাবে শ্রীমতি গান্ধীর সরকারের বিভিন্ন ভূমিকা ,বিশেষ করে কংগ্রেস দলের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন রাজ্য সরকার গুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।সেদিনের পরিস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, সেই সময় কালে একজন নারী রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে থাকলেও, নারীর আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলি কতটা কম গুরুত্ব প্রশাসনের কাছে পেয়েছে। বিশেষ করে এই প্রসঙ্গে উঠে আসে রাজস্থানের দেওরালা গ্রামে রূপ কানোয়ার নামক এক মহিলাকে 'সতী' মহিমায় মহিমান্বিত করে,পুড়িয়ে মারার ঘটনা ভেতর দিয়ে।
সংসদের ভেতরে ও বাইরে সেদিন গীতা মুখোপাধ্যায় যেভাবে রূপ কানোয়ারের হত্যাকাণ্ড ঘিড়ে সোচ্চার হয়েছিলেন, সেই ঘটনাক্রম ইন্দিরা গান্ধীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনীতিকেও যথেষ্ট বিব্রত করেছিল। ইন্দিরা চেষ্টা করেছিলেন রুপ কানোয়ারের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন একজন মহিলা, তখন এক সদ্য বিধবাকে, ধর্মীয় আবরণ দিয়ে ,তাঁর সম্পত্তি দখল করার তাগিদে, পুড়িয়ে মারার ঘটনার মতো বীভৎসতাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে তুলে ধরে ,ভারতের মেয়েদের, বিশেষ করে গ্রামীণ মেয়েদের সামাজিক অবস্থানের ভয়াবহ চিত্র সেদিন তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন গীতা মুখোপাধ্যায়।
শ্রীমতী গান্ধীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সংসদে প্রবেশ। এই সময়কালে মমতাকে সংসদীয় রীতি-নীতি থেকে শুরু করে, সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ কে জারি রাখতে গেলে কিভাবে সংগ্রামের ধারাকে তীক্ষ্ণ পড়তে হয়, সে সম্পর্কে কার্যত ছাত্রীর মত পরামর্শ দিতেন গীতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর নিজের দলের পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে অন্তর্দলীয় সংগ্রাম মমতাকে করতে হতো। মমতার কোন পারিবারিক আভিজাত্য ছিল না। অত্যন্ত সাদামাটা, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষ তিনি। ফলে কংগ্রেস রাজনীতির আভিজাত্য প্রীতির মোকাবিলা করে, কিভাবে গরিব মানুষের প্রতিনিধিত্ব কে সামনে এগিয়ে আনতে হবে, সেই জায়গাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মমতার লড়াইয়ের ধারাকে তীক্ষ্ণ করে তোলবার পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে গীতা মুখোপাধ্যায়ের যে ভূমিকা ,অনুমান হয় মমতাও বিস্মৃত হননি।
সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে নারী প্রতিনিধিত্ব কীভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করেছিল, সেই আলোচনা না করলে বিষয়টি পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে থাকবে । তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র, তাঁর দলের ( সিপিআই) সেই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে জরুরি অবস্থা সমর্থক ছিলেন । সিদ্ধার্থশংকর রায়ের মন্ত্রিসভার ও সমর্থক ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময় ,চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অধিকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, বিশিষ্ট সাংবাদিক কল্পতরু সেনগুপ্তের একটি লেখা, যেখানে শাসকের সমালোচনা ছিল, সেই লেখাটা ঘিরে বিধানসভায় অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনেন ইলা মিত্র । সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেই প্রস্তাবকে অনুমোদন করিয়ে সাংবাদিক কল্পতরু সেনগুপ্তকে বিধানসভার ভেতরে ডেকে এনে, তাঁকে চরমভাবে অপমেনের মূল পরিকল্পনাটি ছিল কিন্তু ইলা মিত্রেরই। এই ভাবনা থেকে ইলা মিত্রকে বিরত করার জন্য গীতা মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত স্তরে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় সিপিআই দলের রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী ,দলের অন্দরে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করা গীতা মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শকে আদৌ গ্রহণ করেননি জরুরি অবস্থার সমর্থক ইলা মিত্র।
সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কোন কোন ক্ষেত্রে সংসদীয় শিষ্টাচার কে কিভাবে তছনছ করে দিতে পারে ,তা বোঝার জন্য প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের সময় কালে গোর্খা লীগের সদস্যা রেণুলীণা সুব্বা ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে .তৎকালীন অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুর হাবীবউল্লাহ, অসংসদীয় কাজের জন্য রেণুলীণা কে সাময়িক বহিষ্কার করবার পর ,কেবলমাত্র প্রচারমাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ,যেভাবে বিধানসভার গেট বেয়ে উঠে ,একটা অরাজগতা তৈরি করতে চেয়ে ছিলেন তৎকালীন বিধায়িকা, তা সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে আদৌ কোনো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করতে পারেনি।