৫০০০ গাড়ি চুরি, খুন! তাক লাগাবে ভারতের সবচেয়ে বড় গাড়ি চোরের জীবনযাপন
অভিনব কায়দায় পুলিশকে বোকা বানিয়ে নাকের ডগা দিয়ে গাড়ি চুরি করে পালাতেন অনিল। পুলিশকে নানা কথায় ব্যস্ত রাখতে নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে রাখতেন।
সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি করেছেন ২৪ বছর ধরে। শুধু গাড়ি চুরি নয় বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা এবং পশু পাচারেও সিদ্ধহস্ত তিনি। দুই যুগ পরে সোমবার দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার ভারতের সবচেয়ে বড়ো চোর। পুলিশ জানিয়েছে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম অনিল চৌহান। গত সাত বছর ধরে নানাভাবে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অনিল কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে ভারতের চোর সম্রাট।
কে অনিল চৌহান?
৫২ বছর বয়সী অনিলের কীর্তি কোনও দিকেই কম নয়। দিল্লির খানপুর এলাকায় বসবাসকারী অনিল আদতে অসমের তেজপুরের অধিবাসী। সেখানেই দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। অনিলের বাবা দেশরাজ চৌহান ছিলেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তবে এক জায়গায় খুব বেশিদিন মন টেকে না তাঁর। তাই দিল্লি, মুম্বই সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জায়গায় বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। স্কুল উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই অনিল বুঝতে পেরেছিলেন গাড়ি চালানো শিখতে পারলে হাতে কাঁচা টাকার অভাব হবে না, তাই তাড়াতাড়িই গাড়ি চালানো শিখে নেন অনিল। নকল চাবি ব্যবহার করে কীভাবে গাড়ির লক খোলা যায় তাও বেশ ভালো জানা ছিল অনিলের। তবে তাঁর জীবনযাপনের কথা শুনলে অবাক হতে হয়। সবসময় দামি বিলাসবহুল গাড়ি, পরণে দামি ব্র্যান্ডের জামা, হাতে রোলেক্স ঘড়ি আর সঙ্গে গড়গড় করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারার দক্ষতা ছিল অনিলের। ধীরে ধীরেই অপরাধ জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তাঁর। তবে চুরি বিদ্যার পাশাপাশি দিল্লিতে থাকাকালীন অটোও চালাতেন অনিল।
আরও পড়ুন- মায়ের গলা কেটে গীতা পাঠ, ৭৭ পাতার সুইসাইড নোট! বেকার যুবকের সিদ্ধান্তে শিউরে উঠছে দেশ
১৯৯৫ সাল থেকে গাড়ি চুরির কাজে নামেন অনিল। বেশ কিছু সময় অসম সরকারের প্রথম সারির কন্ট্রাকটরের কাজও করতেন তিনি। কিন্তু একসময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হানায় বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর বাড়ি সহ সমস্ত সম্পত্তি। নিলামে বিক্রি হয়ে যায় তাঁর সম্পত্তি। তখন থেকেই ফের চুরির পথে নামেন অনিল। দেশজুড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি করেছেন এই সিদ্ধহস্ত চোর। নব্বইয়ের দশকে সবচেয়ে বেশি গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিনব কায়দায় পুলিশকে বোকা বানিয়ে নাকের ডগা দিয়ে গাড়ি চুরি করে পালাতেন অনিল। পুলিশকে নানা কথায় ব্যস্ত রাখতে নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে রাখতেন। আর এই সুযোগেই গাড়ি চুরি করে চম্পট দিতেন অনিল। চুরি করা গাড়িগুলি জম্মু কাশ্মীর বা সীমান্ত পেরিয়ে নেপালে বেচে দিতেন তিনি।
অতীতেও বহুবার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পুরেছে, এমনকি জেলে পাঁচ বছরের সাজাও কাটিয়েছেন অনিল। ১৮০ টিরও বেশি ক্রিমিনাল কেসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনিল চৌহানের নাম। চুরির ঘটনা চাপতে একাধিক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে খুনও করেছেন তিনি। ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চল থেকে গণ্ডারের শৃঙ্গ চোরাচালানের ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়েছে অনিলের নাম। এমনকি উত্তরপ্রদেশ থেকে অস্ত্র এনে উত্তর পূর্ব ভারতের বহু নিষিদ্ধ সংস্থাকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে অনিলের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে অসম পুলিশের হাতেও গ্রেফতার হন অনিল। ২০১৮ সালে ফের গুয়াহাটি পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর ছয় মাসের জন্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু কথায় আছে, স্বভাব যায় না ম’লে। ফের চুরি করতে শুরু করেন অনিল। কিছুতেই বাগে আনা যায়নি তাঁকে। পুলিশের মতে, এই অভিযুক্তই সম্ভবত ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গাড়ি চোর। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অনিলের পরিবার বলতে রয়েছে তাঁর তিন স্ত্রী এবং সাত সন্তান!
আরও পড়ুন- মায়ের গলা কেটে গীতা পাঠ, ৭৭ পাতার সুইসাইড নোট! বেকার যুবকের সিদ্ধান্তে শিউরে উঠছে দেশ
কীভাবে এবার ধরা পড়লেন অনিল?
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি হাইকমিশনার শ্বেতা চৌহানের কথায়, মধ্য ভারতের বিভিন্ন এলাকা সহ দিল্লিতে ইদানিং বেআইনি অস্ত্রের কারবার বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ মাঝে মধ্যেই এই এলাকাগুলিতে তল্লাশি চালাত। পুলিশের কাছে খবর ছিল, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড বেআইনি অস্ত্রের কারবারি অনিল আসতে পারেন। সেইমতো মধ্য দিল্লির দেশবন্ধু রোড থানার পুলিশ বিশেষ দলবল নিয়ে তৈরি ছিল। হানা দিয়ে গত ২৩ অগাস্ট অনিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার সময় অনিলের সঙ্গে পাঁচটি পিস্তল, সাত রাউন্ড কার্তুজ এবং চুরি করা একটি গাড়িও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, চোরাই গাড়ি করে অস্ত্র সরবরাহ করতেই দিল্লিতে এসেছিলেন অনিল। ২০০৫ সালে দিল্লি পুলিশ যখন গ্রেফতার করে অনিলকে সেসময় প্রায় ৮০ টি গাড়ি চুরির মামলার নিষ্পত্তি করে পুলিশ। ৩৪ টি গাড়িও উদ্ধার করা হয় তাঁর কাছ থেকে। সুতরাং অনিল যে কোনও ছোট খাটো চোর নন তা জলের মতো পরিষ্কার এবং গ্রেফতার করে যে মোস্ট ওয়ান্টেড চোরের মানসিকতা পরিবর্তন করা যাবে তেমনও নয়। কিন্তু এভাবে আইনের বাঁধনে কতদিন আটকে রাখা যাবে অনিলকে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।