ভারতীয় ক্রিকেটের 'বিরাট' ভরসা! সচিনকে ছাপিয়ে যেতে বেশি দেরি নেই কোহলির!

Inscript Debate: এ বছর অগাস্ট মাসে কোহলির একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই চোদ্দ বছরে ২৫৪ টি ম্যাচে মোট রানের পরিমাণ ১২১৬৯।

সচিন নাকি বিরাট, কে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান! এই তরজার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মুখে ছাই দিতে পারেন স্বয়ং বিরাটই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই বিরাট নিজেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন বহুবার। ঠিক যেমন সচিনের সঙ্গে সুনীল গাভাসকারের তুলনা উঠেছে একাধিক সময়ে। এই বিতর্কের পক্ষে বা বিপক্ষের সব যুক্তিই তাঁদের কথা দিয়েই খণ্ডন করে দেওয়া সম্ভব। ২০১৬ সালে একটি সাক্ষাৎকারে বিরাটকে সচিনের সঙ্গে তুলনার কথা টেনে প্রশ্ন করা হলে বিরাট বলেছিলেন, “সত্যি বলতে আমি খুবই বিব্রত বোধ করি এই প্রশ্নের উত্তরে দিতে। আমার মতে, সচিনকে কারও সঙ্গে তুলনা করা যায়না। আমরা দু’জনেই ভিন্ন ধরনের ক্রিকেটার। তিনি জন্মগত প্রতিভাশালী এবং ২৪ বছর ধরে একইভাবে লাগাতার ক্রিকেট খেলা মোটেও মজার বিষয় নয়। আমি সব সময় সচিন তেন্ডুলকারকে দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি, ওঁর খেলা দেখেই নিজে তৈরি হয়েছি। তাই এই তুলনার কোনও গুরুত্ব নেই আমার কাছে। ১০০ সেঞ্চুরি করাও মুখের কথা নয় তাই এসব ভিত্তিহীন।”

এ প্রসঙ্গে সচিনের কী মতামত, তাও ক্রিকেটপ্রেমীদের সকলেরই জানা। অনেকের মতোই বলিউড তারকা সলমান খান সচিনকে প্রশ্ন করেছিলেন, কে তাঁর রেকর্ড ভাঙতে পারেন। প্রশ্নের উত্তরে লিটল মাস্টার একেবারেই উত্তর দেন ভারতীয় দলের দুই ক্রিকেটার বিরাট এবং রোহিত এই কাজ করতে পারেন। স্বয়ং সচিন যখন এই উত্তর দিয়েছেন তখন তর্ক বিতর্কের কোনও জায়গাই থাকে না।

এ বছর অগাস্ট মাসে কোহলির একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই চোদ্দ বছরে ২৫৪ টি ম্যাচে মোট রানের পরিমাণ ১২১৬৯। এর মধ্যে ৪৩ টি শতরান এবং ৬২ টি অর্ধশতরান রয়েছে বিরাটের ঝুলিতে। ব্যাটিং গড় ৫৯.০৭। স্ট্রাইক রেট ৯৩.১৭। অন্যদিকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সচিন ৪৬৩ টি ইনিংসে ১৮৪২৬ রান করেছেন। ব্যাটিং গড় ৪৪.৮৩ এবং স্ট্রাইক রেট ৮৬.২৪। ৪৯ টি সেঞ্চুরি এবং ৯৬ টি অর্ধশতরান রয়েছে লিটল মাস্টারের কেরিয়ারে। সুতরাং এ থেকে স্পষ্ট যে বিরাট ব্যাটিং গড় এবং স্ট্রাইক রেটে সচিনের থেকে এগিয়ে থাকলেও বাকি সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে সচিন তেন্ডুলকার। তবে কোহলি যে মাপের ক্রিকেটার তাতে একজন ক্রিকেটেপ্রেমী হিসেবে আশা করাই যায় যে তাঁর ৪০০ তম ম্যাচের আগেই সচিনের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন বিরাট। পাশাপাশি একদিনের ক্রিকেটে কোহলি রান তাড়া করতে নেমে কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারেন তা সকলেরই প্রায় জানা। সেদিক থেকে বিচার করলে সচিনকে টেক্কা দেবেন বিরাট।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডেবিউ করার প্রায় তিন বছর পর থেকে বিরাট কোহলি টেস্ট দলের সুযোগ পান। এখনও পর্যন্ত ১০২ টি টেস্ট ম্যাচে বিরাটের মোট রান ৮০৭৪। ব্যাটিং গড় ৪৯.৫৩। স্ট্রাইক রেট ৫৫.৬৯। মোট ২৭ টি শতরান এবং ২৮ টি অর্ধশতরান করেছেন এখনও পর্যন্ত। অন্যদিকে সচিন ২০০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মোট ১৫ হাজার ৯২১ রান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ৫১ টি শত রান এবং ৬৮টি অর্ধশত রান রয়েছে তেন্ডুলকরের ঝুলিতে। ব্যাটিং গড়ও ৫৩.৭৯ এবং স্ট্রাইক রেট ৫৪.০৮। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৫ হাজারেরও বেশি রান সচিনের কেরিয়ারের অন্যতম অসামান্য কীর্তি। তাই এই নিরিখে বিচার করলে বিরাট অনেকখানি পিছিয়ে তাঁর আদর্শ সচিনের তুলনায়।

দু’জনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কেরিয়ারের তুলনা করা অনর্থক। সচিন দেশের হয়ে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর বিরাট এই ফরম্যাটের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী। এমনকী অধিনায়ক হিসেবেও বিরাট বহু রেকর্ড ছুঁয়েছেন, যা সচিনের নিরিখে বিচার করলে এগিয়ে রাখতে হবে বিরাটকেই।

তাছাড়া সচিন তেন্ডুলকার প্রায় ২৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৩৪ হাজারেরও বেশি রান করেছেন, যা সর্বকালের রেকর্ড। তবে বিরাটও যে সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন তা বলছে তাঁর রান সংখ্যাই। ১৪ বছরের ক্রিকেট জীবনে মাত্র ৪৭৯ টি ম্যাচে চব্বিশ হাজারেরও বেশি রান রয়েছে বিরাটের। ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় বিরাটের আগে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সকলেই ৫০০-র বেশি ম্যাচ খেলে তবে ২৫ হাজারের রানের কোটা পার করেছেন। সেই তালিকায় বিরাট অনন্য। রানের খরা কাটিয়ে যেভাবে কোহলি পুনরায় ফিরে এসেছেন নিজের ফর্মে, তাতে এই তালিকার প্রথম তিনে উঠে আসা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এছাড়া সচিন এবং বিরাটের তুলনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাধা বোধহয় সময়। সচিন যে সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দাপিয়েছেন সে সময় আর আজকের মধ্যে ফারাক অনেকখানি। সময়ের সঙ্গে বদলেছে ক্রিকেটার নিয়ম এবং ধরন। শেষ কয়েক বছরে যেভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেট মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে তাতে বাণিজ্যই যে মুখ্য তা বুঝতে কারও কোনও অসুবিধা নেই। ফলে সময়ের নিরিখে বিরাটও সচিনের মতোই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পথপ্রদর্শক।

সর্বোপরি, বিরাটের ক্রিকেট জীবনের এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি রয়েছে। তাই মাইলফলক ছোঁয়ার নেশায় বিরাট যে সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন না একথা কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না। ফলে তিনিও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সচিন হয়ে উঠতেই পারেন। তাতে অবশ্য কোনওভাবেই ম্লান হয়ে যায় না সচিনের কীর্তি। সচিন ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ হলে বিরাট সেই আবেগ বহাল রাখার অন্যতম কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সেতুবন্ধনকারী।

More Articles