কী নেই অ্যান্টিলিয়ার অন্দরে! মুকেশ আম্বানির রাজপ্রাসাদ কেন আজও কৌতূহলের
Antilia Mukhesh Ambani: অ্যান্টিলিয়ার বলরুমটি দেখার মতো। সেখানে স্ফটিকের মতো একটি ঝাড়বাতি আছে। এছাড়া বাড়ির রিক্রিয়েশান সেন্টার যে কোনও পাঁচ তারা হোটেলকেও হার মানায়
নাম – ‘অ্যান্টিলিয়া’
বাড়ির মালিক – মুকেশ আম্বানি
ঠিকানা – দক্ষিণ মুম্বইয়ের অল্টমাউন্ট রোড
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনকুবেরদের তালিকায় প্রথম সারির সিংহাসনে যিনি বিরাজ করছেন তিনি ভারতের ধনকুবের, রিলায়েন্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি। গণতান্ত্রিক এই ভারতবর্ষেও কার্যত তাঁর পরিবার, বাড়ি-ঘর, জীবনযাত্রা কোনওটাই রাজ পরিবারের তুলনায় কম নয়। Hurun Global Rich List 2021 অনুযায়ী বিশ্বের অষ্টম ধনী ব্যক্তি হলেন মুকেশ আম্বানি। তাঁর বিপুল সম্পদ ছাড়াও আরও যে কারণে আলোচনার কেন্দ্রে থাকে আম্বানি পরিবার, তারই অন্যতম হল তাঁদের আকাশচুম্বী বাসভবন অ্যান্টিলিয়া (Antilia)। ২০১৪ সালে একে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ব্যক্তিগত বাসভবনের তকমা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের তথা এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির বাড়ি প্রথম থেকেই আমজনতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বলা হয়, বাকিংহ্যাম প্যালেসের পর পৃথিবীর সবেচেয়ে দামি বাড়ি ‘অ্যান্টিলিয়া’। ভোগবিলাস কাকে বলে তা হয়তো এই বাড়ি না দেখলে জানা যায় না। সাউথ মুম্বইয়ের অল্টমাউন্ট রোডের উপর স্থাপিত হয়েছে মুকেশ আম্বানির রাজপ্রাসাদটি। মুম্বইয়ের অল্টমাউন্ট রোডে ন্যূনতম ১.৫ লাখ টাকা স্কোয়ার ফিটে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়। সেখানে অ্যান্টিলিয়া ৪ লাখ স্কোয়ার ফিটের ওপর তৈরি।
অ্যান্টিলিয়ার নামকরণ এবং ডিজাইনার
মুকেশ আম্বানির শখের বাড়ি অ্যান্টিলিয়ার নামকরণ হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি পৌরাণিক দ্বীপের নামানুসারে। পর্তুগাল ও স্পেনের পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরে আনতিল্লা নামের একটি দ্বীপের হদিশ পাওয়া যায় হোমার ও হোরাসের লেখায়। কিন্তু বর্তমানে এই দ্বীপের কোনও হদিশ নেই।
আরও পড়ুন- খেলা দেখতে এসে রানি মজলেন প্রেমে! বিশ্বের প্রাচীনতম সেই ক্লাব আছে কলকাতাতেই
অ্যান্টিলিয়ার নকশা করেছে আমেরিকার শিকাগোর বিখ্যাত আর্কিটেকচার ফার্ম পারকিন্স অ্যান্ড উইল। এছাড়া বাড়ির কাজ চলে স্টারলিং ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি প্রাইভেট ফার্মের অধীনে। আর অ্যান্টিলিয়ার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান নির্মাণ সংস্থা লেইটন হোল্ডিংস। অ্যান্টিলিয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে এবং নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় লেগেছিল ৭ বছর। মুকেশ আম্বানির এই অট্টালিকা তৈরিতে খরচ হয়েছিল ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অ্যান্টিলিয়ার উচ্চতা
মুকেশ আম্বানির স্বপ্নপুরী ২৭ তলা বিল্ডিং হলেও ৫৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অ্যান্টিলিয়া আসলে ৪৫-৬০ তলা বাড়ির সমান উঁচু! বাড়ির কিছু কিছু ফ্লোর সাধারণ ফ্ল্যাটের বা বাড়ির ২ তলার সমান। বাড়ির মোট উচ্চতা ৫৭০ ফুট এবং এটি প্রায় ৪ লক্ষ স্কোয়ার ফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে।
কী কী আছে অ্যান্টিলিয়ার অন্দরে?
মুকেশ আম্বানির এই স্বপ্নপুরীতে কী নেই সেটাই ভাবনার! রয়েছে হেয়ার স্পা থেকে শুরু করে স্যালোন, বলরুম, সুইমিং পুল, যোগা স্টুডিও, ডান্স স্টুডিও, আইসক্রিম পার্লার এবং ব্যক্তিগত থিয়েটার। এমনকী এই থিয়েটারে ৫০ জন মানুষ একত্রে বসতে পারবেন। এই থিয়েটারের উপরের ছাদে রয়েছে একটি রুফটপ গার্ডেন। এই বাড়ির ছয় তলাতে রয়েছে পার্কিং প্লেস, যেখানে একসঙ্গে ১৬৮টি গাড়ি রাখা যেতে পারে! মুকেশ আম্বানির নিজস্ব গাড়ি থাকে ৭ তলায়। বাড়ির নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ৭ তলা থেকে রাস্তায় নামতে গাড়ির সময় লাগে ১ মিনিট। এমনকী এক তল থেকে অন্য তলে যাওয়ার জন্য সারা বাড়ির মধ্যে মোট ৯টি সুপারফাস্ট এলিভেটর রয়েছে। এই বাড়ির প্রতিটি ফ্লোর আলাদা ডিজাইনে তৈরি। একটির সঙ্গে অপরটির মিল নেই।
এছাড়া রয়েছে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার জন্য ছাদের উপরে ৩টি হেলিপ্যাড। স্ফটিক, মার্বেল এবং মুক্তো দ্বারা নির্মিত সূর্য এবং পদ্মের দু’টি নকশা দিয়েই সারা বাড়ি মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টিলিয়ার বলরুমটি দেখার মতো। সেখানে স্ফটিকের মতো একটি ঝাড়বাতি আছে। এছাড়া বাড়ির রিক্রিয়েশান সেন্টার যে কোনও পাঁচ তারা হোটেলকেও হার মানায়। এই বাড়িটি এতটাই সুরক্ষিতভাবে তৈরি হয়েছে যে, রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও অটুট থাকবে মুকেশ আম্বানির এই রাজপ্রাসাদ। বলা হয়, বোমা বিস্ফোরণেও ধ্বংস করা যাবে না অ্যান্টিলিয়াকে। এছাড়া আরও শোনা যায়, এই রাজপ্রাসাদের উপর এমনভাবে বীমা তৈরি করা হয়েছে যাতে কোনওদিন এই বাড়ি ভেঙে গেলে দেড় মাসের মধ্যে তা তৈরি করে দেবে বীমা সংস্থা।
পুজো অর্চনা করার জন্য এই রাজপ্রাসাদেই রয়েছে বিশাল বড় একটি মন্দির এবং অতিথিদের থাকার সুবন্দোবস্ত। গরমের সময় দিল্লি-মুম্বইয়ের তাপমাত্রার কারণে আম্বানির পরিবারের কোনও অসুবিধা হয় না কিন্তু। তীব্র গরমেও তাঁরা বরফে ঢাকা পাহাড়ের ঠান্ডা আবহাওয়া পেয়ে যান বাড়িতে বসেই। কারণ এখানে রয়েছে একটি স্নো-রুম। যা থেকে পেঁজা তুলোর মতো বরফ পড়ে গরমের সময়।
কিন্তু এত বড় রাজপ্রাসাদে আম্বানি পরিবারের মাত্র পাঁচজন সদস্য থাকেন! মুকেশ আম্বানি এবং তাঁর স্ত্রী নীতা আম্বানি, তাঁদের পুত্র আকাশ আম্বানি এবং পুত্রবধূ শ্লোকা মেহতা আম্বানি ও তাঁদের সদ্যোজাত সন্তান পৃথিবী আম্বানি। তবে তাঁদের পরিবার যতই ছোট হোক না কেন, বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আছেন ৬০০ জন কর্মচারীও। এঁদের মধ্যে বাড়ির এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তারক্ষীরাও রয়েছেন। তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে একটি বিশাল হল ঘর। অ্যান্টিলিয়াকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখেন এই কর্মীরাই।
আরও পড়ুন- বিতর্কের মুখে ‘ভূত কোলা’! রহস্যময় লোকসংস্কৃতিতে লুকিয়ে বিচিত্র কোন প্রথা?
অ্যান্টিলিয়া বাস্তুসমস্যা বিতর্ক
কিন্তু এহেন প্রাসাদোপম বাসভবন নির্মাণ করেও প্রথমটায় অশান্তির মধ্যে পড়েছিলেন মুকেশ আম্বানি। ২০১০ সালে এই বাড়ির গৃহপ্রবেশের পুজো করা হয়। কিন্তু সেখানে তখনই বসবাস করা শুরু করতে পারেননি তাঁরা। বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই বাসভবনেও ছিল গুরুতর বাস্তুসমস্যা। শোনা যায়, সেই সময় ব্যবসায় নানা ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছিলেন মুকেশ আম্বানি। অ্যান্টিলিয়ায় বাস্তুসমস্যা আছে বলে তখনই রায় দেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যান্টিলিয়া ছেড়ে তখন নিজেদের পুরনো বাসভবনে ফিরে যায় আম্বানি পরিবার।
এরপর দুর্ভাগ্য এড়াতে আম্বানিরা ২০১১ সালের জুন মাসে ৫০ জন বিশেষ পণ্ডিতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পুজো ও যজ্ঞ করান। বাস্তু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে অ্যান্টিলিয়ার বাস্তুদোষ কাটানোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা। শোনা যায় সেই বাস্তু বিশেষজ্ঞ নাকি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ লক্ষ টাকা চার্জ করেন। তারপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে পাকাপাকি ভাবে অ্যান্টিলিয়ায় বাস শুরু করেন মুকেশ আম্বানি ও তাঁর পরিবার।