অতীত ফেরানোর চেম্বার! অভাবনীয় যে উপন্যাস জিতে নিল বুকার পুরস্কার

International Booker Prize 2023: বুকারজয়ী এই উপন্যাসটির বিষয়ের কেন্দ্রে রয়েছে 'অতীত ফেরানোর ক্লিনিক'।

অ্যালঝাইমার্স। সব ভুলে যাওয়ার রোগ। রোগীর স্মৃতি ফেরাতে কত শত পথই তো নেন আত্মীয়, চিকিৎসকরা। পুরনো দিনের কথা মনে করাতে পুরনো দিনের মতো সব কিছু তৈরি করে মানুষ স্মৃতি ফেরাতে চায়। ফেরাতে চায় সেই মুহূর্ত যা মনে করাতে পারে বহুকালের জমানো অনুভূতিমালা। ধরা যাক, অ্যালঝাইমার্স রোগীদের জন্য এমনই এক পরিবেশ তৈরি হলো, ফেলে আসা দিনকে ফেরানো হলো। ঠিক যেমনটি ছিল আগে, তৈরি করা হলো সেই সমস্ত আবহাওয়া, সেই সমস্ত দিনক্ষণ, সেই সব মুহূর্তগুচ্ছ। তারপর ধীরে ধীরে রোগীরা নয়, সুস্থ মানুষের ভিড় জমতে থাকল সেই চিকিৎসকদের কাছে। অতীত ফেরাতে জড়ো হয়েছেন সকলে, বাস্তব থেকে পালিয়ে ফিরে যেতে চাইছেন সেই সময় যখন পালানোর কথাও মনে হয়নি! অতীত ফেরানোর চেম্বারে তখন রোগীর চেয়েও বেশি লাইন সুস্থ মানুষের। এসবই লিখেছেন বুলগেরিয়ার লেখক জর্জি গোসপোডিনভ। এই উপন্যাস লিখেই এই বছরের বুকার প্রাইজ জিতলেন তিনি এবং তাঁর অনুবাদক অ্যাঞ্জেলা রোডেল।

'টাইম শেল্টার' নামের এই উপন্যাসের জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে বিজয়ী হয়েছেন এই লেখক ও অনুবাদক। এটিই বুলগেরিয়ান ভাষায় প্রথম বুকার জয়ী কোনও বই। বুকার পুরস্কারটি সারা বিশ্বের কথাসাহিত্যের কাজকে স্বীকৃতি প্রদান করে, সেই সব কথাসাহিত্য যা ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। ৫০,০০০ ইউরোর পুরস্কারমূল্যটিও লেখক এবং অনুবাদকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হয়।

বুকারজয়ী এই উপন্যাসটির বিষয়ের কেন্দ্রে রয়েছে 'অতীত ফেরানোর ক্লিনিক'। অ্যালঝাইমার্স রোগীদের এই ক্লিনিকে পরীক্ষামূলক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রোগীদের হারানো স্মৃতিকে কোনও বিশেষ মুহূর্ত দিয়ে ফেরাতে, এই ক্লিনিকে বিগত কয়েক দশকের অবস্থা, পরিবেশকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু যত সময় এগোয়, দেখা যায় সুস্থ মানুষরা আধুনিক জীবনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে এই ক্লিনিকে আসতে শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন- ফতোয়া, হুমকি, আক্রমণ! কী ছিল সলমন রুশদির সেই বিস্ফোরক বইতে? সত্যিটা জানলে চমকে উঠতে হবে

১৯৬৮ সালে জন্ম ঔপন্যাসিক এবং কবি জর্জি গোসপোডিনভের। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত আধুনিক বুলগেরিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত লেখক তিনি। এখনও অবধি তাঁর লেখা ২৫ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বইটির মনোনয়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে গোসপোডিনভ বলেছেন, "এটি কেবল আমার দেশের লেখকদেরই নয়, বলকানের লেখকদেরও উৎসাহিত করছে কারণ ইংরেজিভাষী না হওয়ার কারণে তাঁরা নিজেদের সাহিত্যের এই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বাইরে বলেই মনে করেন।"

অ্যাঞ্জেলা রোডেল মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার বাসিন্দা তবে থাকেন এবং কাজ করেন বুলগেরিয়াতেই। তাঁর কবিতা এবং গদ্য অনুবাদও বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা এবং সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৪ সালে, বুলগেরিয়ান সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর কাজ এবং অবদানের জন্য বুলগেরিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।

ভিন্ন ভাষায় লেখা বইয়ের ভাবনা এবং সেই অভিঘাতকে অন্য এক ভাষার শব্দে তুলে আনার মতো কঠিন কাজ রোডেল সামলেছেন। আসলে শুধু অনুবাদ করেননি রোডেল। লেখকের সঙ্গে বসে প্রতিনিয়ত এই উপন্যাসের বুননের সুতো গড়েছেন, কোথায় কোন রঙের সুতোর ভাঁজ পড়বে কতখানি সেই সূক্ষ্ম হিসেবনিকেশ করেছেন নিবিড় ধ্যানে। গোসপোডিনভ নিজেও মনে করেছেন, এই ধরনের বই অনুবাদ করা মোটেও সহজ নয়। বইটি ২০ শতকের বিভিন্ন দশক এবং এই দশকে আমাদের বদলে যাওয়া ভাষা নিয়ে কাজ করেছে। ফলে তা সম্পূর্ণ অন্য এক ভাষাতে নিঁখুত তুলে আনা কষ্টকর।

গত বছর ভারতীয় লেখক গীতাঞ্জলি শ্রীর হিন্দি উপন্যাস 'টম্ব অব স্যান্ড' এবং ডেইজি রকওয়েলের অনুবাদটি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করে।

More Articles