সোশ্যাল মিডিয়ায় নিম্নমানের কাজকেই এখন দারুণ কাজ বলে মনে করা হয়: ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়

Rwitobroto Mukherjee Interview: আমরা বিশ্বাস করি, থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে কোনও বার্তা এইসময় মানুষের কাছে পৌঁছতে না পারি তাহলে কীসের কী!

রাজর্ষি - নাটক এবং সিনেমা, দুই মাধ্যমেই সাবলীলভাবে কাজ করছ অনেকদিন থেকেই। এই প্রশ্নটা হয়তো খুব আপেক্ষিক এবং হয়তো শক্তও, তাও, কোন মাধ্যমকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে?

ঋতব্রত - প্রশ্নটা খুবই ইন্টারেস্টিং। সবাই জিজ্ঞাসা করে, দুটো মাধ্যমের মধ্যে কোনটা বেশি ভালো লাগে। এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা পেলাম, প্রশ্নটা ঠিক এইটাই হওয়া উচিত। আমি তুলনামূলক সাহিত্য পড়তে গিয়ে বিভিন্নভাবে এটা নিয়ে চর্চা করেছি যে, সময়ের দাবিতে কীভাবে বিভিন্ন শিল্পের ধরন বদলাতে থাকে। যেমন আজকের দিনে এপিক বা মহাকাব্য ফর্মটা আর চর্চাতে নেই। একসময় মহাকাব্য সরে গিয়ে নভেল চলে আসে, বা লিরিকাল ব্যালাডস চলে আসে। এর মূলে আছে শিল্পীদের সেই চিন্তা যে এই নির্দিষ্ট শিল্পের মাধ্যমে তাঁদের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এই কারণেই শিল্প তার ধরন বদল করে বারবার। এর আর একটা খুব সহজ উদাহরণ হচ্ছে, কমিক বই কেন তৈরি হলো? মানুষ বুঝতে পারল, সোজাভাবে স্পষ্টকথা বলতে গেলে সেন্সর্ড হতে হবে। তার থেকে কথাগুলো ঘুরিয়ে একটা কমিক বা সুপারহিরো চরিত্রের মধ্যে দিয়ে এমনভাবে বলানো হোক যাতে বার্তাটা ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে পৌঁছয়। কিন্তু সবটাই বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের আবরণে ঢেকে।

এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে, আমি দুটো মাধ্যমেই কাজ করেছি। যদিও বলা খুব কঠিন, তাও আমি বলব যে দুটোর সময়েই দুটোর গুরুত্ব বদলে বদলে যায়। আমার ভীষণরকম মনে হয়, কলকাতার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে থিয়েটার তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। এই প্রতিষ্ঠা দীর্ঘ অনেক বছর ধরে করেছে ও ক্রমাগত করেই চলেছে। কলকাতায় যে দর্শকরা এখনও নিয়মিত নাটক দেখেন, ভালো নাটকের সন্ধান রাখেন, যারা এখনও কেবল কোনও বড় নাম আছে বলে থিয়েটার দেখেন না, মানের উপর নির্ভর করে ছোট বড় সব দলের নাটক দেখেন, তারা এই প্রতিষ্ঠার পিছনে মূল স্তম্ভ। তারা একটা মতামত তৈরি করতে পেরেছেন এখানকার থিয়েটার সম্পর্কে। এটি কিন্তু কোনওভাবেই পপ্যুলিস্ট নয় সে অর্থে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, থিয়েটারের যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করার কথা ছিল, তা থিয়েটার স্বমহিমায় করে চলেছে। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিভিন্ন জায়গায় ব্রেখট, বাদল সরকার, উৎপল দত্ত, অজিতেশ, আর্থার মিলার অভিনীত হচ্ছে। এর পিছনে অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে যে, আমরা বারবার সেই লেখাগুলিকেই ফিরে ফিরে দেখছি, যা তার রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শনটা থিয়েটারে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

আরও পড়ুন- ‘দরকার হলে সারাজীবনে চারটে সিনেমা করব, কিন্তু সৎভাবে করব’: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

থিয়েটার তার অভিনয় ও বেছে নেওয়া টেক্সটের মাধ্যমে বারবার দর্শকের মনে আঘাত করতে পারছে, এখানেই এই শিল্পধারার সার্থকতা। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে সিনেমারও এই ভূমিকাটাই পালন করা দরকার। যেহেতু সিনেমা খুব সহজে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে, তাই বেশি করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন ট্যাবু নিয়ে ছবি হওয়া খুব বেশি দরকার। অবশ্যই এমন ছবি হবে যা মনোরঞ্জন করবে, তবে তার সঙ্গে সেই সিনেমাও তৈরি হওয়া দরকার যা মানবিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবে বা সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকার সঙ্গে অবতীর্ণ হবে।

রাজর্ষি - আচ্ছা, তাহলে একজন অভিনেতা হিসেবে বর্তমান দর্শকদের কাছে কোন মাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা আপাতত বেশি বলে মনে হচ্ছে, স্টেজ, সিনেমা নাকি ওটিটি?

ঋতব্রত - তিনটেরই আলাদা আলাদা দর্শক আছে। এই তিনটের মধ্যে আবার দর্শকের আদানপ্রদান হয়। ওভাবে তো দর্শক নির্দিষ্ট থাকে না। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, যুবসমাজ মানে ১৮ থেকে ২৬ বা আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ১৬ থেকে ২৬- এই বয়সটার দিনে দিনে যতটা সমৃদ্ধ হওয়া দরকার ছিল সেই সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টাটাই ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। মূলত সেটা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণেই। যুব সমাজের একাংশ শুধুমাত্রই মোবাইল গেমের মধ্যে রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে। ভালো বই, ভালো সিনেমা, ভালো ছবি– সর্বোপরি কোনও ভালো শিল্পকর্ম বা বিজ্ঞান– এই সবের মধ্যে তারা নেই। এই করতে করতে আমাদের একটা দর্শক সংখ্যা তৈরি হয়েছে যারা খুব নিম্নমানের কাজ দেখে অভ্যস্ত এবং তারা ওই নিম্নমানের কাজেই পড়ে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে আবার সেই নিম্নমানের কাজকেই এখন খুব দারুণ কাজ বলে মনে হয়। এই যে দর্শকের মধ্যে একটা চেতনার উৎস দরকার, সেইটা আমি জানি না কীভাবে হবে কিন্তু তা যদি না হয় তাহলে খুব সমস্যা। গ্রহণযোগ্য হবে খুব সহজ আর ‘চিপ’ জিনিস, গোদা বিষয়, যা সহজভাবে বোঝা যাচ্ছে, মজা আছে–ভাবতে হবে, মাথা খাটাতে হবে এমন জিনিসের সংখ্যা ক্রমশ কমছে এবং সেটা ভারতবর্ষেই কমছে। তার রাজনৈতিক ইমপ্লিকেশনের মধ্যে আমি যেতেই চাই না। কিন্তু এ যদি ঠিক না হয় তাহলে সমূহ বিপদ। এই যে মাথা না ব্যবহার করে আমি বুঝে যাচ্ছি, এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছু হয় না। একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, "আই থিঙ্ক দ্যাটস হোয়াই আই লিভ"। আমি এতে ভীষণভাবে বিশ্বাস করি। আমরা যদি মাথার ব্যবহার না করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি তাহলে সেটাই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়াবে। 

রাজর্ষি - সারা বিশ্বের নিরিখে একটা বিষয় এখন উঠে আসছে। অতিমারির পর পারফরমিং আর্টসের টিকে থাকার জন্য আগামী ১০ বছর নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তুমিও কি তাই মনে করো?

ঋতব্রত - দেখো, পারফর্মিং আর্টের গুরুত্ব সবকালেই ছিল। অতিমারির পর অনেকেই ভাবল, "আহা পারফর্মিং আর্ট একেবারে ধ্বসে যাবে"! কিন্তু লক্ষ্য করে দেখা গেছে, বড় বড় জায়গার কথা ছেড়েই দিলাম, অন্তত কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের মতো জায়গায় যেখানে দর্শক কম, পুঁজি কম, থিয়েটার হলের সংখ্যা কম, বিরাট ‘নাম’ কম, সেই জায়গাতেও আমরা নিজেদের পরিসরে ক্রমাগত কাজ করে গেছি এবং এটাই বোধহয় আমাদের এখানকার স্বাধীন থিয়েটারের শক্তি। আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করি, আমরা কোনও বড় প্রতিযোগিতার মধ্যে যাই না যে আমাকে দশ বছরের মধ্যে এই জায়গায় যেতে হবে। আমরা আমাদের মতো করে নিজেদের বার্তা স্পষ্টভাবে যাতে দিতে পারি সেই জায়গাটাই সুনিশ্চিত করি।

পারফর্মিং আর্ট কিন্তু সুষ্ঠুভাবে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কারণ বড় পুঁজি দরকার হয় না। আমার মনে হয় এই স্বাধীন কর্মকাঠামো যতদিন থাকবে ততদিন এই শিল্প থেকে যাবে। যে মুহূর্তে শিল্প বড় পুঁজিপতির কাছে চলে যাবে, পুঁজিপতির দাবি আসবে বড় হোর্ডিং চাই, এত লাভ চাই! সেখানেই এই উদ্যম নষ্ট হয়ে যাবে। পশ্চিমবাংলা বা অন্যান্য যে স্থানীয় শিল্প ঘরানা আছে, তারা বিভিন্ন কাজ করে চলে। তাদের কাজ এটা নয় যে দশটা হোর্ডিং হচ্ছে, নাকি প্রতি শোয়ে কত লাভ হচ্ছে তা দেখা! করোনার দুইখানা ঢেউয়ের পরেও থিয়েটার থেমে থাকেনি। দর্শকও হয়েছে যথেষ্ট, নতুন কাজও হয়েছে যথেষ্ট, একের পর এক শো-ও হয়ে চলেছে। তাই সেইভাবে কাজ করতে পারলে কিন্তু শিল্প টিকে থাকবে এবং এই টিকে থাকাটাই অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়। 

রাজর্ষি - এনআরসি, সিএএ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিতুমীরের মতো নাটক পেয়েছি, পরে আবার মেফিস্টো বা হ্যামলেটের মতো নাটক পেয়েছি। তোমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর আর এই সময়কে মাথায় রেখে ‘দারোগা হলো ম্যানেজার', বা ‘দিল্লি চলো’-র মতো নাটক মঞ্চস্থ করছো। তোমার কি মনে হয়, বিশেষ রাজনৈতিক বার্তাই প্রাধান্য পাচ্ছে এই নাটকগুলির ক্ষেত্রে?

ঋতব্রত - অবশ্যই। আমি তিতুমীরের দুটো শো করেছি, তিতুমীরে অবশ্যই একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে সেটা আমি পরে বলছি কিন্তু বাকি যে নাটকগুলো, মেফিস্টোয় বাবা অভিনয় করত, হ্যামলেট ঋদ্ধিদের কাজ, সেগুলো নিয়ে আমি বিশেষ বলতে পারিনা, কিন্তু আমাদের কাজ নিয়ে আমার বক্তব্য আছে। তিতুমীর যদি দেখি, উৎপল দত্তের নাটকে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার একটা ব্যাপার থেকেই যায়। উৎপল দত্তের থিয়েটার বেছে, সেখানে তাঁর লেখা তো মুছে ফেলা যায় না তাহলে ওঁর নাটক, ওঁর লেখা বেছে নেওয়ারই কোনও মানে থাকে না। উৎপল দত্ত বিশ্বাস করতেন যে, থিয়েটারটার মধ্যে দিয়ে আমি কিছু বার্তা দিতে চাই, খেটেখাওয়া মানুষদের কাছে সেই কথা পৌঁছে দিতে চাই। ইন্ডিয়ান থিয়েটার তথ্যচিত্রে উৎপল দত্ত এই কথাগুলিই বলছেন। 'থিয়েটার অব দ্য পিপল' হওয়া ভীষণভাবে দরকার।

জয়রাজদা চেয়েছিল কাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি সেটা জানিয়ে তিতুমীর কাজটা করতে। ২০২০ সালে যখন তিতুমীর নাটক করা হচ্ছে তখন কেন এতকাল পরে এই নাটক করা হচ্ছে তা দর্শক যদি আশেপাশের পরিবেশ নিয়ে সতর্ক থাকেন তাহলেই বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন এই সময়ের প্রেক্ষিতে তিতুমীর আসলে কে, তিতুমীরের ইংরেজরাই বা এই সময়ের নিরিখে কারা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো অবশ্যই থাকবে। 

আরও পড়ুন- তিতুমীর : পরিচিতির বিষণ্ণতা, সময়হারা সংশয়

এবার আমাদের কথায় যদি আসি, নাট্যআননের প্রযোজনার ক্ষেত্রে আমরাও এটা ভীষণভাবে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি, থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে কোনও বার্তা এইসময় মানুষের কাছে পৌঁছতে না পারি তাহলে কীসের কী! চন্দনকাকাই (চন্দন সেন) বারবার বলে, একটা নাটক কেন করছি এইটা যদি পরিষ্কার না হয় তাহলে সেই নাটক না করলেও ক্ষতি নেই। কেন নাটক করছি তা বোঝা খুব দরকার। 

আমরা এর আগে 'অপবিত্র' করেছি। 'অপবিত্র' একটা সাংঘাতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক থিয়েটার। 'ইনহারিট দ্য উইন্ড' বলে যে নাটক থেকে এখন সদ্য সিনেমাও হলো 'দ্য হোলি কনস্পিরেসি', ওই বিষয়টাই ওরকম। উগ্রভাবে ধর্মান্ধ, মতান্ধ স্যানাটিসিজ়মের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে স্বাধীন চিন্তার অধিকার, স্বাধীনভাবে প্রকাশের অধিকারকে সুনিশ্চিত করা। আমরা এটাও মনে করি যে, যখন আমরা প্রোপাগান্ডাভিত্তিক কাজ করব আমরা শিল্পের স্বাধীনতাও সাংঘাতিকভাবে ব্যবহার করব এবং শিল্প সমৃদ্ধও করব। যাতে আমরা যখন মানুষের মনে গেঁথে দেব যে কী বলতে চাইছি, সে যেন মনে না করে এইটা শুধুমাত্র একটা প্রোপাগান্ডা, সে যেন ভাবে এটা নাটকও বটে।

কখনও কখনও সেই কথাগুলো একটু সরল করে মিশিয়ে দেওয়া হয়। কারণ এই নয় যে এত সহজে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। কারণ হচ্ছে, এর মধ্যে অনেকগুলো থিয়েট্রিকাল থিওরি আছে, অনেকগুলো থিয়েটারের ঘরানা, প্রকাশ ভঙ্গিমা চলে আসে। 'দারোগা হলো ম্যানেজার' নাটককে স্যাটায়রিকাল করা হয়েছে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ভীষণরকম ডার্ক হিউমার রাখা হয়েছে। সবাই জানে কীসের কথা হচ্ছে, তাও কথাগুলোর মধ্যে একটা ভণিতা রাখা, চরিত্রের মধ্যে একটা মেকি 'সতীপনা' রাখা! কিন্তু 'দিল্লি চলো' আবারও উৎপল দত্তের লেখা থেকে করা, ভীষণ সরাসরি একটা নাটক। প্রতিটি নাটকের টেক্সটের জায়গা থেকেই এটা বদলে বদলে যায়। তবে অবশ্যই সেইখানে প্রোপাগান্ডা রাখতেই হয় কারণ যদি তোমার স্বচ্ছ ধারণাই না থাকে যে আমি কোন রাজনীতি থেকে বা কোন সামাজিক দিক থেকে একটা প্রযোজনা নির্মাণ করছি তাহলে কিন্ত বিপদ। এরকমও প্রযোজনা অনেক দেখেছি যার রাজনীতিটা স্পষ্ট নয়। তখন সেই নাটক একটা জগাখিচুড়ি হয়ে যায়। আমার মনে হয় প্রোপাগান্ডার আঘাত, এই ধরনের নাট্য নির্মাণের অভিঘাতটা অনেক ভালো এবং বার্তা অনেক বেশি প্রতিফলন হয় তা থেকে।

রাজর্ষি- থিয়েটারের ক্ষেত্রে স্বপ্নের কাজ, বা স্বপ্নের চরিত্র আছে কোনও?

ঋতব্রত - সেরকম কোনও স্বপ্নের চরিত্র নেই। থিয়েটার এমনই একটা প্রক্রিয়া যেখানে 'স্বপ্ন' সেভাবে নেই আমার, আবার বিভিন্ন ছোট ছোট স্বপ্ন, বিভিন্ন অনুভূতির ইচ্ছে আছে। থিয়েটার নির্মাণ করতে গিয়ে বা যুক্ত থাকার সময় যে সকল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একজন অভিনেতা যেতে পারেন, সেগুলো আমার করার ইচ্ছে আছে। আমি 'দিল্লি চলো'-তেই আপাতত একটা চরিত্রে অভিনয় করছি। সেখানে খুব চমৎকার এক অন্য অনুভূতির চরিত্র পেয়েছি। এটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এর আগে আমাদের দলে যুব নায়ক বলে যে নাটকটি হতো বিবেকানন্দকে নিয়ে, সেখানে ছোট নরেন দত্তর চরিত্র আমি করেছি। এটা আমার কাছে খুব বড় অভিজ্ঞতা। এই নাটকটা করতে গিয়ে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করা, বিভিন্ন রকম বই পড়তে হয়েছে। হিদুয়ানি, বেদান্ত এই ধারণাগুলো বোঝা, অদ্বৈতবাদ বোঝা এইগুলো খুব আমাকে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে খুব সাহায্য করেছে। আমি আসলে সেই রকম চরিত্রই করতে যা আমাকে অভিনেতা হিসেবে, মানুষ হিসেবে, শিল্পী হিসেবে, সন্তান হিসেবে আমাকে আরও ভালো মানুষ করবে। সেটাই আমার স্বপ্নের চরিত্র।

More Articles