কানাডা কি ভারতের নতুন পাকিস্তান? বাংলা যা ভাবছে
Hardeep Singh Nijjar India Canada Conflict : হরদীপ সিং নিজ্জর। ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা খালিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী।
জি-২০-র আসর। বিশ্বের তাবড় নেতারা রাজধানী দিল্লিতে। জো বাইডেন, ঋষি সুনক, ইমানুয়েল ম্যাক্রো, ফামিয়ো কিশিদা, শেখ হাসিনা, কে নেই! এরই মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় বসেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কী কথা হয় দু'জনের? কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয় তাতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বৈঠকে আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক নীতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। নরেন্দ্র মোদির দফতর এক্স হ্যান্ডেলে লেখে, জি-২০ বৈঠকের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সময় গড়াতেই বিষিয়ে ওঠে ভারত কানাডা সম্পর্ক! নেপথ্যে খালিস্তানি জঙ্গি নিজ্জর।
জি-২০ সম্মেলনের খতিয়ান নিয়ে তখনও ব্যস্ত নয়াদিল্লি। এরই মধ্যে বোমা ফাটান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। একবারে কানাডার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ট্রুডোর নিশানায় ভারতের কেন্দ্রীয় এজেন্সি। মারাত্মক অভিযোগ। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ বড় ধরনের জটিলতা নিয়ে আসে। আর হলও তাই। কানাডার নাগরিক খালিস্তানি জঙ্গির হত্যায় নাকি ভারতের হাত রয়েছে! নয়াদিল্লি তৎক্ষণাৎ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়। কানাডার বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতিও খারিজ করে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে এই একই দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে করেছেন বলে বিবৃতিতে জানায় নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে বলা হয়, তখনও ট্রুডোর দাবিকে খারিজ করা হয়েছিল।
অর্থাৎ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, এই সমস্ত এক সূত্রে বাঁধলে বোঝা যায় জি-২০-র আসরে চোরাগোপ্তাভাবে না, একেবারে সরাসরিই ওঠে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনা। যে নিজ্জরকে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো কানাডার নাগরিক বলে সার্টিফিকেট দেন। খালিস্তান আসলে কী? হিন্দুস্তান। পাকিস্তান। আফগানিস্তান। তুর্কমেনিস্তান। সেরকমই কি খালিস্তান? না, এ রকম কোনও দেশ নেই। স্বাধীনতার সময় দেশভাগের অনেক পরে, একাত্তর সালে পূর্ব-পাকিস্তান বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন হওয়ার পর এরকম একটা দাবি পঞ্জাব থেকে ওঠে, যে পঞ্জাব প্রদেশ বাংলার মতোই ভাগ হয় দেশভাগের কারণে। আটের দশকে অর্থাৎ ১৯৮০ সালের শুরু থেকেই এই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেয় ধর্মের নামে। অকালি দলের সঙ্গে সমঝোতায় শুরু হয় ধর্মযুদ্ধ মোর্চা। ১৯৮২ সালে জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে তাঁর সহযোগীদের নিয়ে স্বর্ণমন্দিরে আশ্রয় নেন। এর দু'বছর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণমন্দির খালিস্তানপন্থী জঙ্গি দখল মুক্ত করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। যার নাম অপারেশন ব্লু-স্টার। ইন্দিরা গান্ধিকে এরপর হত্যা করা হয় তাঁরই বাড়ির লনে। সন্তবন্ত সিং এবং বিয়ন্ত সিং দু'জনেই ছিলেন ইন্দিরার দেহরক্ষী। সে প্রসঙ্গ অন্য আলোচনার দাবি রাখে। এবার আসা যাক নিজ্জর কে?
হরদীপ সিং নিজ্জর। ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা খালিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী। ১৯৭৭ সালে পঞ্জাবের জলন্ধরে নিজ্জরের জন্ম। ১৯৯৬ সালে ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। রবি শর্মা নাম নিয়ে কানাডায় আশ্রয় নেন। শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্বের দাবি খারিজ হয়ে যায় প্রথমে। ২০১৫ সালে অবশেষে কানাডার নাগরিকত্ব মেলে। সেখানে প্লাম্বার এবং ট্রাকচালকের কাজ করতেন নিজ্জর। বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। ২০১২ সালে জগতার সিং তারার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। এই জগতার হচ্ছেন পাকিস্তানে খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্ৰধান। জগতারকে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ফেরত নেয় ভারত। ২০১৫ সালেই খালিস্তান টাইগার ফোর্সের দায়িত্বে আসেন নিজ্জর। ২০২০ সালে নিজ্জরকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে ভারত।
কানাডার ভ্যাঙ্কুবারের অদূরে একটি শিখ গুরুদ্বারের বাইরে খুন হন। তারিখটা ছিল চলতি বছরের ১৮ জুন। দু'জন বন্দুকবাজ নিজ্জরের গাড়ি আটকিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন নিজ্জর।
ওই ঘটনার তিন মাস পর নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত দেখতে পাচ্ছে কানাডা। শুধু তাই নয় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একেবারে মূলে ট্রিগার দেগে দিয়েছেন। কূটনৈতিক যুদ্ধে দু'দেশই রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। পরে কানাডার মিডিয়া সিবিসি দাবি করে ভারতের সিনিয়র কূটনীতিক ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর স্টেশন চিফ হিসেবে কাজ করছিলেন। পাল্টা হিন্দুস্তান টাইম রিপোর্ট করে কানাডার কূটনীতিক ভারতের মাটিতে চরবৃত্তি করছিলেন।
ফিনান্সিয়াল টাইমস-এর রিপোর্ট, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো বটেই জি-টুয়েন্টির আরও বেশ কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কানাডার দাবি নিয়ে জানান। কানাডা যে নিজ্জর খুনের পিছনে ভারতীয় এজেন্সির হাত দেখতে পাচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা হয়।
ফাইভ আই বলে পরিচিত দেশগুলির মধ্য়ে কানাডা ছাড়াও রয়েছে আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ড। ফিনান্সিয়াল টাইমস-এর রিপোর্ট এরাই মোদির সঙ্গে আলোচনায় নিজ্জর খুনের প্রসঙ্গ টেনে আনে। মনে রাখতে হবে, এই পাঁচ দেশ নিজেদের মধ্যে গোপন গোয়েন্দাতথ্য আদান প্রদান করে থাকে। খালিস্তানি নিজ্জর খুনের তথ্য তবে কানাডাকে কে পৌঁছে দিল? খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হিসেবে কীভাবে উত্থান তাঁর? কানাডাই বা কেন নিজ্জরকে নাগরিকত্ব দিল? নিজ্জর খুনের পিছনে আসলে কার হাত? কানাডাই কি তবে ভারতের দ্বিতীয় পাকিস্তান?
আলোচনায় এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে বাংলা যা ভাবছে। দেখুন আজ সন্ধ্যায়। সাংবাদিক, বিশ্লেষকরা কী বলছেন? আজকের পর্ব, কানাডা কি ভারতের নতুন পাকিস্তান? প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪x৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।