কোকে কোকেন ফেরাব, বলছেন এলন মাস্ক || সত্যিই কি ঠান্ডা পানীয়ে মিশত ভয়ানক মাদক?

"এরপরে আমি কোকাকোলা (সংস্থা) কিনব, এবং আবার কোকাকোলায় কোকেন মেশানোর চল ফিরিয়ে আনব।" ট্যুইটার কিনে এমনই বক্তব্য ট্যুইট করলেন এলন মাস্ক (Elon Musk)।

সত্যি-ই কি কোকাকোলায় (Coca-cola) কোকেন (cocaine) থাকে? এই সত্য জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৮৫ সালে, যখন আমেরিকার জর্জিয়ার ফার্মাসিস্ট জন পেমবার্টন (John Pemberton) নিজের বাড়ির পিছনে বসে কোকাকোলা বানাচ্ছেন।

১৮৮৮ সালে পেমবার্টনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার আগে তিনি কতিপয় লোককে কোকাকোলার মূল রেসিপি জানিয়ে গিয়েছিলেন, যা তার আগে প্রকাশ পায়নি। কী ছিল পেমবার্টনের বানানো মূল কোকাকোলার রেসিপি?  হ্যাঁ, কোকেন সত্যি-ই মিশিয়েছিলেন পেমবার্টন।

আরও পড়ুন: ট্যুইটারের মালিকানা আরও শক্তিশালী করবে এলন মাস্ককে

কোকেন তৈরি হয় কোকা পাতা (Coca leaf) থেকে, এরিথ্রোজা়ইলাম কোকা (Erythroxylum coca) সেই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম (Scientific name)। যার জন্যই 'কোকা' শব্দটির উপস্থিতি কোকাকোলাতে । অন্যদিকে 'কোলা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কোলা বাদাম (Cola nut) থেকে পাওয়া ক্যাফেইন (Caffeine) কোকাকোলায় ব্যবহার করা হয়েছিল বলে।

কোকাকোলার ঔষধিগুণ না কি অপব্যবহার ?

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ড্রাগ অ্যাবিউজ-এর (National Institute of Drug Abuse) তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, বর্তমানে একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে বিভিন্ন ড্রাগের উপযোগিতা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের অপব্যবহারের (Drug Abuse) প্রভাব সম্পর্কেও জানা যাচ্ছে।

পেমবার্টন কোকাকোলাকে 'বুদ্ধিজীবীদের টনিক' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ এতে উপস্থিত কোকেন ও ক্যাফেইন, দুই-ই মানুষের মস্তিষ্ককে সাময়িকভাবে উত্তেজিত করে।

তিনি এমনও দাবি করেন, কোকাকোলা পেট খারাপ থেকে শুরু করে মাথা ব্যথা, এমনকী, ক্লান্তিরও উপশম করে। পেমবার্টনের তৈরি এই 'মিশ্রণ' একাধিক শারীরিক অসুখের নিরাময় করেছিল সেই সময়ে, এমনই জানা যায় ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অফ ড্রাগ অ্যাবিউজ-এর তরফ থেকে।

উনিশ শতকে মূল ওষুধগুলিকে ড্রাগ স্ক্রিনিং টেস্ট পাশ করতে হত না। তাদের উপযোগিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও হত না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যে কোনও ড্রাগ এবং রাসায়নিক পদার্থকে ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করার আগে যে সতর্কতা এবং নিয়মকানুন মানা হয়, সেসবের কোনও প্রশ্নই ছিল না উনিশ শতকে দাঁড়িয়ে। যে কেউই নিজের  বাড়ি বা গবেষণাগারে তৈরি মিশ্রণকে ঔষধিগুণসম্পন্ন বলে দাবি করতেন।

কোকেনকে শরীরে স্থানীয়ভাবে ব্যথা উপশমের জন্যে ব্যবহার করা হলেও, এর প্রবল ক্ষতিকর প্রভাব হার্ট এবং চোখে গিয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরীরে রক্ত সরবরাহও।

সত্যি কতটা ঔষধিগুণ আছে কোকাকোলার?

কোকেনের পাশাপাশি ওপিয়ামও উপস্থিত এই পানীয়ে। ওপিয়ামেও শরীরে প্রবল ব্যথা উপশমে কাজে আসে ঠিকই, কিন্তু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিম্ন রক্তচাপ (Low blood pressure), ঝিমুনি ভাব (Dizziness), বমি বমি ভাব (Nausea) কিংবা সংজ্ঞা হারানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অপব্যবহারে কোকেন ও ওপিয়াম, এই দুইকেই মাদক তকমা দেওয়া যায়। কোকেনের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে ডোপামাইন নামের নিউরো-হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডোপামাইনকে বলে হ্যাপি হরমোন। তাই হঠাৎ করেই শরীরে শক্তি বেড়ে যায়। কোকেন সেবনের পরে অত্যধিক আনন্দবোধ হতে শুরু করে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার রাগ বাড়ে। পাশাপাশি স্পর্শ, আওয়াজ বা আলোতে অত্যন্ত বেশি স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়।

ধীরে ধীরে এর কোকেনের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন কোকেন সেবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি, হার্টের অসুখ, খিঁচুনি, মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা বা রাগের মতো সমস্যা দেখা যায়। এমনকী, নাক থেকে রক্তপাতের ঘটনাও দেখা যায় দীর্ঘদিন কোকেন সেবনের ফলে।

শুধু কোকেন ও ওপিয়াম নয়, পারদ এবং সিসার মতো ক্ষতিকর পদার্থও থাকত। এই দুই ধাতুই নানা রকমের নার্ভজনিত অসুখের জন্যে দায়ী।

১৮৯১ সাল নাগাদ মার্কিন জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোকাকোলায় কোকেন ও ওপিয়ামের (Opium) ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, কোকাকোলার নির্মাতাদের সেই পানীয়ের রেসিপি সম্পর্কে আবার নতুন করে ভাবতে হয়।

তবে কি কোকেন সরানো হল কোক থেকে শেষমেশ?

ধীরে ধীরে কোকাকোলায় কোকেনের ব্যবহার কমে আসে। শেষমেশ, ১৯২৯ সালে কোকেনের মিশ্রণ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়।

বর্তমানে কোকাকোলায় ব্যবহার করা হয় হাই-ফ্রুকটোজ় কর্ন সিরাপ (High Fructose Corn Syrup) বা সুক্রোজ় (Sucrose), যা মূলত কোকাকোলার মিষ্টি স্বাদের জন্য দায়ী। কালচে বাদামি রঙের জন্য ব্যবহার করা হয় ক্যারামেল  (Caramel) রঙ। পাশাপাশি থাকে ক্যাফেইন, ফসফরিক অ্যাসিড (Phosphoric Acid)।

আর থাকে Merchandise 7X (মার্চেন্ডাইজ় সেভেনএক্স)। এই Merchandise 7X-এ কী কী মেশানো হয়, তা স্পষ্ট করে কোনওদিনই জানানো হয়নি সংস্থাটির তরফ থেকে। তবে ধারণা করা হয়, এতে কমলালেবু, পাতি লেবু, লাইম, ল্যাভেন্ডারের মতো মিশ্রণ থাকে। তবে মূল রেসিপিতে পেমবার্টন সামান্য অ্যালকোহলও মিশিয়েছিলেন।

 

 

 

More Articles