কসাইদের গরু বিক্রি করে ইস্কন! মানেকা গান্ধীর বিস্ফোরক দাবি কি সত্য?
ISKCON Cow Selling : মানেকার দাবি ইস্কন নিজেদের গোশালা বা গোয়ালঘর থেকে সরাসরি কসাইদের কাছে গরু বিক্রি করে!
কিছুকাল আগেই রামকৃষ্ণকে ব্যঙ্গ করা নিয়ে আলোচনায় এসেছিল ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস, সোজা কথায় যাকে আমরা ইস্কন বলেই জানি। ইস্কন তখন অবিলম্বে সন্ন্যাসী আমোঘ লীলা দাসকে 'নিষিদ্ধ' ঘোষণা করে। এবার আরও মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে ইস্কনের বিরুদ্ধে। আর তা উঠেছে খোদ শাসক বিজেপির থেকেই! বিজেপির গো-প্রেম কারও অজানা নয়। দেশের ভোটের বড় নির্ধারকও গরুরাই। এই গরুদের নিয়েই এবার বিপাকে পড়েছে ইস্কন। ইস্কনই নাকি দেশের 'সবচেয়ে বড় প্রতারক', বলছেন বিজেপি সাংসদ মানেকা গান্ধী! কারণ কী? মানেকার দাবি ইস্কন নিজেদের গোশালা বা গোয়ালঘর থেকে সরাসরি কসাইদের কাছে গরু বিক্রি করে! কৃষ্ণের নামের জোট বেঁধেছে বিশ্বের তাবড় ভক্তরা, সেই বিখ্যাত ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে হঠাৎ এমন তীব্র আক্রমণ কেন?
মানেকা গান্ধী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রাণী অধিকার কর্মী হিসেবে তিনি সুখ্যাত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বরাবরই পশু কল্যাণ বিষয়ে সোচ্চার মানেকা। বিজেপির এই নেত্রী হঠাৎ ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন বড় অভিযোগ আনলেন কোন প্রমাণের ভিত্তিতে? তার আগে অবশ্যই উল্লেখ্য যে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কৃষ্ণ সম্প্রদায় ইস্কন কিন্তু এই অভিযোগগুলিকে 'অপ্রমাণিত এবং মিথ্যা' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ইস্কন : কৃষ্ণচর্চা নাকি স্রেফ ধর্মব্যবসা? জানুন আসল সত্য
একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মানেকা বলছেন, "ইস্কন দেশের সবচেয়ে বড় প্রতারক। এটি গোশালা রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং প্রচুর পরিমাণে জমি সহ সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা পায়।" মানেকা অন্ধ্রপ্রদেশের ইস্কনের অনন্তপুর গোয়ালঘরে গেছিলেন। সেই গোয়াল ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে মানেকা জানান, সেখানে তিনি এমন কোনও গরু খুঁজে পাননি যেটি দুধ দেয় না বা বাছুর দেয় না। মানেকার দাবি, পুরো গোয়ালে কোনও শুষ্ক গাভী গরু ছিল না। একটি বাছুর অবধি ছিল না। এর মানে সব বিক্রি হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, শুষ্ক গাভী হচ্ছে এমন গাভী যার কিছুকালের জন্য দুধ দোয়া হয়নি।
Response to the unsubstantiated and false statements of Smt Maneka Gandhi.
— Yudhistir Govinda Das (@yudhistirGD) September 26, 2023
ISKCON has been at the forefront of cow and bull protection and care not just in India but globally.
The cows and bulls are served for their life not sold to butchers as alleged. pic.twitter.com/GRLAe5B2n6
মানেকা বলছেন, "ইস্কন তার সমস্ত গরু কসাইদের কাছে বিক্রি করছে। ইস্কন রাস্তায় গিয়ে 'হরে রাম হরে কৃষ্ণ' গান গায় আর বলে যে তাদের পুরো জীবন দুধের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে তাঁরাই গরুদের বিক্রি করে দেয় মাংসের জন্য। কসাইদের কাছে যত গবাদিপশু বিক্রি হয়, সবচেয়ে বেশি করে ইস্কনই!
আরও পড়ুন- রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দকে অপমান, ব্রহ্মচারী অমোঘ লীলাকে যে ‘শিক্ষা’ দিচ্ছে ইস্কন
এই চরম অভিযোগ অস্বীকার করে ইস্কনের জাতীয় মুখপাত্র যুধিষ্ঠির গোবিন্দ দাস জানান, এই ধর্মীয় সংস্থাটি শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী গরু ও ষাঁড়ের সুরক্ষা এবং যত্নের খেয়াল রাখে। গরু ও ষাঁড়দের এখানে রক্ষা করা হয়, কসাইদের কাছে বিক্রি করা হয় না। ইস্কনের দাবি, বিশ্বের অনেক অংশে যেখানে গরুর মাংস একটি প্রধান খাদ্য সেখানে গরু সুরক্ষার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ইস্কন। এই মুহূর্তে হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ইস্কনের শত শত মন্দির রয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তও রয়েছে। মানেকা গান্ধী ইস্কনের শুভাকাঙ্খী বলেই জানতেন অনেকে। তাই এমন অভিযোগে অবাক ইস্কনের ভক্তরাও৷
বিবৃতিতে ইস্কন আরও জানিয়েছে, বর্তমানে ইস্কনের গোশালাগুলিতে এমন অনেক গরু রয়েছে যারা পরিত্যক্ত বা আহত বা যাদের জবাই হওয়া থেকে উদ্ধার করে ইস্কনে এনে রাখা হয়েছে। ইস্কনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাধারমণ দাস মানেকার এমন অভিযোগের প্রমাণও দাবি করেছেন। রাধারমণ বলছেন, মানেকা গান্ধী অনন্তপুরের গোশালায় যাননি। সেখানে কর্মরত কর্মীরাই তাঁদের জানিয়েছেন মানেকার সফরের কোনও তথ্যই তাঁদের কাছে নেই।