খাবারের লাইনে নির্বিচারে গুলি ইজরায়েলি সেনার! গণহত্যার যে বীভৎসতা দেখল গাজা
Israel-Hamas war: কিন্তু থালায় খাবার এসে পড়ার আগেই ছুটে এল গুলি। একটার পর একটা গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে চলে গেল একের পর এক নিরন্ন মানুষের বুক-পেট।
খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল যুদ্ধপীড়িত দেশের অনেকগুলো মানুষ। দু'টো রুটির আশায়। অনেকদিন ধরেই ভালো করে আর খাবারদাবার জোটে না গাজাবাসীর। যুদ্ধ থামার নাম নেই। ক্রমশ এক পা এক পা করে দুর্ভীক্ষের দিকে পৌঁছে গিয়েছে দেশটা। খাবারদাবারের সাহায্যের লাইনগুলিতে অসম্ভব ভিড়। কার পাতে এসে ঠেকবে একটা-আধটা রুটি। আজও কি পেট ভরবে ঘরের নিরন্ন শিশু কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধ মানুষগুলোর। কিন্তু থালায় খাবার এসে পড়ার আগেই ছুটে এল গুলি। একটার পর একটা গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে চলে গেল একের পর এক নিরন্ন মানুষের বুক-পেট। আর এই নির্বিকার গণহত্যার রচয়িতা ইজরায়েলি সেনা।
১৪৬ দিনে পড়েছে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ। ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে ইজরায়েলি সরকার। কিন্ত গত ৭ অক্টোবর থেকে যারা মারা গিয়েছেন, তাদের মধ্যে ক'জন হামাস জঙ্গি রয়েছে বলা কঠিন। বরং যারা রয়েছে, তারা বেশিরভাগই নিরপরাধ সাধারণ বাসিন্দা। কেউ শিশু, কেউ কিশোর, কেউ বৃদ্ধ, কেউ বা জোয়ান। গোটা গাজা আজ আস্ত একটা গণকবরে পরিণত হয়েছে। তবে তাতে কিছু যায় আসে না ইজরায়েলি সেনার।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসে ১৭ হাজার মৃতদেহ দাফন! গাজার মৃত্যুমিছিল ঘুমোতে দেয় না বৃদ্ধ জাফরকে
আর সে কারণেই বোধহয় গাজার দক্ষিণ-পশ্চিম সারিতে খাদ্যের সারিতে অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার অভুক্ত মানুষের বুকে নির্বিচারে গুলি চালাতে পেরেছে ইজরায়েলি সেনা। বুধবারের ওই হামলায় কম করে হলেও শতাধিক ফিলিস্তিনি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখম অন্তত সাতশো জন। না, তারা কেউ বিপ্লব, বিদ্রোহ, বিরোধিতা কিছুই করেননি। এসেছিলেন সামান্য খাবার সংগ্রহ করতে। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বুধবারের ওই গণহত্যার ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাটা যে আসলে কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছিল একগুচ্ছ দেশ। আদালতের শুনানিতে সেই অভিযোগ উড়িয়েছিল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই অভিযোগ যে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ অজস্র বার গাজা ভূখণ্ডে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। তবে এবার ইজরায়েলি সেনাবাহিনী যেভাবে খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, তাকে শুধু নিষ্ঠুরই নয়, ঠান্ডা মাথায় চালানো গণহত্যা বলেই দাবি করেছে প্যালেস্টাইনের বিদেশমন্ত্রক।
The Ministry of Foreign Affairs and Expatriates// Condemns the massacre in the Nablsi Square in Gaza and calls for an immediate ceasefire as the sole means to protect civilians.#Gaza_under_attack#CeasefireNow#Palestine#Israeliwarcrimes pic.twitter.com/AaoEtAofMC
— State of Palestine - MFA 🇵🇸🇵🇸 (@pmofa) February 29, 2024
ঘটনার দিনে গাজার আল রশিদ স্ট্রিটে জড়ো হয়েছিলেন বাসিন্দারা। আটা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল সাহায্যের ট্রাক। সাধারণ মানুষ গিয়েছিলেন সেই আটাটুকু সংগ্রহ করতে। কিন্তু ইজরায়েলি বাহিনী সেই অভুক্ত পেটের পরোয়া না করেই চালাতে লাগল গুলি। যে ট্রাক এসেছিল আটার জোগান দিতে, সেই ট্রাক ভরে উঠল শয়ে শয়ে মৃতদেহ। অ্যাম্বুল্যান্সের কাজ করল সেই ট্রাকই। কিন্তু গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালই তো ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেছে ইজরায়েল বাহিনী। ক্ষুধার লাইন মুহূর্তে হয়ে গিয়েছিল সেদিন মৃতদেহের মিছিল।
জখমদের গাজার চারটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আল শিফা, কামাল আদওয়ান, আহলি এবং জর্ডানের হাসপাতাল। এদিকে, ইজরায়েলি হামলায় রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। গুলিবিদ্ধ শরীরগুলোকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও কঠিন ছিল। এমনিতেই অনাহারে মরছে গাজা। সেখান স্বাস্থ্য দফকর জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান এবং আল-শিফা হাসপাতালে জল ও খাবারের অভাবে অন্তত ৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে একদিন আগেই। আর এই সংখ্যাটা এখানে থামার নয়। মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছে আরও অসংখ্য শিশু।
আরও পড়ুন:সাত দিন ধরে টানা যোগাযোগহীন গাজা, ব্ল্যাকআউটই কি গণহত্যার নয়া ‘অস্ত্র’ ইজরায়েলের?
ইজরায়েলি বোমা, গুলি, মারধর-অত্যাচার সেসব তো রয়েইছে। তার উপর খিদের ছোবল। আর ক'দিনই বা এভাবে বেঁচে থাকবে গাজা। যুদ্ধ থামার আশা নেই। রমজান মাসে শর্তাধীন যুদ্ধবিরতি দেওয়ার কথা বলছে বটে ইজরায়েল, তবে তাতে ভরসা করছে না গাজাবাসী। কারণ ১৪৬ দিন কেটে গেলেও যুদ্ধের মেঘ কেটে আশার আলোটুকু দেখতে পায়নি বাসিন্দারা। বরং গাজায় ক্রমশ মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ফুরিয়ে আসছে। ফুরিয়ে আসছে খাবার, জল। বারুদ বাতাসে মৃত্যুর অন্ধকার ছায়া এখন কেবল গাজা জুড়ে। গাজাকে নিশ্চিহ্ন করে না দেওয়া পর্যন্ত বোধহয় কোনওভাবেই দম নেবে না ইজরায়েল। তা বিশ্বের তাবড় দেশই বলুক, আন্তর্জাতিক আদালতই বলুক বা খোদ আমেরিকা।