রোজ চার ঘণ্টা গাজায় যুদ্ধ থামাবে ইজরায়েল! কী হবে এই চার ঘণ্টায়?
Israel Hamas War in Gaza : ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইজরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০,৮১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি নয়, যুদ্ধবিশ্রাম। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইজরায়েল যে কোনও যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটবে না তা আগেই জানিয়েছিল। তবে বিরতির পথে না গেলেও ইজরায়েল উত্তর গাজায় যুদ্ধে প্রতিদিন চার ঘণ্টার বিরতিতে রাজি হয়েছে। ওই চার ঘণ্টা কোনও বোমা না, হামলা না। সাধারণ নাগরিকরা যাতে এই হামলা থেকে বাঁচতে পালাতে পারে তাই এই চার ঘণ্টার মুক্তি।
হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, ইজরায়েলের সঠিক পথে পদক্ষেপ এটি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, এই চার ঘণ্টা কতক্ষণ থেকে কতক্ষণ তা ইজরায়েল প্রতি বিরতির অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইজরায়েল জানিয়েছে, যতক্ষণ এই বিরতি চলবে সেই সময়টুকুতে এই অঞ্চলে কোনও সামরিক অভিযান হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটকা পড়া কিছু বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য ইজরায়েলকে তিন দিনের বেশি বিরতি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তবে সাধারণ যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাজি ছিল না আমেরিকাও।
কিরবি স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন, ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না। যুদ্ধবিরতি হলেই ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী ৭ অক্টোবর যা করেছে তা বৈধ হয়ে যাবে। মনে হবে ইজরায়েল হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাই এর প্রশ্নই ওঠে না। তাই ফোনেই বাইডেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দৈনিক যুদ্ধবিরতি চালু করতে বলেন।
আরও পড়ুন- স্নান-খাওয়ার জলটুকুও নেই! দূষিত সমুদ্রের জলেই বাঁচছে গাজার শরণার্থী শিশুরা
ইজরায়েল নিজেরাও জানিয়েছে কোনও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তারা সম্মত হয়নি, তবে মানবিক সাহায্যদেওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত, স্থানীয় বিরতির অনুমতি দিচ্ছে ইজরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিচার্ড হেচট বলেছেন, “কোনও যুদ্ধবিরতি নেই, আমি আবারও বলছি যুদ্ধবিরতি নেই। আমরা যা করছি, সেই চার ঘণ্টার বিশ্রাম আসলে কৌশলগত, মানবিক সহায়তার জন্য স্থানীয় বিরতি।”
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইজরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০,৮১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইজরায়েলে হামাসের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১,৪০০-রও বেশি মানুষ। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহের রাজনৈতিক উপদেষ্টা তাহের আল-নোনো জানাচ্ছেন, ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি হামাসের।
ইজরায়েল যুদ্ধবিরতির পথে এগোবে কিনা এই নিয়ে এত চিন্তিত কেন আমেরিকা? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, গাজায় গণহত্যা চলছে। মানবিক বিরতির কথা ভাবছেই না ইজরায়েল। বাইডেন এবং নেতানিয়াহু যে চার ঘণ্টার মানবিক বিরতির কথা বলছেন তা আসলে সময় নষ্ট। বাইডেনের প্রশাসন অক্ষম এবং অনিচ্ছুক বলেই ইজরায়েলি সরকারকে এই যুদ্ধ থামানোর জন্য চাপ দিতে পারেনি। এই যুদ্ধে চার ঘণ্টার বিরতি কোনও সমাধান নয়। প্রকৃত যুদ্ধবিরতি হলেই গাজার সাধারণ মানুষ নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সাহায্য পেতে পারে, বিদেশিরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে, এবং হয়তো দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও হতে পারে।
গাজার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি শুধুমাত্র উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই চার ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়, তাহলে তা বৃথা। এই সব উপদেশ-নির্দেশ আগেও কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। চার ঘণ্টায় মানুষ সমস্ত কিছু নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে না। মানুষের কাছে গাড়ি নেই, জ্বালানি নেই- কীভাবে সম্ভব পালানো?