Hamas-Israel War: এই যুদ্ধে প্যালেস্টাইনের পক্ষে কারা?

Hamas-Israel War: আগ্রাসন কমিয়ে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটুক ইজরায়েল। সেদিকে তাকিয়েই বিশ্বের একগুচ্ছ দেশ সওয়াল করেছে শান্তির পক্ষেই।

ইজরায়েলে অতর্কিতে হামাসের হামলা আর তার পরেই প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দিল ইজরায়েল সরকার। গাজায় এর পর থেকে একের পর এক হামলা চালিয়ে গিয়েছে নেতানিয়াহুর দেশ। ইজরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের উপর নেমেছে একের পর এক হামলা। দিন দুয়েক আগেই গাজার উত্তর অংশ থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইজরায়েল সরকার। আর সে নির্দেশ অমান্য করার অর্থ সাক্ষাৎ মৃত্যু। কারণ হামাসদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে গোটা গাজা উত্তরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে নেতানিয়াহু সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রাণ হাতে করে বাসিন্দারা পালাচ্ছেন। নিজের দেশেই শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের এই বাড়তে থাকা সংঘাত স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। ইজরায়েলের সঙ্গে বেশিরভাগ বাহুবলী রাষ্ট্রেরই অন্য সমীকরণ, ফলে তাঁদের চটাতে রাজি নয় অনেকেই। এদিকে প্যালেস্টাইনিদের বঞ্চনার ইতিহাস অজানিত নয় কারওরই। ফলে তাঁদের প্রতিও সহানুভূতি রয়েছে বেশিরভাগ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশেরই। এই পরিস্থিতিতে গাজা-ইজরায়েল সংঘাত দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বিশ্বরাজনীতিকে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ইজরায়েলের পদক্ষেপের সরাসরি সমালোচনাও করেছে।

আগ্রাসন কমিয়ে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটুক ইজরায়েল। কারণ প্রতিশোধের এই খেলায় সবচেয়ে বেশি বলি হয়েছেন বরাবর সাধারণ মানুষ। সে আগে হোক কিংবা ২০২৩ সালের এই পরিস্থিতিতেও। হামাসের হামলাতেও ইজরায়েলের মৃত্যু হয়েছে যাঁদের, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিও হয়েছে তাঁদেরই। হামাস জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হয়েছে, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে যে শরীরগুলো, তাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। গাজাতেও ছবিটা কিছু আলাদা নয়। ইজরায়েল আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় বলি সেখানেও আম আদমীরা। যাঁদের রাজনীতির সঙ্গে, প্রতিশোধের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। আর সেদিকে তাকিয়েই বিশ্বের একগুচ্ছ দেশ সওয়াল করেছে শান্তির পক্ষেই। কোন কোন দেশ রয়েছে সেই তালিকায়, আসুন দেখে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন: কফিতে রক্তের দাগ! ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের যুদ্ধে কেন স্টারবাকস বয়কটের ডাক?

আলজেরিয়া

আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গাজায় ইজরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে সওয়াল করেছে আলজেরিয়া। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আলজিরিয়ার বিদেশ মন্ত্রক। প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও দাবিও জানিয়েছে তারা।


আফ্রিকান ইউনিয়ন

তালিকায় রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নও। আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন মুসা ফাকি মাহমত জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধপরিস্থিতিতে লঙ্ঘিত হচ্ছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার। শুধু ইজরায়েলকেই নয়, একই হামাসদেরও উগ্রতা কমানোর জন্য অনুরোধ করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। পাশাপাশি যা সমস্যা রয়েছে, আলোচনার টেবিলেই তার সমাধান খোঁজার পরামর্শ দিচ্ছে তারা। হামাসদের হাতে যে সব সাধারণ মানুষ পণবন্দি রয়েছেন, তাঁদের সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন।

ব্রাজিল

ব্রাজিলও সওয়াল করেছে সেই শান্তির পক্ষেই। ব্রাজিলের বিদেশমন্ত্রী মাইকো লুইজ ইকার জানান, যে ভাবে ইজরায়েল উত্তরগাজার সমস্ত মানুষকে রাতারাতি ঘর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তা কার্যত অভাবনীয়। দু-দেশেরই আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনিও। কারণ আখেরে এতে ক্ষতি হচ্ছে দু'দেশেরই একগুচ্ছ সাধারণ মানুষের।

 Israel–Hamas war Which countries have criticised Israeli attacks on Gaza and supported Palestine

কলম্বিয়া

আলোচনার টেবিলেই সমাধানসূত্র খুঁজুক ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন। আর তার পক্ষেই সওয়াল করেছে কলম্বিয়াও। গাজার মানুষ যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে রয়েছেন, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো।

কিউবা

যুদ্ধশান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে কিউবাও। দু-দেশই যে ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুবে নিয়েছে, তার নিন্দা করেছে দেশটি। পাশাপাশি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সে দিকটাতেও আলো ফেলেছে কিউবা।

ইন্দোনেশিয়া

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে গাজার পাশে দাঁড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়াও। তাদের মতে, এই যুদ্ধ দু-দেশকেই আরও বেশি মৃত্য়ু, আরও বেশি প্রাণহানির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার মতে, প্যালিস্টাইনিদের ভূমির উপরে ইজরায়েলের জবরদখলই এই অশান্তির উৎস।

ইরাক

গাজায় ইজরায়েলি হিংসার বিরোধিতা করেছে ইরাকও। ফিলিস্তিনিদের উপরে দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে যে নিগ্রহ চালিয়ে এসেছে ইজরায়েল, তার কড়া নিন্দা করেছে তারা।

 Israel–Hamas war Which countries have criticised Israeli attacks on Gaza and supported Palestine

ইরান

একই মত ইরানেরও। তাদের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নাসের কানানিও পক্ষ নিয়েছে প্যালেস্টাইনেরই। তাঁর মতে, ফিলিস্তিনিদের এই প্রতিরোধ বা আক্রমণ ইজরায়েলের ধারাবাহিক উষ্কানির প্রতিক্রিয়া। ফলে এই যুদ্ধের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী ইজরায়েলই।

আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারদাকার নিন্দা করেছেন ইজরায়েলের। যে ভাবে প্যালেস্টাইনের একাধিক অংশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জল সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইজরায়েল, সেই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করেছে আয়ারল্যান্ড। সেই ব্যাপারটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলেও আখ্যা দিয়েছে তারা।

কুয়েত

ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে কুয়েতও। ইজরায়েলের আগ্রাসন থেকে ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সমস্ত বড় শক্তিকে সংহত হওয়ার ডাক দিয়েছে তারা।

মরক্কো

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মরক্কোও। অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করে শান্তি ফেরানোর দাবি জানিয়েছে তারা। তার জন্য আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তারা দু-দেশকেই।

মালয়েশিয়া

গাজার উপর হিংসা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে মালয়েশিয়াও। যেভাবে দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার হয়েছে ফিলিস্তিনিরা, তার নিন্দা করেছে তারা। আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করার এই হিংসার মূলে বলে মনে করছে মালয়েশিয়া।

মলদ্বীপ

গাজায় যেভাবে প্রতিদিন বাড়ছে হিংসার ছবি, তার নিন্দা করেছে মলদ্বীপও। ফিলিস্তিনি মানুষের বর্তমান অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।

নরওয়ে

প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে আলোচনার টেবিলে বসার ডাক দিয়েছে নরওয়ে দু-দেশকেই। হামাসদের হামলার নিন্দা করে নরওয়ে জানিয়েছে, ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইন মানাটা দরকারি। তেমনটাই মনে করছেন নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ট। পাাপাশি গাজায় যেভাবে পানীয়, খাদ্য, বিদ্যুৎসরবরাহ বন্ধ করেছে ইজরায়েল, তার নিন্দাও করেছেন তিনি। যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে গাজা, যে বিপুল সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে, তার নিন্দা করতেও ভোলেনি নরওয়ে।

ওমান

ফিলিস্তিনি ও ইজরায়েলিদের এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওমানের বিদেশমন্ত্রকও। এই পরিস্থিতি আটকাতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছে তারা। শুধু তা-ই নয়, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানও চেয়েছে তারা।

 Israel–Hamas war Which countries have criticised Israeli attacks on Gaza and supported Palestine

কাতার

ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘনের যে ধারাবাহিক ইতিহাস, তার নিন্দা করেছে কাতারও। তারাও মনে করে, এই অশান্তির নেপথ্যে রয়েছে আল আকসা মন্দিরে অনুপ্রবেশের ঘটনা, যার জন্য দায়ী ইজরায়েল। এই পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরাতে দু-পক্ষকেই নমনীয় হওয়ার দাবি করেছে কাতার। এই মুহূর্তে দু-দেশের রাষ্ট্রনেতারই সংযম প্রয়োজন বলে মনে করছে দেশটির বিদেশে মন্ত্রক।

রাশিয়া

এমনকী যুদ্ধবাজ রাশিয়া পর্যন্ত মনে করছে শক্তিপ্রদর্শনের মাধ্যমে দু-দেশের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ফলে কূটনৈতিক পথেই সেই সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে হবে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনকে। পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের উপরেও জোর দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সিরিয়া

ইজরায়েলের এই দখলতদারী মনোভাবের নিন্দা করেছে সিরিয়াও। তাদের ভোট ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দলগুলির পক্ষেই। ৭ অক্টোবরে ইজরায়েলে হামাস-হামলার প্রশংসাও করেছিল তারা।

Israel–Hamas war Which countries have criticised Israeli attacks on Gaza and supported Palestine

দক্ষিণ আফ্রিকা

ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপচি সিরিল রামাফোসাও। একই সঙ্গে ইজরায়েলের পদক্ষেপকে স্বৈরাচারী শাসন হিসেবেও বর্ণনা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ভেনিজুয়েলা

গাজা স্ট্রিপের পরিস্থিতি নিয়ে ভয়ঙ্কর রকমের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভেনিজুয়েলা সরকারও। যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে হিংসার ছায়া ফেলে চলেছে ইজরায়েল, তার নিন্দা করেছে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘকে আন্তর্জাতিক গ্যারেন্টার হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে ভেনিজুয়েলা।

আরও পড়ুন: ইজরায়েলের ডানপন্থী সরকার প্যালেস্তাইনের হামাস, দুইয়ের পতন চাই


এই সমস্ত দেশগুলি প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়ালেও আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের সমর্থন কিন্তু রয়েছে ইজরায়েলের পাশেই। এবার রাষ্ট্রপুঞ্জ দু-দেশের সংঘাত মেটাতে এগিয়ে আসে কিনা সেটাই দেখার। পাশাপাশি কোথায় গিয়ে আত্মসংবরণ করে পিছিয়ে আসে ইজরায়েল? আদৌ কি তা ঘটবে না ইজরায়েলের আগ্রাসনে মুখ থুবড়ে পড়বে প্যালেস্টাইনের সমস্ত প্রতিরোধ? সেটাই এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মঞ্চের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার বিষয়।

 

 

More Articles