গাজার শরণার্থীদের জন্য দরজা খুলল মিশর, কতটা চাপে ইজরায়েল!

Israel-Hamas war: এদিকে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরের পর পরই বৃহস্পতিবার ইজরায়েলে পৌঁছেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ইজরায়েল ও গাজার যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথ...

একের পর এক হামলা, রকেটের আঘাত, ইজরায়েলের দিক থেকে ছুটে আসা গুলি বোমার ধাক্কায় জর্জরিত গাজা। যতবারই সর্বশক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করেছে, ততবার ইজরায়েলি সেনা এসে মুখ ভেঙে দিয়েছে গাজার সাধারণ নাগরিকদের। হামাসদের খতম করার লক্ষ্যে যে কত হাজার নিরপরাধ শিশু,বয়স্ক, নারী-পুরুষের প্রাণ কেড়েই চলেছে ইজরায়েলি সেনা, তার কোনও হিসেব নেই। এরই মধ্যে মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে চলে রকেট হামলা। যেখানে মৃত্যু হয় অন্তত ৫০০ জন সাধারণ নাগরিকের। জখম বহু। যার পর থেকেই মাথা বাঁচানোর লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। ভয়ঙ্কর সেই হামলার দায় ইতিমধ্যেই গাজার স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে ইজরায়েল। সেই সুরে সুর মিলিয়েছেন ইজরায়েলে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।

এদিকে মঙ্গলবারের হামলার পরেই গাজায় মিশরের সাহায্য ঢুকতে দিতে রাজি হয়েছেন ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। যিনি গাজার মানুষকে এতদিন ধরে খাদ্য, জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করেছেন। এখনও পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল গাজায়। গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস জঙ্গিরা। তার পরেই গাজার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধঘোষণা করে দেয় নেতানিয়াহু সরকার। আর তার পরিণামই ভুগছে গাজার মানুষ।

আরও পড়ুন: গণহত্যার রক্ত মোছার চেষ্টা! গাজার হাসপাতাল-হামলার দায় পিআইজি-র উপরে কেন চাপাচ্ছে ইজরায়েল?

বুধবার জর্ডনে মধ্য়প্রাচ্যের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল হওয়ার পরেই ইজরায়েলে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে গাজার হাসপাতালে বিধ্বংসী হামলার পরে সেই বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। মুখোমুখি বৈঠক না হলেও তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা হওয়ার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তা হয়েছে কিনা জানা নেই, তবে সম্প্রতি মিশরের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে কথা হয় বাইডেনের। তার পরেই বাইডেনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, গাজাবাসীর জন্য বিশেষ সাহায্যের হাত এগিয়ে দিতে চলেছে মিশর।

আসলে গাজার হাসপাতালে রকেট হামলার পর থেকেই ব্যাপক ভাবে বিরোধিতার মুখে পড়েছে ইজরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ উগরে দিয়েছে ক্ষোভ। ইতিমধ্যেই গাজাকে সমর্থন জানিয়েছে ২০টিরও বেশি দেশ। মঙ্গলবার গাজার হাসপাতালে হামলার পর লেবাননে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনি ও লেবনিজ পতাকা নিয়ে বেইরুটের মার্কিন দূতাবাসের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় একটি দল। নিরাপত্তা ব্যারিকেড লক্ষ্য করে ছোড়া হয় পাথর, জলের বোতল ও পটকা । শেষপর্যন্ত বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয় নিরাপত্তা বাহিনী। গোড়া থেকেই গাজার পাশে থাকার কথা জানিয়ে দেয় লেবানন। কোনওদিনই ইজরায়েলের সঙ্গে তেমন কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না লেবাননের। ফলে সেই অর্থে বিরোধিতায় যাওয়ার পক্ষেও বাধা কমই। সে কারণেই হয়তো প্রথম থেকেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে পেরেছে তারা।

Israel will let Egypt deliver some aid to Gaza

এদিকে বিশ্বরাজনীতিতে চাপ বাড়তেই মিশরকে গাজার বাসিন্দাদের সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দিল ইজরায়েল। পাশপাশি গাজাবাসীর জন্য মিশরের সীমান্ত খুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসি জানিয়ে দিয়েছেন, বিরাট সংখ্যক শরণার্থী নিজের দেশে ঢুকতে দিতে পারবে না মিশর। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে পালিয়ে যাওয়া গাজার বাসিন্দাদের জর্ডনে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, প্রথম দফায় কুড়িটি ট্রাককেই মিশরে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে মিশর সরকার। তবে রাফাহ সীমান্তে রাস্তার সারাই চলছে বলে শুক্রবার পর্যন্ত সময়ও চেয়ে নিয়েছে মিশর। তার পরেই শরণার্থীদের ঠাঁই দেবে মিশর।

মিশরের সহায়তার কথা উল্লেখ করার পরেই গাজায় খাদ্য ও পানীয় জল সরবরাহ চালু করার কথাও ঘোষণা করেছেন ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি। সাম্প্রতিক ওই হাসপাতাল-হামলার দায় নেতানিয়াহু যতই স্থানীয় দলের উপর চালাক না কেন, আরবের বেশিরভাগ দেশই এই হামলার দায় ঠেলেছে ইজরায়েলের কাঁধেই। গাজার স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠি প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (PIG) গোষ্ঠির এই ঘটনায় হাত নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছে আরবের দেশগুলি। হামলার দায় নেয়নি PIG-ও। সব মিলিয়ে চাপের মুখেই কি সুর নরম করতে বাধ্য হচ্ছেন নেতানিয়াহু?

Israel will let Egypt deliver some aid to Gaza

এদিকে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরের পর পরই বৃহস্পতিবার ইজরায়েলে পৌঁছেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ইজরায়েল ও গাজার যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, মিশরের গাজাকে সাহায্য় পাঠানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জাবিয়েছেন ঋষি সুনক। ফিলিস্তিনিরদের এই মানবিক সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে এই মুহূর্তে, তেমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন:গাজার হাসপাতালে ইজরায়েলি রকেট! রোগীদের ছিন্নভিন্ন দেহ গুনছে প্যালেস্তাইন

যদিও ৭ অক্টোবরের হামাস-হামলার পরেই ইজরালেরই পাশে দাঁড়িয়েছিল ঋষি সুনক। আর এবার সশরীরে দেশে হাজির থেকে নেতানিয়াহুকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। যতদূর জানা যাচ্ছে, সব ঠিকঠাক থাকলে এর পরেই ইজরায়েল সফরে আসতে পারেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরোঁ। এবার ইজরায়েল-গাজা দ্বৈরথে শান্তির দূত হয়ে উঠতে পারেন কিনা এই সব তাবড় দেশের রাষ্ট্রনেতারা, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

 

More Articles