গাজার হাসপাতালে ইজরায়েলি রকেট! রোগীদের ছিন্নভিন্ন দেহ গুনছে প্যালেস্তাইন
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত্রে একটি রকেট এসে পড়ে হাসপাতালে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে যায় ওই হাসপাতাল।
যারা অর্ধমৃত, তাঁদের সম্পূর্ণ মৃত হয়ে যেতে ইঞ্চিখানেক পথও পেরোতে হয় না। তাঁদের মৃত করে দিতে দু' দণ্ডও ভাবতে হয় না। যুদ্ধে আর প্রেমে সব কিছু 'জায়েজ' বলে যে গর্ব আমরা পুষে রাখি, সেই গর্বের ধারে কেটে যায় আমাদের বেঁচে থাকা, ছিঁড়ে যায় আমাদের নাভি। সেই গর্ব, সেই আক্রোশ বোম ফেলে দেয় হাসপাতালে, হাসপাতালে যুদ্ধের অর্ধমৃতরা সম্পূর্ণ মরে যায়। গাজার সমস্ত অর্ধমৃতদের ভবিতব্য এটিই। গাজা শহরের আল আহলি আরব হাসপাতালে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। শয়ে শয়ে মানুষ মারা গেছে, সম্পূর্ণত শেষ হয়েছে তাঁদের ভোগান্তি। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক মঙ্গলবার রাতে একটি বিবৃতি জারি করে এই খবরটি জানান। জানান কীভাবে শিশুরা শেষ হয়ে গিয়েছে ইজরায়েলের এই হামলায়। যে হাসপাতালে মানুষ যুদ্ধের শারীরিক ঘা সারিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেছে, আশা দেখেছে, সেই হাসপাতালের নিরস্ত্র অসুস্থ মানুষদের শেষ করে দিল ইজরায়েলি হামলা।
গাজা শহরের আল আহলি আরব হাসপাতালে ওই ব্যাপক হামলায় ভয়ঙ্করভাবে মারা গেছেন মানুষ, রোগী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং হাসপাতালের আশেপাশে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলিও এক ঝটকায় শেষ! প্যালেস্তাইন সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এই হামলায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত্রে একটি রকেট এসে পড়ে হাসপাতালে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে যায় ওই হাসপাতাল। এখনও নিশ্চিত করে কতজন মারা গিয়েছেন, কত লাশ গোনা বাকি বলা যাচ্ছে না। প্যালেস্তাই ইজরায়েলি বিমান হামলাকে দায়ী করেছে, অন্যদিকে ইজরায়েল অভিযোগ করেছে যে হামাসই রকেটটি ভুল করে নিজেদের হাসপাতালেই ফেলেছে।
স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার মধ্যবর্তী এলাকায় একটি শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের একটি স্কুলেও হামলা চালায় ইজরায়েল। ওই হামলায় মঙ্গলবার বিকেলে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। স্কুলটি প্রায় ৪,০০০ মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু মঙ্গলবার রাতেও আল আহলি আরব হাসপাতালে হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হু জানাচ্ছে, হাসপাতালটি চালু ছিল। ফলে সেখানে রোগীরা তো ছিলেনই, ছিলেন প্রচুর স্বাস্থ্যসেবা কর্মী। গাজাতে আশ্রয় হারানো অনেক মানুষও সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- Hamas vs Israel: গাজার মৃত শিশুদের আঙুল সব আমার দিকে তাক করা
হাসপাতালটি গাজার উত্তরে অবস্থিত। কয়েক দিন আগেই ইজরায়েল উত্তর গাজা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আশঙ্কা ছিল ব্যাপক হামলা চালানো হবে হামাসের জঙ্গিদের লক্ষ্য করে। এই চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে অনেক রোগীরই অবস্থা ছিল সংকটজনক। অ্যাম্বুলেন্স নেই, পর্যাপ্ত কর্মী নেই, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, রোগীর বেড নেই, ঘরহারাদের ঠাঁই নেই- এসবের মাঝে এত এত মানুষকে কোথাও বিকল্প আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। ফলত মৃত্যুই ভবিতব্য!
ডাব্লুএইচও সাধারণ নাগরিক এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের অবিলম্বে সুরক্ষা জোগানোর আহ্বান জানিয়েছে। গাজার অংশ থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে হু। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলারও আর্জি জানিয়েছে হু। অর্থাৎ যুদ্ধ চলাকালীনও স্বাস্থ্যসেবাকে সুরক্ষিত রাখতেই হবে। হাসপাতাল কখনই যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। মানুষের জীবন রক্ষার জন্য হাসপাতালগুলোকে অন্তত যুদ্ধের গ্রাস থেকে বাঁচাতেই হবে। মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্যপট হয়ে উঠতে পারে না হাসপাতালগুলি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা কোনও রোগীকে হত্যা করা উচিত নয়। অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে কোনো চিকিৎসকের প্রাণ হারানোও উচিত নয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এসব বলে ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধ কবেই বা কোনও আইন মেনে হয়েছে। প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে দুর্বল জায়গাতে আঘাত করা সহজ। এসব 'কোল্যাটেরাল' ড্যামেজ কবেই বা কাউকে ভাবিয়েছে?