চাঁদের পর সূর্য ধরার পালা! আদিত্য এল ১ ঠিক কী করতে চলেছে সূর্যকে নিয়ে?
Aditya L 1 Solar Mission : এই অভিযানের লক্ষ্য সৌর বায়ুমণ্ডলে আংশিকভাবে আয়নিত প্লাজমার পদার্থবিদ্যাকে বোঝা।
চাঁদ ধরার পালা শেষ, এবার সূর্যস্পর্শের প্রস্তুতি ভারতের। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ভারতীয় মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করেছে গত ২৩ অগাস্ট। পরবর্তী মহাজাগতিক অনুসন্ধান আর কোনও উপগ্রহ নয়, সোজা সূর্য! ISRO জানিয়েছে, ভারতের প্রথম সৌর মিশন, আদিত্য-এল ১, উৎক্ষেপণ হবে আগামী ২ সেপ্টেম্বর। সকাল ১১:৫০ মিনিটে শ্রীহরিকোটা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে সৌরযান। ISRO জানাচ্ছে, আদিত্য-এল ১ পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সূর্য-পৃথিবী ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট এল১-এ দূরবর্তী অবস্থান থেকে সৌর করোনা পর্যবেক্ষণ করবে।
জোসেফ-লুই ল্যাগ্রাঞ্জের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই সৌর করোনার। জোসেফ-লুই ল্যাগ্রাঞ্জের একজন ফরাসি গণিতবিদ, ১৮ শতকে প্রথম বিষয়টি অধ্যয়ন করেছিলেন। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হচ্ছে মহাকাশের একটি বিন্দু যেখানে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দু'টি বৃহৎ বস্তুর মহাকর্ষীয় শক্তি ভারসাম্য বজায় রাখে, ভারসাম্যের একটি অঞ্চল তৈরি করে যেটি একটি মহাকাশযানের জ্বালানি খরচ কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এল ১ পয়েন্টের চারপাশের কক্ষপথে স্থাপিত কোনও উপগ্রহের বড় সুবিধা হচ্ছে যে কোনও বাধা বা গ্রহণ ছাড়াই সূর্যকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে। এটি সৌর ক্রিয়াকলাপগুলি পর্যবেক্ষণ করার এবং রিয়েল-টাইমে মহাকাশের আবহাওয়ার উপর তাদের প্রভাবকে বোঝার কাজটি সহজ করবে, বলছে ISRO। সূর্যকে বোঝাপড়ার জন্য ভারতের প্রথম মহাকাশযান আদিত্য-এল১, PSLV-C57 রকেট ব্যবহার করে উৎক্ষেপণ করা হবে।
আরও পড়ুন- নিন্দার মাঝে উজ্জ্বল নাম! চন্দ্রযানের সাফল্যে যে ভাবে জুড়ল যাদবপুরের নাম
এই আদিত্য-এল১ এর মূল উদ্দেশ্য ঠিক কী? ISRO জানাচ্ছে, আদিত্য-এল১ মিশনটি তৈরি হয়েছে সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডল (ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা) এবং সৌর বায়ুর সঙ্গে এর মিথস্ক্রিয়াকে বোঝাপড়ার জন্যই। এই অভিযানের লক্ষ্য সৌর বায়ুমণ্ডলে আংশিকভাবে আয়নিত প্লাজমার পদার্থবিদ্যাকে বোঝা। সৌর করোনাকে উত্তপ্ত করে এমন প্রক্রিয়াগুলিকে খতিয়ে দেখবে এবং করোনাল ভর ইজেকশন (সিএমই) এবং সৌর শিখার সূচনা ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য-এল১।
আদিত্য-এল১ সূর্যের আশেপাশে ইন-সিটু কণা এবং প্লাজমা পরিবেশকে বোঝার চেষ্টা করবে এবং সৌর করোনার চৌম্বক ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করবে। মহাকাশ আবহাওয়ারও মূল্যায়ন করবে।
সূর্যের করোনা, ক্রোমোস্ফিয়ার, ফটোস্ফিয়ার এবং সৌর বায়ুকে অধ্যয়নের জন্য সাতটি পেলোড থাকছে আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটিতে। আদিত্য-এল ১-এর পেলোডগুলি করোনাল হিটিং, করোনাল মাস ইজেকশন, প্রি-ফ্লেয়ার এবং ফ্লেয়ারের ক্রিয়াকলাপ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য, মহাকাশ আবহাওয়ার গতিশীলতা, কণা এবং ক্ষেত্রগুলির সমস্যা বোঝার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে বলে আশা ISRO-র৷
আরও পড়ুন- সূর্যের চেয়ে ১০ হাজার গুণ বড় নক্ষত্র! উঠে এল যে ছবি…
চারটি রিমোট সেন্সিং পেলোড দৃশ্যমান, অতিবেগুনি এবং এক্স-রে সহ আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের ছবি তুলবে।
ভিজিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফ (VELC) সৌর করোনার চিত্র তৈরি করবে এবং এর গতিশীলতা মাপবে।
সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (SUIT) সংকীর্ণ এবং ব্রডব্যান্ড আল্ট্রাভায়োলেট তরঙ্গদৈর্ঘ্য দুই ক্ষেত্রেই ফটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ারের ছবি তুলবে।
সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (SoLEXS) সূর্য থেকে নরম এক্স-রে নির্গমনকে খতিয়ে দেখবে।
হাই এনার্জি এল ১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (HEL1OS) সূর্য থেকে কঠিন এক্স-রে নির্গমনকে খতিয়ে দেখবে। তিনটি ইন-সিটু পেলোড সৌর বায়ুর গঠন, গতিশীলতা এবং চৌম্বক ক্ষেত্র পরিমাপ করবে।
আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট (ASPEX) সৌর বায়ুর গঠন এবং গতিশীলতা পরিমাপ করবে।
প্লাজমা অ্যানালাইজার প্যাকেজ ফর আদিত্য (PAPA) সৌর বায়ুর প্লাজমা বৈশিষ্ট্যকে বোঝার চেষ্টা করবে।
উন্নত ত্রি-অক্ষীয় উচ্চ-রেজোলিউশন ডিজিটাল ম্যাগনেটোমিটার সৌর বায়ুতে চৌম্বক ক্ষেত্র পরিমাপ করবে।