বিষাক্ত ধোঁয়াশার দাপট রাজধানীতে, কৃত্রিম বৃষ্টি দিয়েই দূষণ তাড়াবে কেজরি সরকার?

Delhi Air Pollution: আইআইটি কানপুরের বিশেষজ্ঞ দলের তরফে জানানো হয়েছে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত দিয়ে হয়তো এই ভয়ঙ্কর ধোঁয়াশা থেকে স্বস্তি দিতে পারে দিল্লিবাসীকে।

যত দিন যাচ্ছে, তত খারাপ হচ্ছে দিল্লির পরিস্থিতি। স্কুল-কলেজ বন্ধ করেও কাজের কাজ হয়নি। এখনও বাতাসের গুণগতমান সেই তিমিরেই। গত দুদিন ধরে শহরের বেশ কয়েকটি জায়গার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ৪৫০-এর ইপরে। আর কে পুরম এলাকাতেও বায়ুর গুণগত মান ছিল ৪৫৩-এর উপরে, পঞ্জাবি বাগের একিউআই ৪৪৪, আইটিও ৪৪১ এবং আনন্দবিহার এলাকার বাতাসের গুণগত মান ৪৩২। এখনও দিল্লির বুক ভরে রয়েছে বিষাক্ত ধোঁয়াশায়। ইতিমধ্যেই বাড়ছে চোখের সমস্যা। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট। ক্রমশ হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের ভিড়।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রেডেজ রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের চতুর্থ পর্যায় মেনে পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুলষ। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইন পঠনপাঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমানো হয়েছে অফিস-কাছারির হাজিরাও। রাস্তায় ট্রাক চলাচলে টানা হয়েছে রোখ। দিওয়ালির আগে বাজি পোড়ানোর উপরেও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে রাজধানীতে। তবে তাতেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না তেমন। ধোঁয়াশার অত্যাচার পিছু ছাড়ছে না দিল্লির। দুপুর বারোটা সাড়ে বারোটাতেও ধোঁয়াশার জেরে নামছে রাতের অন্ধকার।

আরও পড়ুন: লকডাউনের স্মৃতি উস্কে বন্ধ স্কুল-কলেজ-অফিস! কোন পথে বাগে আসবে রাজধানীর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ?

জিদ্দি এই ধোঁয়াশার হাত থেকে বাসিন্দাদের রেহাই দিতে এবার অন্য পরিকল্পনা এঁটেছেন কেজরিবাল সরকার। ইতিমধ্যেই দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই এবং অর্থমন্ত্রী অতীশি আইআইটি কানপুরের এক দল বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কীভাবে দিল্লির বাতাস থেকে ভয়ঙ্কর এই ধোঁয়াশার চাদর সরিয়ে ফেলা যায়, সে ব্যাপারে কথা হয়েছে তাদের। আইআইটি কানপুরের ওই বিশেষজ্ঞ দলের তরফে জানানো হয়েছে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত দিয়ে হয়তো এই পরিস্থিতি থেকে স্বস্তি দিতে পারে দিল্লিবাসীকে।

ইতিমধ্যেই আইআইটি কানপুরের থেকে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার বিস্তারিত নকশা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। যা শুক্রবার জমা করা হবে সুপ্রিম কোর্টে। ইতিমধ্যেই দিল্লির বিষাক্ত বায়ুদূষণ নিয়ে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। সেই সব আবেদন শুক্রবারই শোনার কথা রয়েছে শীর্ষ আদালতে। দিল্লি প্রশাসন সূত্রের খবর, কানপুর আইআইটির পরিকল্পনায় যদি সবুজ সঙ্কেত দেয় সুপ্রিম কোর্ট, সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Artificial Rain In Delhi On November 20-21? IIT Team's Plan To Tackle Smog

কানপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদলের পরিকল্পনাটা ঠিক কী? আইআইটির ওই টিম জানিয়েছে, কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরির জন্য ন্যূনতম ৪০ শতাংশ মেঘের আচ্ছাদন প্রয়োজন হয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, আগামী ২০-২১ নভেম্বরক নাগাদ মেঘ তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত পরিকল্পনায় সিলমোহর দেয়, সেক্ষেত্রে আইআইটির তরফে একটি ট্রায়াল করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সঙ্কেত পেলে কথা বলা হবে কেন্দ্রের সঙ্গে।

Artificial Rain In Delhi On November 20-21? IIT Team's Plan To Tackle Smog

দিল্লি দূষণ নিয়ে গোড়া থেকেই কড়া অবস্থান নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শরৎ শেষ হতে না হতেই পঞ্জাব ও সংলগ্ন এলাকায় ফসলের নাড়া জ্বালানো শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানকে একেবারে খড় পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। দিল্লি সরকারকেও রেহাই দেয়নি আদালত। দিল্লির রাস্তাঘাটে এমন প্রচুর যানবাহন চলে, যা দূষণ ছড়ায়। সেই ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিল্লি সরকারকেই নিতে হবে বলে তোপ দেগেছে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন:বিশ্বকাপ খেলার মাশুল, আড়াই হাজার সিগারেট ‘খেতে’ বাধ্য হল শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

এদিকে হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এরই মধ্যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর পশ্চিম থেকে দক্ষিণপূর্বের দিকে বাতাসের দিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস রয়েছে। যাতে খড় পোড়ানোর ধোঁয়ার প্রভাব কমতে পারে খানিকটা। ১১ নভেম্বরের পর থেকে বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৫-৬ কিলোমিটার থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে পৌঁছবে, তার ফলে দিওয়ালির আগে দূষণের মাত্রা একটু কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাতাসের গুণগত মানও কিছুটা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সেসময় কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করাও সহজ হবে বলেই মনে করছেন আইআইটি কানপুরের ওই বিশেষজ্ঞ দল। তবে সত্যিই কি কৃত্রিম বৃষ্টি কমাতে পারবে দিল্লির ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ, তার উত্তর অবশ্য এখনই মিলছে না।

More Articles