কাশ্মীরে ফুটল না পদ্ম, শেষমেশ ‘ইন্ডিয়া’ জোটকেই বেছে নিল উপত্যকার রায়?
Jammu & Kashmir Assembly Election 2024: নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে ৪২টি আসন জিতেছে ফারুক আবদুল্লাহ এবং তাঁর ছেলে ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন দল জেকেএনসি।
আর্টিকেল ৩৭০ ধারা বাতিলের পর প্রথম ভোট। শুধু তা-ই নয়। প্রায় এক দশক পরে কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ভোট নিয়ে উপত্যকার দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। সম্প্রতি হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরে হয়ে গেল বিধানসভা নির্বাচন। হরিয়ানায় এক দফায় ভোট মিটলেও জম্মু-কাশ্মীরে তিন দফায় মিটেছে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের গণনা ও ফলপ্রকাশ ছিল মঙ্গলবার। লোকসভা ভোটের আদলে বুথ ফেরত সমীক্ষা কার্যত মুথ থুবড়ে পড়েছে হরিয়ানায়। প্রায় সমস্ত পূর্বাভাসকে মিথ্যা করে হরিয়ানায় ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। এক্সিট পোলে কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরার বার্তা থাকলেও তেমনটা হয়নি আদপেই। ভোট গণনা শুরু হতেই হরিয়ানা জুড়ে শুরু হয় গেরুয়া ঝড়। কাশ্মীরেও অবশ্য ৩৭০ বিলুপ্তির পর প্রত্যাশা তেমনটাই ছিল। কিন্তু সেখানেও ভোটের ফলাফল দেখালো উল্টো ম্য়াজিক। বিজেপির প্রত্য়াশাকে শূন্যে ছুড়ে উপত্যকায় ক্ষমতায় এল জোট ন্যাশনাল কনফারেন্স।
কার্যত উপত্যকায় দাঁতই ফোঁটাতে পারল না বিজেপি। সেখানে ঝড় দেখিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনেকক্ষণ ধরেই জানান দিয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেরিয়ে গিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস জোট। মোদি ম্যাজিক কার্যত সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। শেষপর্যন্ত সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সেখানে সরকার গঠন করতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স।
আরও পড়ুন: গণনা শুরু হতেই খেই হারাল কংগ্রেস, হরিয়ানাতে তৃতীয় বারেও ফুটতে চলেছে পদ্মই?
নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে ৪২টি আসন জিতেছে ফারুক আবদুল্লাহ এবং তাঁর ছেলে ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন দল জেকেএনসি। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি আসন এবং কংগ্রেস ৬ আসনে জয় পেয়েছে। বাকি ১২টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্যরা। পিডিপি পেয়েছে তিনটি আসন। ম্যাজিক নাম্বার অর্থাৎ ছেচল্লিশটি আসন ছুঁতে না পারলেও সরকার গঠনে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হবে না জেকেএনসি-কে। কারণ ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোটের শরিক তারা। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের সে রাজ্যে সরকার গড়া এক কথায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
যতদূর জানা গিয়েছে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লা গান্ডারবাল আসন থেকে ১০,৫৭৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এবার তিনি গান্ডারবাল ও বদগাম, এই দুটি আসন থেকে লড়েছিলেন। দুটি কেন্দ্রেই আসে জয়। বদগামে জয়ের পরেই জেকেএনসি প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছে পুত্র ওমরই। এবার উপত্যকার রাজনীতিতে আশ্চর্যজনক ভাবে প্রবেশ করেছে আম আদমী পার্টি। ডোডা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম বার জয় পেয়েছে তারা।
বুথ ফেরত সমীক্ষা পূর্বাভাস দিয়েছিল, ৯০ সদস্যের বিধানসভায় কোনও দলই ৪৬টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা অতিক্রম করবে না উপত্যকায়। দৈনিক ভাষ্কর, ইন্ডিয়া টুডে-সি ভোটার, পিপলস পালস ও অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া, চার পোলস্টারই অবশ্য ন্যাশনাল কনফারেন্সকেই এগিয়ে রেখেছিল। বিজেপির শিকেতে ২০টির কাছাকাছি আসন জুটতে চলেছে এবং পিডিপি ৪-৭টি আসন পাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু আদতে ৪২টি আসন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স। এবং ইন্ডিয়া জোটে অংশীদারিত্বের কারণে ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়ার চাপে পড়তেই হয়নি তাদের। কার্যত সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে সেখানে সরকার গড়তে চলেছে ইন্ডিয়া জোট। এবং বোঝাই যায় রথের রশি থাকছে জেকেএনসির হাতেই।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ ফলপ্রকাশের আগেই এদিন উপত্যকায় হার স্বীকার করে নেন মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি। গোড়া থেকেই পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। মুফতি অবশ্য জানান, কাশ্মীরের ফলাফলে তিনি খুশি। তাঁর মতে, স্থায়ী সরকার গড়ার জন্যই মানুষ ভোট দিয়েছেন। বিজেপিকেও ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ফলে উপত্যকার ফলাফলে কার্যত সন্তুষ্ট বলেই জানান মুফতি। সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি জানান, মেহবুবা মুফতি সংবদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘জম্মু– কাশ্মীরের অনেক সমস্যা আছে। তাই আমাদের প্রয়োজন শক্তিশালী সরকারের। আমি খুশি যেহেতু মানুষ স্থায়ী সরকার গড়তে ভোট দিয়েছেন। আর এই রায় এখন মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।’
আরও পড়ুন:বিপুল ভোটে দুর্দান্ত জয়, হরিয়ানায় কংগ্রেসের মুখ রাখলেন কুস্তিগির বিনেশই
লোকসভা ভোটের সময় থেকেই কাশ্মীর নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছিল বিজেপিকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির অধিকাংশ নেতার মুখে শোনা গিয়েছে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল নিয়ে প্রশস্তি। তবে বিজেপি যা-ই বলুক না কেন, তাদের সিদ্ধান্তকে উপত্যকার মানুষ সাদরে গ্রহণ করেননি, তা ভালো মতোই বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা ইভিএমে। হরিয়ানায় তৃতীয় বার জিতে যে আত্মবিশ্বাসী মূর্তি বিজেপি পকেটে পুরেছিল, কার্যত উপত্যকায় সেই ফানুস ফর্দাফাই হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের, তেমনটাই মনে করছে অভিজ্ঞমহল।