খাঁ খাঁ করছে রেস্তোরাঁ, সন্ত্রাসবাদের আঁচ জাপানের জনপ্রিয় সুশি খাবার নিয়ে! কী আসল রহস্য?
Sushi terrorism in Japan : ঠান্ডা ভাতের সঙ্গে ভিনিগার মিশিয়ে ছোট ছোট বলের আকারে গড়ে পরিবেশন করা হয় জাপানের এই বিখ্যাত পদ। এর সঙ্গে সঙ্গত করে সবজি, ডিম কিংবা কাঁচা সামুদ্রিক মাছের পুর। আর এই ঐতিহ্যবাহী খবর ঘিরেই কিনা ‘...
খাবার নিয়েও সন্ত্রাসবাদ, শুনে কীরকম অবাক লাগছে তো? কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করেছে এরকমই একটি ঘটনা। জাপানের বিখ্যাত খাবার সুশি নিয়ে সন্ত্রাসবাদের খবরে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা বিশ্ব জুড়ে। এই ‘সুশি সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগে জাপানে এর মধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করাও হয়েছে, যা অনলাইনে সামনে আসার পর থেকেই জন্ম দিয়েছে চাপা ক্ষোভ।
মূলত একটা প্র্যাঙ্ক ভিডিও ঘিরেই যা কিছু সমস্যা। জাপানে এক রেস্তোরাঁয় কনভেয়ার বেল্টে সাজানো সুশির প্লেটের খাবারে থুতু লাগিয়ে দেওয়া এবং সয়া সসের বোতল ও কাপ চেটে দিয়ে তামাশা করার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। যার জেরেই রাতারাতি ধস নেমেছে ব্যবসায়।
আরও পড়ুন - দুই বাবা ইঁদুরের ‘মিলনেই’ জন্ম সন্তানের! বদলাচ্ছে ‘সাধারণ নিয়ম’? যে মিরাকল দেখাল জাপান
ঠান্ডা ভাতের সঙ্গে ভিনিগার মিশিয়ে ছোট ছোট বলের আকারে গড়ে পরিবেশন করা হয় জাপানের এই বিখ্যাত পদ। এর সঙ্গে সঙ্গত করে সবজি, ডিম কিংবা কাঁচা সামুদ্রিক মাছের পুর। জাপানের প্রায় সব রেস্তোরাঁতেই অতি জনপ্রিয় একটি খাবার হল সুশি। আর এই ঐতিহ্যবাহী খবর ঘিরেই কিনা ‘সুশি সন্ত্রাসবাদ’-এর আঁচ! শুনে হয়তো খানিক অবাক লাগছে যে বিষয়টা আসলে কী? কেন খাবার নিয়েও এমন সন্ত্রাসবাদের ফতোয়া? ‘সুশি সন্ত্রাস’ বলতে আসলে কী ধরনের অপরাধকে বোঝানো হচ্ছে?
সন্ত্রাসবাদ শব্দটার সঙ্গে অবশ্য কম বেশি সবাই পরিচিত। সম্প্রতি জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার সুশিকে ঘিরে এক রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর কার্যকলাপ করতে দেখা গেল কিছু ক্রেতাদের। যাকে ‘সুশি সন্ত্রাসবাদ’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। জাপানের রেস্তোরাঁগুলোতে একটি চলমান প্ল্যাটফর্মে সাজানো থাকে অসংখ্য সুশি। প্ল্যাটফর্ম ঘুরতে থাকে নিজের গতিতে। আর সেখান থেকেই ক্রেতারা নিজের পছন্দ মত সুশি নিয়ে খেতে পারেন। এবার এই ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, রেস্তোরাঁর সুশি গুলোতে স্যানিটাইজার স্প্রে করছেন কিছু ক্রেতা। জিভ দিয়ে সুশি চেটে আবার প্লাটফর্মে রেখে দিচ্ছেন সেই অস্বাস্থ্যকর সুশি। ব্যাস এই ক্লিপ সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটবাসি।
Viral “sushi terror” pranks are making restaurants in Japan question whether or not conveyor belts are a good idea.🫢 pic.twitter.com/yI3pqejbSV
— LX News (@NBCLX) March 10, 2023
যদিও এই ঘটনা এই প্রথম নয়, মাস খানেক আগেও এরকমই একটি অস্বাস্থ্যকর ভিডিও সামনে এসেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, সুশি কনভেয়ার বেল্টে এক ব্যক্তি সয়া সসের বোতল চাটছেন। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই জাপানজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। সেখানে দেখা যায়, জাপানের বিখ্যাত ‘কুরা সুশি রেস্টুরেন্ট’ -এর একটি শাখায় ওই ভিডিও করা হয়। তার পর থেকেই এই রেস্তোরাঁর ব্যবসায় ধস নামে। সরাসরি ক্ষতির প্রভাব পড়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের ওপর।
একের পর এক এই ধরনের নিন্দাজনক ঘটনা সামনে আসায় রেস্তোরাঁয় ভিড় আর দেখাই যাচ্ছে না। এমনকী কনভেয়ার বেল্টে খাবার পরিবেশন না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ। তার বদলে রেস্তোরাঁর কর্মীরা টেবিলে গ্রাহকদের খবার সামনে পরিবেশন করছেন। এমনকী, টেবিলে কোনও মশলা বা সসের বোতল পর্যন্ত রাখা হচ্ছে না। গ্রাহকের প্রয়োজন মতো টেবিলে পরিবেশন করা হচ্ছে কেবল।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি কুরা সুশি রেস্তোরাঁয় করা ভিডিওটি প্রথম ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় জড়িত তিনজন প্রধান অভিযুক্তদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিওগা ইওশিনো নামে ২১ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও এই কান্ডের সঙ্গে জড়িত ওপর দুই জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্বীকারোক্তি জমাও করেছে তারা। অন্যদিকে রেস্তোরাঁর তরফে অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায় বাধা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
আরও পড়ুন - ফেলে দেওয়া চিপসের প্যাকেট থেকে ট্রেন্ডি সানগ্লাস! বিরল যে ঘটনায় তোলপাড় বিশ্ব জুড়ে
ফার্স্টপোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৪৭ সালে কনভেয়র-বেল্ট সুশির অনুশীলন শুরু হয়েছিল। জাপানের ওসাকা রেস্তোরাঁর ইয়োশিয়াকি শিরাইশি একটি আসাহি কারখানা পরিদর্শন করে দেখেন যে মেঝের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে একের পর এক বিয়ারের বোতল আসছে, যে যেটা পছন্দ তুলে নিতে পারবেন। আর এটি দেখেই তিনি নিজের রেস্তোরায় একই প্রযুক্তি অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন সুশি খাবার নিয়ে। অবশেষে ১৯৫৮ সালে বিশ্বের প্রথম কাইটেন-সুশি রেস্তোরাঁ খোলা হয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানে এইভাবে খাবার পরিবেশন করার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালে দেশীয় অর্থনীতিতে অক্সিজেন জুগিয়েছিল এটিই। এই ধরনের চেইন জাপান ছাড়িয়ে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পরতে শুরু করে।
সব মিলিয়ে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই ঘটনা স্বাস্থ্যবিধি এবং মানবিকতার দিক থেকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় জাপানের খাবারের ব্যবসাকে। ফলে ভিডিওগুলি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেআর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিক্রেতাদের। ফার্স্টপোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গিফু খাবারের দোকানে ক্যামেরায় ধরা পড়ার ঘটনাটিতে রেস্তোরাঁর মূল কোম্পানির স্টক প্রায় পাঁচ শতাংশে নেমে গেছে। ফলে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নতুন করে আবারও হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরে পাওয়াটাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ।