দুই বাবা ইঁদুরের 'মিলনেই' জন্ম সন্তানের! বদলাচ্ছে 'সাধারণ নিয়ম'? যে মিরাকল দেখাল জাপান

Scientists Create Mice with Two fathers : ডিম্বাণু ছাড়াই সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা! এক কথায়, ঐতিহাসিক এই গবেষণা!

কেবল মানুষ নয়, যে কোনও প্রাণীর জন্মের পেছনের ‘গূঢ় রহস্য’ কী? শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলন, এবং সেখান থেকে ভ্রূণের সৃষ্টি। তারপর জঠরে থাকার সময় সেই ভ্রূণই একটু একটু করে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীদেহে পরিণত হয়। জীবনচক্রের এমন নিয়মই স্বাভাবিক। এলজিবিটিকিউয়ের আন্দোলনের যুগে লিঙ্গের ঘেরাটোপ ভেঙে গিয়েছে। তাঁরা নিজেদের অধিকার, নিজেদের বাক স্বাধীনতা আর নিজের মতো করে বেঁচে থাকার নিয়মকেই বেছে নিয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনই ছিল একমাত্র উপায়।

আর এখানেই অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, ততই অবাক হচ্ছি আমরা। নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কৃত হচ্ছে, গবেষণার কাজও চলছে নিজের নিয়মে। তারই মধ্যে জাপানের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা রীতিমতো চমকে দিয়েছে জীববিজ্ঞানীদের। দুই পুরুষ ইঁদুরকে নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তাঁরা। আর সেই দুই পুরুষ ইদুরের ‘মিলনে’ তৈরি হয়েছে সন্তান! আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, কোনও স্ত্রী ইঁদুর ছাড়া, ডিম্বাণু ছাড়াই সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা! এক কথায়, ঐতিহাসিক এই গবেষণা!

আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ সম্প্রতি এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্সের গবেষকরা। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী কাতসুহিকো হায়াশি। তাঁদের মূল কাজটাই ছিল, জিনকে কাজে লাগিয়ে কী করে প্রজনন জগতে অদলবদল করা যায়। গবেষণার ‘গিনিপিগ’ ছিল ইঁদুর। জিনের ভেতরেই লুকানো আছে যাবতীয় সমস্যার চাবিকাঠি, এমনই ভাবনা ছিল গবেষকদের। আর তাঁদের নজরে ছিল শরীরের একটি বিশেষ অংশ – স্টেম সেল।

এই স্টেম সেল কী? সেটা বলার আগে একবার ভ্রূণ তৈরির ব্যাপারটা জানা যাক। শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনে তৈরি হয় জাইগোট, যা থেকে একটু একটু করে ভ্রূণ তৈরি হয়। একটা দশায় এই জাইগোট পরিণত হয় ব্লাস্টোসিসে। এর ভেতরেই থাকে স্টেম সেল, যেখান থেকে পরে যে কোনও কোষ তৈরি হতে পারে। প্রাণীদেহের বিভিন্ন জায়গাতেই থাকে এই স্টেম সেল। তবে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী শিনয়া ইয়ামানাকা ইতিমধ্যেই কৃত্রিম স্টেম কোষ তৈরি করেছেন। আর সেটা নিয়েই এই গবেষক দলের মূল গবেষণা ছিল।

এই কৃত্রিম স্টেম সেলকে কাজে লাগিয়েই ইঁদুরের প্রজননের জায়গা বদল করেছেন বিজ্ঞানীরা। আমরা জানি, স্ত্রী দেহে XX ক্রোমোজোম থাকে, যেখানে পুরুষদের থাকে XY ক্রোমোজোম। মিলনের সময় এই দুটি ক্রোমোজোমের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুজন পুরুষ হলে দুটি XY ক্রোমোজোম থাকবে। ফলে শুক্রাণুর মিলনে সন্তান উৎপাদন হবে না। এখানেই আসল কাজটি করেছেন গবেষকরা। কৃত্রিম স্টেম সেলের সাহায্যে এই দুটি XY ক্রোমোজোমের একটিকে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। XY-এর জায়গায় সেই ক্রোমোজোমটি হয়ে গিয়েছে X(X)। ফলে এখান থেকে সন্তান উৎপাদনে আর কোনও বাধা রইল না।

এই নতুন, ঐতিহাসিক আবিষ্কারটি সবেমাত্র হয়েছে। এখনও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা বাকি। কিন্তু যদি একবার গোটা পৃথিবীতে স্বীকৃত হয়ে যায় এই পদ্ধতি, তাহলে রীতিমতো বিপ্লব তৈরি হবে। মানুষের ওপরও কাজ করে কিনা, সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাহলে সমলিঙ্গের দম্পতিরাও সন্তান ধারণ করতে পারবেন আরও সহজে।

More Articles