আঁতকে ওঠা তথ্য সমীক্ষায়! নিঃসন্তান হবেন ভবিষ্যতের জাপানি মহিলারা! কেন?
Japan Population Decline: ২০২০ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২৬.১৫ মিলিয়ন, তা ২০৭০ সালের মধ্যে ৮৭ মিলিয়নে নেমে আসবে।
বিয়ে, সন্তান, সন্তানকে মানুষ, সন্তানের জন্য সর্বস্ব ছেড়ে দেওয়া, প্রজন্ম তৈরি করা, উত্তরাধিকারী রেখে যাওয়া... পরম্পরা বদলায়। কোথাও হু হু করে, কোথাও ধীরে। জাপানে যেমন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্তানের সংখ্যা কমছে। এখন জাপানে যে মহিলাদের বয়স ১৮-র কাছাকাছি, তারা যখন বছর ২৬-২৭ বা আরও পরের বয়সে পৌঁছবেন, সন্তান চাইবেন না অধিকাংশই। সমীক্ষা বলছে, এই মহিলাদের এক তৃতীয়াংশের কোনও সন্তান নাও হতে পারে। বহু যুগ ধরে, ধীরে ধীরে জাপানের প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে করা এবং বাবা মা হওয়ার সাধ কমে গিয়েছে। কিন্তু কেন?
জাপানের এক সরকারি সংস্থা জানাচ্ছে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যাকে উল্টোপথে হাঁটানোর জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছে, বিভিন্ন চেষ্টা করছে সরকার। অথচ কিছুতেই কিছু সুরাহা মিলছে না। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০০৫ সালে জন্ম নিয়েছেন এমন মহিলারা যখন বিয়ের বয়সে পৌঁছবেন, তাঁদের ৩৩.৪ শতাংশই নিঃসন্তান হবেন। যখন অবস্থা কিঞ্চিৎ ভালো ছিল, এই হারটা ছিল ২৪.৬% এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় হার পৌঁছেছিল ৪২%-তে।
আরও পড়ুন- ১৫ লক্ষ মানুষ সেঁধিয়ে গেছেন নিজের ঘরে! যে বিরল রোগ গিলে খাচ্ছে জাপানকে
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জুন মাসে জনসংখ্যার এই সঙ্কট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নেন। সরকার সেই সময় ঘোষণা করে, তিন বা তার বেশি সন্তানের পরিবারগুলির জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। এই ঘোষণার কিছুকাল পরেই প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করছেন, সরকারের এই সন্তান বৃদ্ধির নীতিগুলি কার্যকর হবে না মোটেও৷
কেন এমন অনীহা? বিয়ে বা সন্তান উৎপাদনে জাপানের নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হারাচ্ছে কেন? দায়িত্ববোধের অভাব থেকে? নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ বলছেন, এখন ঠিকঠাক জীবন চালাতে যা খরচা তাতে একজনের অতিরিক্ত খরচা টানা অসম্ভবপর! ফলে তারা মনে করছেন, সামর্থ্য বহন করতে না পারার আশঙ্কায় অনেকেই সন্তান নিতে চাইছেন না।
সমীক্ষায় সন্তানহীন মহিলাদের প্রত্যাশিত শতাংশ অনুমান করার ক্ষেত্রে বিবাহের বয়স, উর্বরতার মতো বিষয়গুলিকে বিবেচনা করা হয়েছে। আইপিএসএস-এর পপুলেশন ডায়নামিক্সের গবেষণার পরিচালক মিহো ইওয়াসাওয়া বলছেন, অধিকাংশ মানুষই এখন নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে অনেকটা পরে বিয়ে করছে, যার ফলে জন্মের হার কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন- জাপানের অস্তিত্বই মুছে যাবে পৃথিবী থেকে! কেন এমন আশঙ্কার কথা শোনালেন প্রধানমন্ত্রী?
২০২০ সালের সরকারি তথ্য বলছে, এই সময় মহিলারা গড়ে ২৯.৪ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। ১৯৮৫ সালের তুলনায় এই বয়সটা প্রায় চার বছর বেশি। বছর ৩০-এর শেষের দিকে বিয়ে করলে প্রায়ই শুধুমাত্র একটিই সন্তান জন্মায়, মানে যদি সন্তান নেন, তাহলে একটিই নেন।
দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ তাকুয়া হোশিনো বলেছেন, এই প্রবণতা কম সন্তানের জন্মের অন্যতম কারণ। যেহেতু কম সন্তান রয়েছে পরিবারে, তাই মানুষরা আগেকার দিনের পরিবারের তুলনায় প্রতিটি সন্তান পিছু বেশি ব্যয় করতে পারছে। এই প্রবণতার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এতে বৃহত্তর জনসংখ্যার কাছে একটি সন্তান লালন-পালনের গড় খরচ বাড়ছে। কেউ কেউ তাই সন্তান চাইছেনই না।
১৯৭৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ পাঁচগুণ বেড়েছে এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ গুণ বেড়েছে, বলছে সরকারি তথ্যই। এই ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের জন্য কোন একক নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায় না। তবে এটুকু সাফ যে, ২০২০ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২৬.১৫ মিলিয়ন, তা ২০৭০ সালের মধ্যে ৮৭ মিলিয়নে নেমে আসবে।