নামমাত্র খরচে ডুয়ার্স দর্শন! পুজোর মরশুমে ভিস্টাডোমে চিনুন অপরূপাকে...
Durgapuja Vistadom Train:ভিস্টাডোমের বিরাট বিরাট জানলার ফাঁক দিয়ে প্রকৃতি দর্শন, পাহাড়ের কোলে চারিয়ে যাওয়া জঙ্গলের ছোঁয়া—তার কোনো তুলনা হয় না। আজ সে ব্যাপারেই জানাব বিস্তারে।
পুজো এলো বলে। কেনাকাটার পর্ব চলছে মধ্যবিত্ত বাঙালির। এবার পুজো একটু স্পেশাল, কারণ মারীর উৎপাত নেই। খোলা মনে সেই উৎসবের মেজাজে ফিরতে চলেছে বাংলা। তোড়জোড় শুরু পাড়ার নানা ক্লাবে। বিশাল মিছিল হয়ে গেল রাজ্যে। সব মিলিয়ে হইহই রইরই ব্যাপার। এরই মধ্যে কেউ কেউ একটু পয়সা বাঁচিয়েছেন। পুজোর ঠিক পরপরই বেরিয়ে পড়বেন পথে। এই ইঁদুর দৌড়ের বাইরে একটু মুক্তির নিশ্বাস। সাধারণত যেসব বাঙালি পাহাড় ভালোবাসেন, তাঁরা ছোটেন উত্তরবঙ্গের দিকে। দিগন্তজোড়া ক্ষেত, মাঝে মাঝে নদী, ঘন জঙ্গল, পাহাড়—সব মিলিয়ে সে এক আশ্চর্য জায়গা। সেই ডুয়ার্স এবার আরও বেশি উপভোগ্য। টয়ট্রেনের মজা উপভোগ করেছেন অনেকেই। কিন্তু ভিস্টাডোমের বিরাট বিরাট জানলার ফাঁক দিয়ে প্রকৃতি দর্শন, পাহাড়ের কোলে চারিয়ে যাওয়া জঙ্গলের ছোঁয়া—তার কোনো তুলনা হয় না। আজ সে ব্যাপারেই জানাব বিস্তারে।
ভিস্টাডোম কী? মূলত ইউরোপিয়ান ধাঁচার কোচ, যাতে অনেক রকম বাড়তি সুবিধাও থাকে। যেমন ধরুন বড় বড় কাঁচের জানলা, কাঁচের ছাদ, অবজারভেশন লাউঞ্জ এবং রোটেটেবল আসন, যা ১৮০° কোণে এদিক ওদিক ঘুরতে পারে। এছাড়া কোচে ওয়াইফাইয়ের সুবিধা থাকবে, ফলে আন্তর্জালের সুবিধা উপভোগ করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হবে না। রিল হোক বা লাইভ, সরাসরি আপলোড করতে পারবেন ফেসবুক অথবা ইনস্টায়। ছবি তুলতে তুলতে, ভিডিও করতে করতে চার্জ শেষ? কোনো ব্যাপার না। প্রতি যাত্রীর জন্যে রয়েছে একটি চার্জ শকেট। সিটের হাতলের তলায় লক্ষ্য করুন। মোবাইলে চার্জ ফুরোনোর অসুবিধা নেই। আবার রয়েছে অন্য ধরনের বিনোদনের মাধ্যমও। ডিজিটাল স্ক্রিনসহ স্পিকার রয়েছে। যদি কেউ চান উপভোগ করতে পারেন তাও।
এই কোচের প্রবেশদ্বার বেশ চওড়া। যাঁরা বিশেষ ভাবে সক্ষম, হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন, তাঁদের জন্যেও বিন্দুমাত্র অসুবিধা হবে না ওঠা নামার ক্ষেত্রে। কম্পার্টমেন্টের দুদিকেই স্বয়ংক্রিয় স্লাইডিং দরজা রয়েছে। কোচের মধ্যে রয়েছে জিপিএস নির্ভর পাবলিক অ্যাড্রেস কাম ইনফরমেশন সিস্টেম (পাপিস), এল ই ডি ডেস্টিনেশন বোর্ড, যাত্রীবাহী অংশ ছাড়াও রয়েছে লাগেছে জন্য মাল্টি টায়ার র্যাক। ছোট্ট প্যান্ট্রিও থাকে ভিস্তা ডোমে। যাত্রীদের টুকরো টাকরা খাবার আসে ওখান থেকে। পরিষেবার অঞ্চলের মধ্যেই একটি হট কেস, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, কফি মেকার, বটল কুলার, ফ্রিজ এবং ওয়াশবেসিনের সুবিধা রয়েছে। প্রত্যেকটি কোচ সিসিটিভি সার্ভেলেন্সের আওতায়। প্রতিটি কোচে এফ আর পি মড্যুলার টয়লেট, প্রেসারাইজড ফ্লাশিং সিস্টেম, বায়ো ট্যাংক এবং অটোমেটিক ফায়ার ডিটেকশন অ্যালার্ম সিস্টেম থাকে।
গত বছর ২৮ অগাস্ট থেকেই এনজেপি টু আলিপুরদুয়ার রুটে চালু হয়েছে ভিস্তা ডোম। ডুয়ার্সের জঙ্গল ও পাহাড়ের গা বেয়ে ছুটবে এই ট্রেনটি। পর্যটনের মূল আকর্ষণ এই ট্রেনটিতে দুটি ভিস্টাডোম কোচ, দুটি বাতানুকূল চেয়ারকার এবং দুটি সাধারণ চেয়ারকার কামরা রয়েছে।
দার্জিলিংয়ের পাদদেশ হয়ে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে করতে যাত্রীরা সেভক, তিস্তা নদীর ক্রসিং, বাগরাকোটের চা বাগান, ওদলাবাড়ি হয়ে ডালগাঁওয়ের পথে আলিপুরদুয়ার পৌঁছবেন। নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে এই বিশেষ ট্রেনটি চালু করেছে মূলত ডুয়ার্সকে আরও উপভোগ্য করে তোলার জন্যই। এক বছরেই পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ট্রেনটি। একজন আধিকারিক জানিয়েছেন যাত্রীদের সুবিধার্থে একটি লাগেজ কার এবং একটি পাওয়ার কোচও থাকছে। ১৬৮ কিমি প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা। বর্তমানে সপ্তাহে ছদিন চলে ট্রেনটি। বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি টিকিট কাটা যায় ভিস্তা ডোমের।
ডুয়ার্সের সেই যাত্রাপথে কী কী থাকছে? থাকছে মহানন্দা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্র, সেবক ব্রিজ, তিস্তার সঙ্গ, তোর্সা নদী, জলঢাকা, ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা বাগান, বক্সার ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র, জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক, চাপড়ামারি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্র, রাজাভাটখাওয়া ইত্যাদি। হিমালয়ের সেই সৌন্দর্যে মোহিত হবেন যাত্রীরা। বরফ গলা জলের নদী তিস্তা, তোর্সা, ডায়না, জলঢাকা, কুজি ডায়না, ডিমা—সে অসংখ্য, বলে শেষ করা যাবে না। ভুটান সীমান্তে হাসিমারা রেশ স্টেশনে দাঁড়াবে ট্রেনটি। যাত্রীরা জয়ন্তী পাহাড় দেখবেন, সেবক, চালসা, তরাই-ডুয়ার্সের সাভানা এবং বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। মালবাজারের ওপর দিয়ে যাবে ট্রেনটি। চালসা বা হাসিমারায় স্থানীয় মানুষদের উৎসব চোখে পড়লেও পড়তে পারে। সে এক উপরি প্রাপ্তি। ভিস্তাডোম কোচের মধ্যে একটি সেল্ফি পয়েন্ট রয়েছে।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার —মোট এই তিন জেলার মধ্যে দিয়ে যাত্রাপথ। সঙ্গে ডিজেল ইঞ্জিনের সেই নষ্টালজিয়া। তাহলে আর দেরি কীসের? ১৫৭৭৭/১৫৭৭৮ গাড়িতে উঠে পড়ুন এনজেপি থেকে। এখনই ওয়েবসাইটে গিয়ে এনজেপি–আলিপুরদুয়ার টুরিস্ট ট্রেনের ইসি সিট বুক করে ফেলুন। তারপর পুজোয় ভ্রমণের আনন্দ নিন। এনজেপি থেকে শিলিগুড়ি জংশন, সেবক জংশন, নিউ মালবাজার রোড, চালসা রেলওয়ে স্টেশন, মাদারিহাট রেলওয়ে স্টেশন, হাসিমারা রেলওয়ে স্টেশন, রাজাভাতখাওয়া রেলওয়ে স্টেশন হয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন—এই নয় স্টেশনে যাত্রা। ফিরতে পারেন এই ট্রেনেই, অথবা অন্য যে কোনো সময়ে। পৌনে ছ ঘণ্টার যাত্রায় পয়সা পুরোটাই উশুল। ভ্রমণের ভরপুর আনন্দ। বেরিয়ে পড়ুন। যাত্রা শুভ হোক।