রেকর্ড গরম, বিশ্বের ‘উষ্ণতম’ বছর ২০২৪! কেন বলছেন বিজ্ঞানীরা?
Global Warming: ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানাচ্ছে, ২০২৪ সালের জুন মাসটি নাকি ইতিহাসের গরমতম মাস হতে পারে। এবং বিশ্বের উষ্ণতম বছর হতে চলেছে এই বছরটিই।
বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে গরম। চলতি বছর ভয়াবহ গরমের সাক্ষী হয়েছে গোটা দেশই। এ রাজ্যেরও কোনও কোনও জায়গায় তাপমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছিল প্রায় ৪৫ ডিগ্রির পারদ। বর্ষা পড়ে গেলেও গরম কমেনি রাজ্যে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই এক পরিস্থিতি। চলতি বছর হজ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর গরমে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য পুণ্যার্থির। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানাচ্ছে, ২০২৪ সালের জুন মাসটি নাকি ইতিহাসের গরমতম মাস হতে পারে। এবং বিশ্বের উষ্ণতম বছর হতে চলেছে এই বছরটিই।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বিগ্ন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। এই ভয়ঙ্কর গরমের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এল নিনোর আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। রয়টার্স সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের গরমকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে এই বছরের আবহাওয়া। ১৮০০ সালের পর এই ধরনের চরম আবহাওয়া দেখা গিয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে না। সে বছরের পর ২০২৪ সাল রেকর্ড গরমের বছর বলেই দাবি করেছেন বার্কলে আর্থের বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: ৫৫ বছরে উষ্ণতম রাত, শতাধিক মৃত্যু! কেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে দিল্লি?
নয়াদিল্লিতেও এবছর রেকর্ড গরম পড়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে মৃত্যুর খবর এসেছে সেখান থেকেও। হজ করতে সৌদি আরবে গিয়ে মারা গিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু সৌদি আরব নয়, গ্রিসে বেড়াতে গিয়েও নাকি এমনই ভয়াবহ গরমে কষ্ট পেয়েছেন অসংখ্য পর্যটক। ১৯৬০ সালের পর রেকর্ড গরম পড়েছে এবার গ্রিসে। ১৯৬০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রিসের তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তার মধ্যে ভয়ঙ্কর ছিল চলতি বছরের জুন মাসটি। সাধারণত গ্রিসে জুন মাসে ৩০-৩১ ডিগ্রির বেশি গরম পড়ে না। সেখানে এ বছর ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে তাপমাত্রা। জুনের মাঝামাঝি তা পৌঁছে যায় ৪০ ডিগ্রিতে। গ্রিক সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, গত জুনে অন্তত ১২৮১টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে গ্রিসে। তুর্কি মূল ভূখণ্ডের কাছে চিওস দ্বীপে এবং রাজধানীর দক্ষিণে পেলোপনিস অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। শুধু গ্রিস নয়, ইউরোপের বাইরে, পূর্ব কানাডা, পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো এবং ব্রাজিলের তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার উপরে ছিল। একাধিক দাবানলের ঘটনাও ঘটেছে এ সব জায়গায়।
এ সব কিছুর জন্য এল নিনো পরিস্থিতিকেও দুষেছেন বিজ্ঞানীরা। কী এই এল নিনো। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রতি দুই থেকে সাত বছর অন্তত চাপ পরিবর্তনের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের বাতাস ও জল উষ্ণ হয়ে যায়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে বাতাস চলাচলের ধরণে পরিবর্তন ঘটে। তবে সেই এল নিনোর তীব্রতা সাম্প্রতিক কালে নাকি হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে বহু এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পাল্টে যেতে পারে। হতে পারে খরা এবং বন্যাও। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছর বিশ্বের উষ্ণতম বছর হওয়া সম্ভাবনা খুবই তীব্র বলে মনে করছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রাইডেরিক অটো।
আরও পড়ুন: হজ করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ১,৩০০ পুণ্যার্থী, কেন মৃত্যুনগরী মক্কা?
এই ভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে গরম ঠিক কোথায় পৌঁছবে তা বলা মুশকিল। যে ভাবে গরম বাড়ছে, তাতে এবার আরও দ্রুত গলতে শুরু করবে বিশ্বের সমস্ত হিমবাহ। আর তা ঘটলে সমুদ্রের জল বাড়তে থাকবে। যার ফলে ডুবে যাবে লোকালয়। সমুদ্রের জল অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাণ হারাবে অসংখ্য সামুদ্রিক প্রাণী। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ঘেঁটে যাবে যার ফলে। পরিস্থিতি যেখানে যাচ্ছে, তাতে ক্রমশ সেই ধ্বংসের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্বের আবহাওয়া।