কর্মবিরতি তুলে বন্যা কবলিত স্থানে জুনিয়র ডাক্তাররা! আন্দোলন এবার কোন পথে?
Junior Doctor Cease Work: ডাক্তাররা জানান, শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় ক্যাম্প করবেন তাঁরা। বাকি জায়গায় কর্মবিরতি চলবে।
নাগরিক আন্দোলন থেকে গোটাটাই ঘুরে গিয়েছিল ডাক্তারদের আন্দোলনের দিকে। স্বাস্থ্যভবন অভিযানের পর জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাই ছিল আরজি কর আন্দোলনের প্রায় প্রধান অভিমুখ। একাধিকবার বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বহুচর্চিত 'লাইভ স্ট্রিমিং' দাবি ছাড়াই বৈঠকে রাজি হয়ে যান জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নেয় রাজ্য সরকার। পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বদলি হয়ে যান। তবু ডাক্তাররা বলেছিলেন কর্মবিরতি উঠবে না। তারপর আবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক, বৈঠক শেষে হতাশা! অবশেষে ৪২ দিন অতিবাহিত করে কর্মবিরতি আংশিক তুলে নিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
সমস্ত দাবির বাস্তব রূপায়ণের আগেই কেন কর্মবিরতি তুললেন তারা? গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিতা। মৃতা তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। সেদিন থেকেই কর্মবিরতি পালন করছিলেন তাঁরা। তারপর গত ন’দিন ধরে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না চলছিল তাঁদের। আপাতত কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যদিও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেই জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন- নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চ থেকেই জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, শুক্রবার থেকে কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেওয়া হবে। ধর্নামঞ্চটিও উঠে যাবে। তার আগে দুপুর ৩টেয় ধর্নামঞ্চ থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের একটি মিছিল হবে, সেই মিছিলের মূল দাবি সিবিআইকে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বলা। শনিবার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি পরিষেবায় যোগ দেবেন আন্দোলনকারীরা। তবে নিজেদের মতো করে আন্দোলন তারা চালিয়ে যাবেন। যেমন বিভাগ ভিত্তিক এসওপি তৈরি করার কথা জানিয়েছেন তারা। যে যে স্থানে খুব প্রয়োজন পড়ছে চিকিৎসা পরিষেবার সেই স্থানগুলি চিহ্নিত করা হবে। শুধু সেই অতিপ্রয়োজনীয় জায়গাগুলিতেই জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জুনিয়র ডাক্তাররা জানান শনিবার থেকেই বন্যা কবলিত এলাকাতে যাবেন তাঁরা। সেখানে ‘অভয়া ক্লিনিক’ চলবে। টানা বৃষ্টি এবং বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এলাকা বন্যা কবলিত। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্যও আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই ডাক্তাররা জানান, শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় ক্যাম্প করবেন তাঁরা। বাকি জায়গায় কর্মবিরতি চলবে। যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে আবারও পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দেবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন- ‘ভরসা হারিয়েছি’! মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টা পরেই কেন এমন বলছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
হাসপাতালে দালালচক্র বন্ধ, থ্রেট কালচারের অবসান, চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা, তিলোত্তমার ধর্ষণ-খুনের বিচার, পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। গত সোমবার কালীঘাটের বৈঠকে পুলিশ কমিশনার সহ, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ অধিকর্তাদের অপসারণ ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরে ডাক্তাররা বলেছিলেন আলোচনা 'সদর্থক' হয়েছে। তারপর অবশ্য বুধবার সেই দাবি নিয়েই নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা হতাশ। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব। হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার আগেই বলেন, "প্রথম দিন থেকে, আমি নিরাপত্তা দিয়ে ডাক্তারদের উদ্বেগকে সমর্থন করেছি। হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোর কাজ চলছে, সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে সরকার। আশা করা যায়, ১৪ দিনের মধ্যে সব জায়গায় সিসিটিভি বসানো হয়ে যাবে। ডাক্তারদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে সিপি ও স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সরানোও হয়েছে। সিবিআইকে নিশ্চিত করতে হবে, কোনও অপরাধী যেন ছাড়া না পায়। যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও রেকর্ড বলছে, গত ১০ বছরে সিবিআই কোনও তদন্তই শেষ করতে পারেনি। বিচারে দেরি মানে, বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া”। এই ঘটনা পরম্পরার শেষেই জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়।