কুণাল ঘোষের পরামর্শেই বিজেপিতে বিচারপতি অভিজিৎ?
Kunal Ghosh - Abhijit Ganguly: বিচারপতির উদ্দেশে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘অবসরের বেশি দিন বাকি নেই। তার আগেই আপনি স্বেচ্ছাবসর নিয়ে আসুন না রাজনৈতিক ময়দানে।"
একজন শাসক দলের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, অন্যজন বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনিতে, রাজনীতি ও আইনের ময়দানে দু'জন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। শাসক দলকে আদালতে নাকানিচোবানি খাইয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর পাল্টা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তোপ দেগেছেন কুণাল ঘোষ। তবে আদালতে-রাজনীতিতে সম্পর্ক যাই হোক না কেন, বাইরে আলাদা করে জিজ্ঞেস করা হলে একে অপরের সঙ্গে ভালো কথাই বলতেন অভিজিৎ ও কুণাল। কুণাল ঘোষের প্রশংসাও করেছেন অভিজিৎ। সদ্য অভিজিৎ জানিয়েছেন অবসর নিয়ে রাজনীতিটাই করবেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। এর পরেই কুণাল ঘোষ বলেছেন, তাঁর কথা মতোই এগিয়েছেন অভিজিৎ! কুণাল ঘোষই কি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপিতে যোগ দিতে বললেন তবে?
কুণাল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘ভেবে ভালো লাগছে যে, আমি যে কথা ওঁকে বলেছিলাম, তিনি সেই মর্মেই এগোচ্ছেন। ফলে এটাও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ওঁর যে রায় বা পর্যবেক্ষণ ছিল, তা রাজনৈতিক।’’ নিজের বাড়ির নীচে সাংবাদিক বৈঠক করে বিচারপতি কুণালের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কুণাল ঘোষ একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ! আমার চেম্বারে বসে ওঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছে। রাজনীতির বিষয়ে নয়, অন্য বিষয়ে। আমার মনে হয়েছে, তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ।’’
পেশার জগতে বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের সম্পর্ক হলেও অভিজিতের বিজেপিতে যোগের নেপথ্যে কুণালের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিচারপতি অভিজিৎ নিজেই বলেছেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্য শাসকদলের কিছু নেতাকে অভিনন্দন জানাতে চান তিনি। তৃণমূলের এই নেতারা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিচারপতি অভিজিৎকে এই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তৎকালীন শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষই।
আরও পড়ুন- ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাম প্রত্যাহার, কেন বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না পবন সিং?
তৃণমূলের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কুণালও। ইস্তফা দল গ্রহণও করেছে। এর অনেক আগে বিচারপতির উদ্দেশে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘অবসরের বেশি দিন বাকি নেই। তার আগেই আপনি স্বেচ্ছাবসর নিয়ে আসুন না রাজনৈতিক ময়দানে। তার পর দেখা যাবে।’’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার জেরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কিছু মামলা সরিয়ে নেওয়া হয়। তখন অভিজিৎ বলেছিলেন, কুণাল যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা পুরোপুরি মিলে গিয়েছে।
জানুয়ারির শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে শিক্ষা দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলাই প্রায় সরিয়ে নেওয়া হয়। বদলে দেওয়া হয় শ্রম এবং শিল্প সংক্রান্ত মামলার দায়িত্ব। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে করতেই কুণাল দলের রাজ্য সম্পাদক এবং দলীয় মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তৃণমূল হয়তো শোকজ নোটিশও দিতে পারে কুণাল ঘোষকে।
কুণাল মনে করছেন, অন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে যদি কেউ রাজনীতিতে আসেন, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে তা স্বাস্থ্যকর বা ইতিবাচক। কুণাল স্পষ্ট বলছেন, অভিজিতের রায় বা পর্যবেক্ষণগুলি রাজনৈতিকই ছিল। অভিজিৎ বিজেপিতে তা মোটামুটি নিশ্চিত। যেভাবে কুণাল দলের পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন তাতে তিনি তৃণমূলেই শেষ অবধি থাকবেন কিনা প্রশ্ন উঠছেই। তার উপর এই অভিজিৎ ঘনিষ্ঠতা কি কেবলই রাজনৈতিক সৌহার্দ্য, প্রশ্ন ভাবাচ্ছে।