বিচারপতি সেন বনাম বিচারপতি গাঙ্গুলি, যুদ্ধে কে এগিয়ে?

Justice Ganguly vs Justice Sen: কলকাতা হাইকোর্টের দুই বেঞ্চের সংঘাত নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নয় সুপ্রিম কোর্ট। দুই বিচারপতির রায়ের উপরেই আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

বিচারপতি সেন বনাম বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়─কলকাতা হাইকোর্টের দুই বেঞ্চের সংঘাত নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নয় সুপ্রিম কোর্ট। দুই বিচারপতির রায়ের উপরেই আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতির ক্ষেত্রে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র মামলার রেশ ধরে সংঘাতের সূত্রপাত। ২৪ জানুয়ারি, মেডিক্যাল মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিনই মৌখিকভাবে হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে সওয়াল করে রাজ্য। মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতেই ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে। স্থগিতাদেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রদত্ত নির্দেশের কপি আপলোড করা হয়নি।

ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজিরা দিয়ে জানাননি রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অবিলম্বে সিবিআইকে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেন তিনি। সিবিআই এফআইআর দায়ের করলে তা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। ২৫ জানুয়ারি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দায়ের করা এফআইআরেও স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। তারপরেই সংঘাত বাঁধে।

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের প্রক্রিয়াগত ‘ত্রুটি’ নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। বলেন, রায়ের কপি এবং আবেদনের কপি না দেখেই কীভাবে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশনামায় উল্লেখ করেন, বড়দিনের ছুটির আগে বিচারপতি সেন তাঁর চেম্বারে বিচারপতি অমৃতা সিংহকে ডেকে পাঠান। সেখানে বিচারপতি সেন নাকি বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাঁকে বিরক্ত করা চলবে না।’’ এ'ছাড়াও তিনি জানান, বিচারপতি সিংহের এজলাসের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বন্ধ করতে হবে। নিয়োগ দুর্নীতির দু’টি মামলা খারিজ করতে হবে বলেও নাকি তিনি জানিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, বিচারপতি সেন ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই সব নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে আরও লেখেন, “বিচারপতি সেন খুব পরিষ্কার ভাবে এই রাজ্যের একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। তিনি এ'দিন আদালতে যা করেছেন তা কেবলই তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থে। এই রাজ্যে কিছু রাজনৈতিক দলকে বাঁচানোর জন্য তিনি এটা করেছেন। এটা পেশাগত অসদাচরণ।” ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশকে একরকম খারিজ করেই সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: হামলাকারীরা ভারতের নাগরিক? সরবেড়িয়া কাণ্ডে বিস্ফোরক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

দুই বিচারপতির বেনজির এই সংঘাতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে সর্বোচ্চ আদালত। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও শনিবার বিশেষ শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ছুটির দিনের সংক্ষিপ্ত শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের রায়─দুইয়ের উপরেই স্থগিতাদেশ জারি করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। আগামী সোমবার ফের সংঘাতের মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

শনিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, তাড়াহুড়ো করে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং মূল মামলকারীকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ততদিন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র মামলার কোনও শুনানি হবে না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কখনও কখনও অভাবনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক।’ প্রধান বিচারপতির সেই মন্তব্যের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ফাঁসি বা বাড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো বিষয় নয়।’ সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, কোনওরকম আবেদনের কপি বা নির্দেশের কপি ছাড়াই ডিভিশন বেঞ্চ যেভাবে নির্দেশ জারি করেছে, তাতে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বা বিচারপতি সেনের মধ্যে কোনও একজনের পক্ষ নিচ্ছেন না। কারও হয়ে বলছেন না। কিন্তু যেভাবে বিচারপতি সেনের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, তা ১৪১ ধারার আওতায় নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে শনিবার মামলা (এসএলপি) করার অনুমতি চান রাজ্যের আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট মামলার অনুমতি দিয়েছে। অনলাইনেই মামলা করতে পারবে রাজ্য। আদালতে দুই বিচারপতির এমন বেনজির সংঘাতে আখেরে জয় হবে কার? সে'দিকেই তাকিয়ে সারা দেশ।

More Articles