বাদ গেল না ম্যানিকুইনও! তালিবান শাসনে প্লাস্টিকে মাথা ঢাকার নির্দেশ মেয়ে পুতুলদের
Taliban Mannequins: পলিথিন ব্যাগ, স্কার্ফ এমনকী অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল দিয়েও পোশাক পরিহিত পুতুলের মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে দোকানিদের।
মহিলাদের পোশাকের দোকান। সার দিয়ে রাখা রয়েছে ভাবলেশহীন ম্যানিকুইন। তাদের গায়ে জমকালো পোশাক। আর মুখে? সমস্ত ম্যানিকুইনের মুখ ঢাকা প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে। স্থান কাবুল, শাসক তালিবান। রক্তমাংসের মহিলারা তো বটেই, তালিবান শাসনের বিধি নিষেধ থেকে বাদ পড়ল না আফগানিস্তানের ম্যানিকুইনরাও। আফগানিস্তানের কাবুল জুড়ে মহিলাদের পোশাকের দোকানের দিকে তাকালেই ভুতুড়ে দৃশ্য চোখে পড়বে এখন। প্রতিটি নারী ম্যানিকুইনের মাথা কাপড়ের বস্তায় বা কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়া। সারা দেহ ঢাকা রাজকীয় গাউনে বা আফগানিস্তানের এথনিক পোশাকে, আর মাথাটিও ঢাকা। হয় মাথা কাটা বা মাথা ঢাকা- পুতুল বা জলজ্যান্ত নারী, একই নিয়মের আওতায় সকলেই।
পলিথিন ব্যাগ, স্কার্ফ এমনকী অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল দিয়েও পোশাক পরিহিত পুতুলের মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে দোকানিদের। মহিলাদের হিজাবে মাথা ঢাকা তো বাধ্যতামূলক বটেই, এবার ম্যানিকুইনের উপরেও একই গোঁড়া নিষেধাজ্ঞা! আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দোকানদাররা অবশ্য বলছেন, মুখ ঢেকে রাখা ভালো। এর আগে, তালিবান সরকার নির্দেশ দিয়েছিল এই ম্যানিকুইনদের সরিয়ে ফেলতে হবে বা পুতুলের মাথা কেটে ফেলত হবে। তার থেকে মাথা ঢেকে রাখাই মন্দের ভালো বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
তালিবানরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে তাদের প্রথম শাসনের সময় সমাজে যেমন কঠোর নিয়ম জারি করা হয়েছিল, অতটা কঠিন নিষেধাজ্ঞা এবার আর আরোপ করা হবে না। কিন্তু আরও মারাত্মক বিধিনিষেধই আরোপিত হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের ওপর। মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পরে স্কুলে পড়া নিষিদ্ধ হয়েছে। বেশিরভাগ মহিলাকেই চাকরি করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বাইরে বেরনোর সময় মুখ ঢেকে রাখা তো সবচেয়ে সাধারণ নিষেধাজ্ঞ। জিম, প্রকাশ্য রাস্তায়, বাজারে এবং বিনোদন পার্কে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা- সবটাই এই দেশে মহিলাদের শ্বাসরোধের উদ্দেশ্যে । ম্যানিকুইনের মুখ ঢাকাও আসলে সেই শ্বাসরোধেরই রকমফের। কোনওভাবেই প্রকাশ্যে মহিলাদের আনা যাবে না। যার ফল? কাবুলের দোকান জুড়ে জুড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য, মাথা ঢাকা পুতুলের ভিড়ে পতপত করে উড়ছে পিতৃতন্ত্রের পতাকা।
আরও পড়ুন- তালিবান শাসনে কেমন আছে আফগানিস্তানের মেয়েরা? জানলে শিউরে উঠতে হবে
২০২১ সালের অগাস্টে ক্ষমতা দখলের কিছুক্ষণ পরেই, তালিবানের ভাইস অ্যান্ড ভার্চু মন্ত্রক আদেশ দেয় যে দোকানের জানালা থেকে সমস্ত ম্যানিকুইন সরিয়ে ফেলতে হবে বা পুতুলের মাথা কেটে ফেলতে হবে। ইসলামিক আইনের কঠোর এক ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে আদেশটি তৈরি করেছে তালিবানরা। ইসলামিক আইনে মূর্তি এবং মানুষের ছবি নিষিদ্ধ কারণ সেগুলিকে মূর্তি হিসাবে পুজো করা যেতে পারে।
কিছু দোকানিরা এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নেন। অনেকে আবার বলেন এতে ব্যবসার ক্ষতি, দোকানের জামাকাপড় ঠিকভাবে প্রদর্শন করা যাবে না, দামি দামি ম্যানিকুইনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলত, বিধি সংশোধন করে তালিবানরা। দোকান মালিকদের পুতুলের মাথা ঢেকে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিছু দোকানে আবার পুতুলের মাথা সুদৃশ্য কাজ করা কাপড়ে ঢাকা। দোকানিদের বক্তব্য, কালো প্লাস্টিক বা ফয়েলে ঢেকে রাখলে অত্যন্ত কুৎসিত দেখায়। তাই মাথা ঢাকতে হলেও তা ফ্যাশনেবলই হোক। কারণ বিক্রি হওয়াটা দরকার। তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে দেশের বড় অংশের মানুষ। জামা কাপড়ের বিক্রি আগের তুলনায় অর্ধেক। পোশাক কেনা এখন আর মানুষের অগ্রাধিকার নয়। খেতে পাওয়া আর বেঁচে থাকার লড়াইটাই সবচেয়ে কষ্টের এখন।