‘চারশো পার চু কিৎ কিৎ’, মোদির উদ্দেশ্যে কল্যাণ

Lok Sabha Session 2024: শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে কার্যত বিপুল ভোটে এই লোকসভা ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি মোদিকে বিঁধে বলেন, মোদির চেয়ে অনেক বেশি ব্যবধানে জিতেছেন তিনি।

লোকসভার প্রথম অধিবেশন শুরু হতে না হতেই একের পর এক বিস্ফোরণ ধেয়ে আসছে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকারের দিকে। বিজেপি ঘনিষ্ঠ ওম বিড়লাকে স্পিকার করার পরেও সেই আক্রমণের ঘনঘটা এড়াতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। প্রায় এক দশক পরে বিরোধী দলনেতা পেয়েছে লোকসভা। সোমবার সেই বিরোধী দলনেতার বাক্যবাণে জর্জরিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির বাঘা বাঘা নেতৃত্বরা। রাহুল গান্ধির পর লোকসভার ভাষণ দিতে গিয়ে রণং দেহি মূর্তিতে দেখা যায় কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকেও। যদিও ততক্ষণে সংসদ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন মোদি। তবে মঙ্গলবার অধিবেশন শুরু হতে না হতেই ফের বিজেপির উপর চড়াও হলেন আরেক তৃণমূল সাংসদ। কার্যত তাঁকেও এদিন দেখা গেল রণং দেহি মেজাজেই। একের পর এক ইস্যুতে বিজেপি শিবিরকে বিদ্ধ করতে লাগলেন দুঁদে আইনজীবী কল্যাণ। মোদির ঘৃণাভাষণ থেকে শুরু করে ভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারা, একাধিক বিষয় নিয়েই সংসদে বিরোধীদের বিঁধলেন কল্যাণ।

শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে কার্যত বিপুল ভোটে এই লোকসভা ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি মোদিকে বিঁধে বলেন, মোদির চেয়ে অনেক বেশি ব্যবধানে জিতেছেন তিনি। এদিন বক্তৃতা দিতে উঠেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে নির্বাচন কমিশনের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই কথা উল্লেখ করে তাঁর অভিযোগ, বিজেপি নেতাদের নির্দেশ মেনে ভোট করিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বহু জায়গাতেই বিজেপি নির্বাচন কমিশনের সাহায্যে জিতেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এমনকী সিআইএসএফ কীভাবে উলুবেড়িয়া ও জাঙ্গিপাড়ায় বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের সম্মানহানি করেছে, সে কথাও তুলে ধরেন তিনি। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকারও কড়া নিন্দা করেন কল্যাণবাবু। পাশাপাশি ভোটের তারিখ ঠিক করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, মোদি যেভাবে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন ভোটের আগে তার বিরুদ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন। এরপরেই কল্যাণবাবুর অভিযোগ, কেবলমাত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা নিয়ে আপত্তি জানান স্পিকার।

আরও পড়ুন: মোদির প্রিয় ম: মুসলিম, মাদ্রাসা, মাংস… মণিপুর কই? প্রশ্ন মহুয়ার

এ দিন সংসদে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু বিরোধী হিসেবে তাঁর বিরোধিতা করাটাই ধর্ম। তাঁর প্রশ্ন, কেন বিরোধীদের জন্য মোদির মনে এত ঘৃণা। বিরোধীদের কাজই বিরোধিতা। গত দশ বছরে বিরোধীদের উদ্দেশে কোনও মিষ্টি কথা বলেননি মোদি। যে সব রাজ্য়ে বিরোধীরা ক্ষমতায়, তাঁদের সকলকেই মোদি ঘৃণা করে বলে অভিযোগ তুলেছেন কল্যাণবাবু। তাঁর কথায়, সময় এসে গিয়েছে মোদির আত্মসমালোচনা। মোদির এই ঘৃণাভাবের জন্যই আজ বিজেপির জনপ্রিয়তা পড়ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

স্থিতিশীল সরকারের যে দাবি বিজেপি করে আসছে, তা সর্বেব মিথ্যা বলেও দাবি কল্যাণের। ভোটের আগে বিজেপি চারশো পারের দাবি করেছিল, কল্যাণের বক্তব্য, চু কিত কিতও তো খেলা। চু শুরু হয়েছিল চারশো দিয়ে। কিত কিত কিত করতে করতে বিজেপির আসন নেমে গিয়েছে ২৪০-এ। কোনও ক্ষেত্রেই মোদি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি মোদি। কল্যাণের কথায়, "মোদিজির গ্যারান্টিতে ওয়ারেন্টি নেই আসলে।" এনডিএ সরকার ৪৮.৮৬ শতাংশ ভোট দখলে করতে পেরেছে। ৮.৩ শতাংশ তার মধ্যে শরিকভোট। ইন্ডিয়া জোট এই লোকসভা ভোটে ৫১.১৪ শতাংশ ভোট। দেশে বদল এসেছে। এই মুহূর্তে সরকার আসলে নড়বড়ে, আর উল্টোদিকে রয়েছে শক্তিশালী বিরোধীশিবির। কল্যাণ জানান, সংসদের বাইরেও লড়াই চলবে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সাফ হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন তৃণমূল সাংসদ।

ইমার্জেন্সির সময় থেকে শুরু করে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদমর্যাদার অপব্যবহার করে দেশের বিরোধীদের উপর ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দেয়নি। এখন প্রধানমন্ত্রী মোদি দু'টি ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই কেন চন্দ্রবাবু নাইডু বা অজিত পাওয়ার বা প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই লাগানো হয় না। তাঁর প্রশ্ন টিডিপি বা এনসিপি নেতাদের গ্রেফতার করা হয় না? ওয়াশিং মেশিন থিওরির কথা তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে জোর কটাক্ষ করেন কল্যাণবাবু।

আরও পড়ুন: হিন্দু মানেই বিজেপি নয়, অযোধ্যা শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায়  রাহুল

ভোটের ফলাফলের পর স্টক মার্কেট ক্র্যাশ করা থেকে শুরু করে গোদি মিডিয়ার এক্সিট পোল, প্রায় সমস্ত কিছু নিয়েই এদিন তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ। দেশের এসসি, এসটি থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়েও এদিন কথা বলেন কল্যাণবাবু। তৃণমূল সাংসদের ভাষণ শুনে এদিন রীতিমতো আমোদিত হতে দেখা গিয়েছে মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়ার মতো সাংসদদের। তবে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের আরেক সাংসদ সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়কে। একের পর এক বিরোধী নেতাদের আক্রমণে কার্যত লোকসভায় কোণঠাসা বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই হাই ভোল্টেজ অধিবেশন চলছে এবার সংসদে। যা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতিক মহলে।

More Articles