নাইট উপাধি পেয়েও ব্যবহার করেন না, যুক্তরাজ্যের আগামী প্রধানমন্ত্রী কে এই কিয়ার স্টারমার?

Keir Starmer UK Prime Minister: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে নাইট উপাধি দেন কিন্তু নামের আগে 'স্যর' ব্যবহার করতে খুব কমই দেখা যায় তাঁকে।

১৪ বছরের কনজারভেটিভ পার্টির রাজত্বের শেষ। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন লেবার পার্টির বাম নেতা কিয়ার স্টারমার। তাঁর নেতৃত্বেই লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের সংসদীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে ডানপন্থী ঋষি সুনকের রাজনৈতিক যাত্রা।

সেন্টার-লেফট লেবার পার্টি সংসদের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৬০টি জিতেছে। ১৯৩৫ সালের পর থেকে লেবার পার্টির সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফলাফল ছিল গতবারের সংসদীয় নির্বাচনেই। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্ষমতা অর্জন এক বিস্ময়কর অধ্যায়। ঋষি সুনকের পর এবার কিয়ার স্টারমারের হাতে ব্রিটেনের ভার।

আরও পড়ুন- ঋষি সুনকের ব্যাপক ভোটে হার! ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে যেভাবে ক্ষমতায় বাম লেবার পার্টি

যুক্তরাজ্যের শ্রম নেতা ৬১ বছর বয়সি কিয়ার স্টারমার একজন প্রাক্তন মানবাধিকার আইনজীবী এবং পাবলিক প্রসিকিউটর। গত ৫০ বছরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হবেন কিয়ার স্টারমার। প্রথম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার মাত্র নয় বছর পরেই প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি।

২০০৩ সালে থেকে রাজনীতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে লাগাতার কাজ করে চলেছেন তিনি। ২০০৮ সালে তিনি ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের পাবলিক প্রসিকিউশনের (ডিপিপি) পরিচালক নিযুক্ত হন। তখন লেবার পার্টির গর্ডন ব্রাউন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে স্টারমার খরচের অপব্যবহারর জন্য সাংসদদের, ফোন হ্যাকিংয়ের জন্য সাংবাদিকদের এবং ইংল্যান্ড জুড়ে অশান্তিতে জড়িত তরুণ দাঙ্গাবাজদের বিচারের তদারকি করেছিলেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে নাইট উপাধি দেন কিন্তু নামের আগে 'স্যর' ব্যবহার করতে খুব কমই দেখা যায় তাঁকে। ২০১৫ সালে উত্তর লন্ডনের একটি আসনে জিতে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর জয়ের কয়েক সপ্তাহ আগেই স্টারমারের মা বাতের এক বিরল রোগে মারা যান। বহু বছর ধরেই হাঁটতে-চলতে পারতেন না তিনি।

আরও পড়ুন- গীতা ছুঁয়ে শপথ, ঋষি সুনককে কেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানল ব্রিটেন

২০২০ সালে কিয়ার স্টারমার ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতৃত্বে আসেন। লেবার পার্টি সেবার গত ৮৫ বছরে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছিল সাধারণ নির্বাচনে। স্টারমার এবং লেবার পার্টি কনজারভেটিভ পার্টির অধীনে যুক্তরাজ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকেই নির্বাচনী পুঁজি করেছিল। সেই পুঁজির ভরেই কনজারভেটিভ পার্টির সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে নিমেষে ধুলো করে দিয়েছে লেবার পার্টি।

১৯৬২ সালের ২ সেপ্টেম্বর কিয়ার রডনি স্টারমারের জন্ম লন্ডনের উপকণ্ঠে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ মা। মানসিকভাবে বাবার সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক বহু দূরবর্তী। তিন ভাইবোন ছিলেন কিয়ার স্টারমার। তাঁদের মধ্যে একজন 'স্পেশ্যাল চাইল্ড'। কিয়ারের বাবা-মা ছিলেন পশুপ্রেমী, গাধাদের উদ্ধার করতেন তারা।

স্টারমার একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীও ছিলেন। স্কুলে বেহালা শিখতেন তিনি। লিডস এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়শোনার পর স্টারমার বামপন্থী আন্দোলনের দিকে আকর্ষিত হন। ট্রেড ইউনিয়ন, ম্যাকডোনাল্ডস-বিরোধী কর্মী এবং বিদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে থাকেন তিনি।

More Articles