পুরুষ হয়েও 'মা' হলেন জাহাদ! সদ্যোজাতকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখছেন কেরলের রূপান্তরকামী দম্পতি
Kerala Transgender Couple: দেহ পালটে ফেলার সময় সন্তানের কথা মাথায় রেখেই জরায়ু এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ অপসারণ করা হয়নি জাহাদের।
শরীর আর মনের দ্বন্দ্ব। যে পরিচয়ে বাঁচতে ভালো লাগে শরীর সেই ইচ্ছার গলা চেপে ধরে। শুধু শরীর না, সমাজও ধরে। ইচ্ছেদের সেই অনন্ত শীতঘুম ভাঙানোর সাহস দেখান কয়েকজন। সম্প্রতি 'মাতৃত্ব' ধারণার নতুন দিশা দেখিয়েছেন জিয়া ও জাহাদ। দু'জনই রূপান্তরকামী। আর এক্ষেত্রে সন্তান ধারণ করেছেন 'বাবা'! কেরলের কোঝিকোড়ের এই রূপান্তরকামী দম্পতি জিয়া পাভাল এবং জাহাদের ঘরে এক ফুটফুটে আলোর জন্ম হয়েছে। তাঁদের গর্ভাবস্থার ছবি সম্প্রতিই ভাইরাল হয়। বুধবার সকালে কোঝিকোড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করেই শিশুটির জন্ম হয়েছে। সন্তান আর বাবা, দু'জনেই সুস্থ! তবে নিজেদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই এই রূপান্তরকামী দম্পতি আপাতত নবজাতকের শারীরিক লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জিয়া পাভাল সদ্যোজাতের একটি ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি শরীরে মা হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের লিঙ্গপরিবর্তনের আগেই জাহাদের গর্ভধারণের খবর জানা যেতেই রূপান্তরকরণের পদ্ধতি স্থগিত রাখা হয়। জিয়া লিখেছেন, "মাশাল্লাহ। আজ (০৮/০২/২০২৩) বুধবার সকাল ০৯:৩৭ নাগাদ আমাদের স্বপ্নের ধ্বনি, ২.৯২০ কেজি ওজনের, পৃথিবীর আলোতে প্রথম শ্বাস নিল।" জিয়া ও জাহাদের লড়াইয়ে যারা সঙ্গে ছিলেন চিরকাল, সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন- রূপান্তরকামী সন্তানকে নিয়ে গর্বিত বাবা, ভারতীয় অভিভাবকরা শিখবেন?
View this post on Instagram
গত তিন বছর ধরে একসঙ্গেই থাকেন পেশায় নৃত্যশিল্পী জিয়া ও হিসাবরক্ষক জাহাদ। সম্প্রতি এই রূপান্তরকামী যুগল ইনস্টাগ্রামে একটি ফটোশুটের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার খবর জানান। জিয়া জানিয়েছিলেন জাহাদ আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
View this post on Instagram
জন্মগতভাবে শরীরে মহিলা ছিলেন না জিয়া। কিন্তু বরাবর চেয়েছিলেন সন্তানের জন্ম দিতে। তাঁর গর্ভস্থ শিশু তাঁকে 'মা' বলে ডাকবে ইচ্ছে ছিল তাঁর। অন্যদিকে জাহাদ শরীরে নারী হলেও বরাবর চেয়েছিলেন একজন পুরুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে। দুইজনেই দেহের লিঙ্গচিহ্ন এবং হরমোনের নানা বিষয় পালটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পদ্ধতিতে গিয়েই জাহাদ জানতে পারেন, তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই গর্ভধারণ করেছেন। শারীরিক ভাবে পুরুষ হয়ে ওঠার মাঝেই তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। ফলে দেহ পালটে ফেলার সময় সন্তানের কথা মাথায় রেখেই জরায়ু এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ অপসারণ করা হয়নি জাহাদের।
জিয়া আর জাহাদ অবশ্য আগে শিশুকে দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনাই করেছিলেন। দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা খোঁজখবরও করছিলেন। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়া বেশ কঠিন ছিল। জাহাদ নিজের নারীদেহ কোনওদিনই পছন্দ করেননি। শারীরিকভাবে নারী হলেও কোনও দিনই গর্ভধারণ বা সন্তানের জন্ম দিতে চাননি। চেয়েছিলেন নারীত্বের সমস্ত শারীরিক চিহ্নই বাদ দিয়ে দিতে। দিয়েওছেন। রূপান্তরিত হতে হতে স্তন ইতিমধ্যেই বাদ গিয়েছে। কিন্তু জিয়া পুরুষ হয়ে জন্মালেও মা হতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছাকে যত্ন করতেই জাহাদ গর্ভস্থ সন্তানকে জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।